ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গজারিয়ায় বালতি দিয়ে চাল মাপা হয়

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১১ অক্টোবর ২০১৬

গজারিয়ায় বালতি দিয়ে চাল মাপা হয়

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, গজারিয়ায় ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতি, ডিজিটাল মেশিনে চাল না মেপে দেয়া হচ্ছে বালতি দিয়ে, তালিকায় নাম থাকলেও চাল পাচ্ছে না হতদরিদ্র পরিবার, মাঠ পর্যায় নেই সঠিক তদারকি ও ওজনে কম দিয়ে বিক্রিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। গজারিয়া উপজেলায় একাধিক কেন্দ্রে দেখা যায় ৩০ কেজি চালের স্থলে দেয়া হচ্ছে ২৫ কেজি। মাঠ পর্যায় দেখা যায়নি তদারকি কর্মকর্তাকে। টেংগারচর ইউনিয়নের ডিলার খবির আহম্মদ খানের কেন্দ্রে দেখা যায় উত্তর শাহাপুর গ্রামের সামছুল হকের স্ত্রী আছমা ১০ টাকা মূল্যে চাল ক্রয় করতে এসে হাতে লেখা টোকেন ডিলারকে দিয়ে ৩০ কেজি চাল দিতে বলেন। এ সময় ছবিসহ কার্ড পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে জবাবে আছমা জানান তা জানি না, মেম্বার আতাউর আমাকে এ কাগজ বলেছেন এটা দেখিয়ে চাল নেয়া যাবে। এর রহস্য জানতে ডিলার খবির আহম্মদের কাছে হতদরিদ্র পরিবারের নামের তালিকা চাওয়া হলে, তিনি জানান তালিকা আমার কাছে নেই। তা আছে ফুড অফিসার ও চেয়ারম্যানের কাছে। হতদরিদ্র তালিকা বিষয় তিনি আরও জানান মেম্বার ও চেয়ারম্যান মিলে চূড়ান্ত তালিকা ফুড অফিসারকে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী বিক্রি করা হচ্ছে চাল। স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মাস্টার জানান হতদরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতি এবং একাধিক ওয়ার্ডের হতদরিদ্রের তালিকায় নাম থাকলেও চাল কিনতে আসেনি। এদিকে ডিলার খবির স্বীকার করেছেন সেপ্টেম্বর মাসে ৬শ’ কার্ডের জায়গায় ৫শ’ কার্ডের চাল বিক্রি করেছেন। ডিও কাটিয়েছেন ১৮ টন চালের। হাতে লেখা টোকেন নিয়ে আসা হতদরিদ্র আছমাকে ডিলার খবির গ্রাম পুলিশ শিকদার ও স্থানীয় আছানসহ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ৩০ কেজি চাল মেপে দেয়ার স্থলে দুই বালতি চাল আছমার বস্তায় ঢেলে বুঝিয়ে দেয়া হলো ৩০ কেজি চাল। সেই চাল ডিজিটাল মেশিনে মেপে দেখা যায় ২৭ কেজি। ওজনে কম ও বালতি দিয়ে মেপে দেয়ার জবাবে ডিলার জানান প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির চাল পাওয়ার স্থলে ৪৮ কেজি চাল পাওয়া যায়। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম কবির জানান মাঠ পর্যায় তদারকি নেই এটা সঠিক নয়। প্রতিটি ডিলার সেন্টারে ট্যাগ অফিসার আছে। কোথাও কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। গ্রাহকদের ওজনে কম দেয়া ও বালতি দিয়ে চাল মাপা হয় বিষয়টি আমি জানি না। এমন হলে ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান সেপ্টেম্বর মাসের ডিও থেকে কোন চাল ফেরত আসেনি। নওগাঁয় ১০ টাকা কেজির চাল “মায়ের ভোগে” নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্রীমন্তপুর ইউপির রামকুড়া গ্রামের মিজানুর রহমান এই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে অনিয়ম করছেন। জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি শুরু হয়। সেদিন অনেক কার্ডধারীকে চাল দেয়া হয়নি। শনিবার দ্বিতীয় কিস্তির চাল বিতরণ শুরু হলে অনেককে গত মাসের চাল বিতরণ না করেই কার্ডে টিপসই নিয়ে ডিলার বিতরণের স্বাক্ষর করেন। শ্রীমন্তপুর দক্ষিণপাড়ার তইফুন ইসলাম (কার্ড নং-৩৯৫) এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি গত মাসে কোন চাল নেইনি। তারপরও আমার কার্ডে গত মাসের ৩০ তারিখ দিয়ে আমার কাছ থেকে টিপ নেয়। ডিলার নিজেও স্বাক্ষর করে। আমি চালের কথা বলতে গেলে সে রেগে বলে, আর চাল পাবেন না; সরকারের চাল সরকারের ঘরে চলে গেছে। একই গ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে সাব্বির (কার্ড নং-২১) বলেন, আমি চাল না পাওয়ার কথা বলতে গেলে ডিলার মিজানুর রহমান বলেন, ‘চাল মায়ের ভোগে চলে গেছে।’ রামবাড়ী গ্রামের হামিদুলের ছেলে রকিবুল (কার্ড নং-১১৩৭), আবুল কাশেমের ছেলে নুরুজ্জামান (কার্ড নং-১১৭০), নজরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা (কার্ড নং-১১৩১) তাদেরও একই অভিযোগ। এরকম আরও অনেককে পাওয়া গেছে, যাদের সেপ্টেম্বর মাসের চাল না দিয়ে কার্ডে স্বাক্ষর অথবা টিপসই নিয়েছে। যারা গত মাসে চাল পায়নি, তাদের মধ্যে নাজমার নাম ডিলারের চাল বিতরণের মাস্টাররোল যাচাই করে দেখা যায়Ñ নাজমাকে চাল না দিয়েও তার নামে বিতরণ দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, আমি তদন্ত করেছি। তাকে গাইডলাইন দিয়ে এসেছি। না মানলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যারা চাল পাননি, তাদেরও চাল দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×