ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মডেল ফার্মেসি

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১২ অক্টোবর ২০১৬

মডেল ফার্মেসি

বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধশিল্প তার অন্যতম। বর্তমানে এ শিল্প খাতটি প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৭ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশেই। আরও যা শ্লাঘার বিষয় তা হলো, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। সম্প্রতি দু’একটি নামী কোম্পানির ওষুধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য সে দেশের এফডিএর অনুমোদনও পেয়েছে। আরও একটি ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোন ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। ওষুধের দোকানগুলো কমবেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নিদেনপক্ষে ফ্রিজের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যথা নির্দেশিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে ওষুধপত্র। তদুপরি নেশাজাতীয় কিংবা ঘুমের ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে কঠোর আইন থাকতে হবে। শিশুদের কাছে কোন ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। মডেল ফার্মেসিতে এসবই অনুসরণ করা হবে বলে প্রত্যাশা। তবে এ কথাও সত্য যে, বেশ কয়েকটি নামী-দামী ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পানিও আছে, যারা তৈরি করছে মানহীন ওষুধ। কোন কোন কোম্পানির ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুসহ বয়স্কদের মৃত্যুর অভিযোগও আছে। অভিযুক্ত কোম্পানির মালিকদের জেল-জরিমানাসহ কারখানাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এরপরও মানহীন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে। মূলত এসব হয়েছে ওষুধের দাম বাড়ার কারণেই। ওষুধশিল্প একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। পাশাপাশি খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; অনুরূপ ভেজাল ও নকল-মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান ও দাম নিয়ে হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বে ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ একটি আদর্শ উদাহরণ। বাংলাদেশেও অনুরূপ আদলে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সরকারী সংস্থা গঠন করা যেতে পারে, যারা সর্বদাই ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট থাকবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রায় অবাধে বিক্রির বিষয়টি সুবিদিত। এসব খেয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুর মৃত্যুর খবরও আছে। তবে সংশ্লিষ্ট ওষুধ বিক্রেতা ও কোম্পানির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর মামলা-মোকদ্দমাসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এহেন অরাজকতা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী মডেল ফার্মেসি স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অধীনে প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে অর্ধশতাধিক এবং অন্যত্র দেড় শতাধিক মডেল ফার্মেসি স্থাপন করা হবে। এগুলোর দায়িত্বে থাকবেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফার্মাসিস্টরা। বর্তমানে দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসির সংখ্যা এক লাখ ২১ হাজার। লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির সংখ্যা ১৯ হাজার ৮০০। এর বাইরেও পান-বিড়ি-সিগারেটসহ মুদি দোকানেও ওষুধ পাওয়া যায়। এসবই নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির আস্তানা। দেশব্যাপী মডেল ফার্মেসি স্থাপন এর একটি অনিবার্য প্রতিষেধক হতে পারে। এও সত্য যে, রাতারাতি দেশের সর্বত্র মডেল ফার্মেসি স্থাপন ও অনুমোদন দেয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে মোটামুটি মানসম্মত ওষুধের দোকানের মালিকদের স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। উপরন্তু ওষুধপথ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তৈরি করা যেতে পারে একটি গাইডলাইন বা নির্দেশিকা। এটি অনুসরণ করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা হলে নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির প্রবণতা কমে আসতে পারে।
×