ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঋণ-আমানত ও শাখা সম্প্রসারণ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে

ব্যবসা বাড়ছে নতুন ব্যাংকগুলোর

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১২ অক্টোবর ২০১৬

ব্যবসা বাড়ছে নতুন ব্যাংকগুলোর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসার পরিধি বাড়ছে নতুন ব্যাংকগুলোতে। অনেক পুরনো ব্যাংকের তুলনায় ঋণ ও আমানত এবং শাখা সম্প্রসারণ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে নতুন ব্যাংকগুলোর। পরিসংখ্যান বলছে, গত জুন শেষে নতুন নয় ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর আমানত ২৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। মূলত গ্রাহকদের আস্থায় আনতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় আমানতে বেশি সুদ দিচ্ছে ও ঋণে কম সুদ নিচ্ছে তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড, এটিএম বুথসহ বিভিন্ন সেবা চালুর কারণে ব্যাংকগুলোর ব্যবসা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে নতুন নয় ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা নয় হাজার ৩১০ কোটি টাকা বা ৬৫ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর আমানত নয় হাজার ২১৯ কোটি টাকা বা ৫৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সামগ্রিক ব্যাংক খাতের ঋণ ৮৮ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বেড়ে ছয় লাখ ৪২ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যদিকে, আমানত এক লাখ পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে আট লাখ ৫৮ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৪২ ও ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের এমডি নূরুল আমিন বলেন, শতাংশ হিসাবে নতুন ব্যাংকগুলোর ঋণ অনেক বাড়লেও পরিমাণে বেড়েছে সামান্য। মূলত নতুন ব্যাংকগুলোর ভিত্তি কম হওয়ায় এমন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আগের বছর কোন একটি নতুন ব্যাংকের এক হাজার কোটি টাকা ঋণ ছিল। এবার তা বেড়ে দুই হাজার কোটি টাকা হলেই শতাংশ হিসাবে তা এক শ’ ভাগ বেশি হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকে গত জুনে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। এক বছর আগের তুলনায় যা এক হাজার ৭৫২ কোটি টাকা বা ৯৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। ঋণ প্রবৃদ্ধির এ হার পুরো ব্যাংক খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হওয়া এনআরবি গ্লোবালের ঋণ ৮২ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে দুই হাজার ৭১৩ কোটি টাকা হয়েছে। অথচ জুন পর্যন্ত পুরো ব্যাংক খাতে ঋণ বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। তবে নতুন নয় ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। মূলত নতুন ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা আগের ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় শতাংশ হারে বেড়েছে বেশি। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ফারমার্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরের অবস্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণ ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এর পরে ইউনিয়ন ব্যাংকে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৯৫৬ কোটি, মধুমতি ব্যাংকে ৬৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৩৬৫ কোটি, মেঘনা ব্যাংকে ৫৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৭৪৩ কোটি, এনআরবি ব্যাংকে ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ২৯২ কোটি ও সাউথ বাংলা এ্যাগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে ৪৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়ে দুই হাজার ৫৭৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৩৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়ে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ঋণের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আমানতেও প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে নতুন নয়টিসহ বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণ ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে চার লাখ ৬৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা হয়েছে। একই সময়ে আমানত ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৫২২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিদেশী ব্যাংকগুলোর ১০ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ ও ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ আমানত বেড়ে যথাক্রমে ২৬ হাজার ২৭৩ কোটি এবং ৩৮ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৫ হাজার ৪৯২ কোটি টাকার আমানত মোট ব্যাংক আমানতের শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ। আগের বছর এ ব্যাংকের আমানত ছিল তিন হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আর ঋণ আগের বছরের ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা হয়েছে। ফারমার্স ব্যাংকের আমানত আগের বছরের এক হাজার ২৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা হয়েছে। ঋণ এক হাজার ৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। সাউথ বাংলা এ্যাগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের আমানত এক হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার ৬৪ কোটি টাকা হয়েছে। ঋণ এক হাজার ৩৫২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আমানত আগের বছরের এক হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। ঋণ ১ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল শেষে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার আমানত ও ২ হাজার ৮৫ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। আগের বছরে যা এক হাজার ১৯৫ ও এক হাজার ২৩ কোটি টাকা ছিল। মেঘনা ব্যাংকের আমানত ৯১৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা হয়েছে। আর ঋণ আগের বছরের ৭১৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় মিডল্যান্ড ব্যাংকের আমানত বেড়ে এক হাজার ৪৭৪ ও ঋণ এক হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৪ সালে যা ৮৪৯ কোটি ও ৬৫০ কোটি টাকা ছিল। আর এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের আমানত ৮০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৩০১ কোটি টাকা। ঋণ ৬২০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক হাজার ১০২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মধুমতি ব্যাংকের আমানত আগের বছরের ৯৮৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। আর ঋণ আগের বছরের ৪১৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৯৯৭ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৫ সাল শেষের এ আমানত ও ঋণ পুরো ব্যাংক খাতে পর্যায়ক্রমে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ।
×