ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর নয় অভাব- চলছে আলু, আদা, ভুট্টা চাষ

মঙ্গা তাড়ানোর ধানে উত্তরে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ অক্টোবর ২০১৬

মঙ্গা তাড়ানোর ধানে উত্তরে কৃষকের মুখে হাসি

তাহমিন হক ববী ॥ অবশেষে মঙ্গা তাড়ানোর ধানে হাসি ফুটল কৃষকের মুখে। পাকা ধানে ভরে গেছে গোলা। উত্তরবঙ্গের রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় ছয় জাতের আমন ধান চাষে ভাগ্য ফিরল কৃষক সমাজের। স্বল্পমেয়াদী এই ধানের জাতগুলো হলো ব্রি-৩৩, ব্রি ৩৯, ব্রি ৫৬, ব্রি ৫৭, ব্রি ৬২ ও বিনা-৭। নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে সাধারণত মঙ্গা দেখা দেয়। মঙ্গা দূর করতে গত কয়েক বছর ধরে এই ধান চাষ করা হচ্ছে। তাই অনেকে এই ধানকে মঙ্গা তাড়ানো ধান বলে থাকে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে এটি স্বল্পমেয়াদী ও আগাম জাতের ধান। এই ধান কাটাই মাড়াই শেষে ওই জমিতে কৃষক রবি ফসলের চাষ শুরু করেছে। রবি ফসলের মধ্যে আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও শাক সবজি রয়েছে। শীতের আগাম এই রবি ফসল উৎপাদনে কৃষককুল অনেকাংশে লাভের মুখ দেখে থাকেন। সেই সঙ্গে সাথী ফসল উৎপাদন হয়। একই জমিতে আদা চাষের সঙ্গে বেগুন, কাঁচা মরিচ, লাউ, করলা ও পেঁপে রয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায় চলতি বছর এই ৫ জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৩ হেক্টর জমিতে। আর স্বল্পমেয়াদী ছয়টি জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৪০ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারীতে ৭ হাজার ৭৮৫ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৬ হাজার ১৭৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ৫ হাজার ৫১৬ হেক্টর, রংপুরে ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর ও গাইবান্ধায় ৪ হাজার ৯৪৮ হেক্টরে। গত আট বছর আগেও রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় আশ্বিন-কার্তিক মাস, অভাবের মাস নামে পরিচিত ছিল। এ সময়ে গ্রামের কৃষকের ঘরে খাবার ও কৃষি শ্রমিকের হাতে কাজ থাকত না। হাজার হাজার কৃষক ও কর্মজীবী মানুষ চরম অভাবের মাঝে পড়তে হয়েছিল। এ অবস্থায় অভাবী মানুষেরা জীবিকা নির্বাহ করার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়াত। এছাড়া আগাম শ্রম বিক্রিসহ বাড়ির হাঁস-মুরগি, গাছ-পালা বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকত। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট রংপুর অঞ্চলে ৫ জেলায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে স্বল্পমেয়াদী ওই ছয় জাতের ধান বীজ সরবরাহ করে। আর এ ধানের জীবনকাল ৯০-১১০ দিন। যেখানে অন্য ধানের জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন। এলাকার কৃষক এ ধানের নাম দিয়েছে মঙ্গা তাড়ানো ধান। সদরের হাতিবান্ধা এলাকার কৃষক ইউনুছ আলী ৩০ শতাংশ জমিতে এই ধানের আবাদ করেছিলেন। তিনি জানান, পুরো আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের অনেক আগে এই ধান ঘরে তোলা যায়। আগাম ধান তুলে বাজারদরও বেশ ভাল পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সাধারণত আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরুর প্রায় এক মাস আগে এই ধান ঘরে তোলা যায়। কিশোরীগঞ্জ উপজেলার উত্তর দুরাকুটি গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, এই ধান তুলে ওই জমিতে আগাম আলু ও আদা, ভুট্টা চাষ করছি। পুটিমারী গ্রামের সাব্বির হোসেন বলেন এর মাধ্যমে কাজের সঙ্কট দূর করা সম্ভব। এ বছর তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আগাম ব্রি-৩৩ জাতের ধান রোপণ করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে বলে জানান তিনি। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট রংপুরে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদী ছয় জাতের ধান উদ্ভাবন করে তা কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করে। আর এই ধান রোপণের মাত্র ১০০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যেই পেকে যায়, যেখানে অন্যান্য জাতের ধান পাকতে সময় লাগে ১৪০ থেকে ১৫০ দিন। আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই ধান ঘরে তুলতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। এ ছাড়া এই ধানের খড় গো-খাদ্যের চাহিদাও পূরণ করে।
×