ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

তারুণ্যের বিশ্বজয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১১ অক্টোবর ২০১৬

তারুণ্যের বিশ্বজয়

তারুণ্যের জয়গান বিশ্বজুড়েই। তরুণ দৃঢ় সংকল্প ও কর্মনৈপুণ্যের জয়জয়কার, তারাই আধুনিক সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এই আধুনিক বিশ্ব গড়তে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। তাদের মেধা, যোগ্যতা ও কর্মগুণ চমকে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। দেশের বাইরেও বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীরা। রাজনীতি, ব্যবসা থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন, উদ্ভাবন সর্বত্রই তাদের দৃঢ় পদচারণা। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো সেই তরুণ-তরুণীদের বিশ্বজয়। সত্যি ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাচ্ছে তারুণ্য। বিশ্বে সুনাম কামাচ্ছে একঝাঁক তারুণ্য। তেমনই কয়েকজন বিশ্বজয়ী তরুণদের নিয়ে লিখেছেন- রুহুল আমিন ভূঁইয়া সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশের পতাকাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন বিশ্ববাসীর সামনে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের খেতাব অর্জন করার গৌরব তাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। বাঁ হাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-এর সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে সাকিব অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দর্শকদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। তার ধারাবাহিকতা তাকে নিয়ে গেছে এক নতুন উচ্চতায়। সমালোচকরাও একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, তিনিই দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। তাকে প্রায়ই দর্শকরা ‘দ্য ওয়ান ম্যান আর্মি’ বলে মেনে থাকেন খেলার মাঠে। মাগুরা তথা বাংলাদেশ নামের এক বদ্বীপের গর্ব সাকিব আল হাসান। সাকিবের জন্ম ২৪ মার্চ, ১৯৮৭। কিন্তু ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জয় করে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ লাভ করলে দেশজুড়ে যে ক্রিকেট জ্বর শুরু হয় তাতে সাকিব। ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রহ এবং ভালবাসা দুটোই বাড়তে থাকে। তারপর লর্ডস, মেলবোর্ন, ইডেন গার্ডেন, মিরপুর মাঠ দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন সাকিব। খেলোয়াড় জীবনের শুরু প্রথমে পেস বোলিং করলেও, পরে স্পিন বেছে নেন। ৬ আগস্ট ২০০৬, বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুইয়ে ৫ম ওয়ানডে ম্যাচ। অভিষেক হয় তার। ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি সাকিব প্রথমবারের মতো আইসিসির ওডিআই অলরাউন্ডার তালিকার এক নম্বরে উঠে আসেন। জিতে নেন উইজডেন টেস্ট প্লেয়ার বর্ষসেরার পুরস্কার। জাভেদ করিম- ইউটিউব সহপ্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জাভেদ করিম ২০০৫ সালে সাদ হারলি ও স্টিভ চেনের সঙ্গে মিলে জনপ্রিয় ভিডিও বিনিময় ওয়েবসাইট ইউটিউব তৈরি করেন। বর্তমানে ভিডিও আপলোড ও প্লের জন্য বিশ্বের সেরা সাইটে পরিণত হয়েছে ইউটিউব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি গ্রাহক ইউটিউবে লগইন করে বৃহত্তম এই ভিডিও আপলোডিং সাইটে যান। তিনি ২০০৭ সালের ১৩ মে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেয়ার বিরল সম্মান অর্জন করেন। বিশ্বের তরুণ সমাজে অনুপ্রেরণীয় তারকাদের তালিকায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। তিনি ছোটবেলা থেকেই সৃজনশীল ছিলেন। ইউটিউব ছাড়াও পোর্টেবল ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স, সলভিং ড্যাড পাজল, থ্রিডি স্প্রিং সিমুলেশন, রোবোটিক ওয়েবক্যাম, রেডিওসিটি ইনজিন, রে-ট্রেসার, লাইফ থ্রিডি, কোয়াক ২ মডেল ভিউয়ারসহ বেশ কিছু প্রজেক্টের উদ্ভাবকও তিনি। জাভেদ করিমের বাবার নাম নাইমুল করিম, তিনি হলেন একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী এবং তার মায়ের নাম হলো ক্রিস্টিন করিম, যিনি একজন জার্মান বিজ্ঞানী এবং গবেষক। জামাল উদ্দীন- সোলার প্যানেল উদ্ভাবক। উন্নতমানের সোলার প্যানেল উদ্ভাবনীতে বাংলাদেশী তরুণ জামাল উদ্দীনের সাফল্য বিশ্বের প্রধান মিডিয়াগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে। সূর্যের আলোকে বিদ্যুত শক্তিতে রূপান্তর করা এই সোলার প্যানেলের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর কাজে তার অবদান অনস্বীকার্য। এই সোলার প্যানেল আধুনিকায়নের কাজের সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের’ ইনভেন্টর অব দ্য ইয়ার’ (বর্ষসেরা উদ্ভাবক) পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সবচেয়ে কার্যকর সৌরকোষ বা সোলার সেল উদ্ভাবনের জন্য এ পুরস্কার পান তিনি। জামাল উদ্দীন মূলত অসংখ্য সৌরকোষের সমন্বয়ে একটি সোলার প্যানেল তৈরি করতে সমর্থ হন। তার নেতৃত্বে একটি তরুণ গবেষক দল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্যকর সোলার সেল উদ্ভাবন করে। সৌরকোষের কার্যক্ষমতাকে তারা ৪৪ দশমিক ৭-এ উন্নীত করেছে। বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানির স্পেকট্রোল্যাব ২০০৯ সালে কার্যকারিতা তুলেছিল ৪১ দশমিক ৬-এ। ২০১০ সালেই জামাল উদ্দীন ও তার দল এ রেকর্ড ভেঙে কার্যকারিতা ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশে তোলেন। কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে সহকর্মীদের সঙ্গে বিজ্ঞানী জামাল উদ্দীন যেসব গ্রামে এখনও বিদ্যুত পৌঁছেনি, সেখানে সৌরবিদ্যুতই ভরসা। সূর্যের আলোকে বিদ্যুত শক্তিতে রূপান্তর করে সোলার প্যানেল। এই সোলার প্যানেলের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য বিশ্বজুড়ে যেসব গবেষক খেটে চলেছেন, তাদেরই একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী জামাল উদ্দীন এখন বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছেন। বর্তমান পৃথিবীতে খুবই অল্প বয়সে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার শুরু করে বাজিমাত করেছেন এমন তরুণদের সংখ্যা অনেক। খুব ছোট থেকে সঙ্গীত বা মিউজিককে ভালবেসে পরিণত বয়সের পূর্বেই কুড়িয়েছেন পৃথিবী জুড়ে জনপ্রিয়তার খ্যাতি। শেকু কাননি ম্যাসন তাদের মধ্যে একজন। বয়স সতেরো পেশায় পিয়োনিস্ট ও সুরকার। পাশাপাশি নটিংহাম শহরে ট্রিনিটি ক্যাথলিক স্কুলের ছাত্র। শেকুর দেয়া সুর ও পিয়ানোর কম্পোজ ইতোমধ্যে পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ দুই মেরুতেই পৌঁছে গেছে। নয় বছর বয়স থেকেই জিতে আসছেন মিউজিকের উল্লেখযোগ্য পুরস্কার। কি রয়েল একাডেমির জুনিয়র স্কলারশিপ, কি নটিংহাম ইয়াং মিউজিসিয়ানের চ্যাম্পিয়নশিপ। মিউজিকে এ্যাওয়ার্ড অর্জনের সব ক্ষেত্রেই তার নাম বেশ উজ্জ্বল। তাইতো একটু বিভ্রান্ত হয়ে বলতে হয়, জন্ম কি তার মনিহার! কেননা জীবনের শুরুতে এত বিশাল বিশাল সলো কনসার্ট। টেলিভিশন প্রোগ্রাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিকবার স্কলারশিপ। তাইতো নিজেও বুঝছে না নিজের ভাললাগা ও ভালবাসার মধ্য দিয়ে কি সৃষ্টি করছেন।
×