ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়ন মেলার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১১ অক্টোবর ২০১৬

উন্নয়ন মেলার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত  হবে

এম শাহজাহান ॥ এবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সামনে রেখে ঢাকায় শুরু হচ্ছে ‘উন্নয়ন মেলা-২০১৭’। নতুন বছরের ৯-১১ জানুয়ারি তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য এই মেলার প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। প্রতিবছর এই দিনটি সভা-সেমিনার ও র‌্যালি আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয়ে এলেও এবারই প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে মেলার মাধ্যমে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশ কতটুকু এগিয়েছে সেসব বিষয় উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। শুধু তাই নয়, জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সরকার কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেসব বিষয় তুলে ধরতে বিদেশী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের উন্নয়ন মেলায় আমন্ত্রণ জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এবারের উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য বিমোচন। এই লক্ষ্য সামনে রেখে চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুও দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর দারিদ্র্য বিমোচনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের অর্থনীতি আর স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ হতে পারেনি। তবে ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের কৌশলগত দলিল হিসেবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) প্রণয়ন করে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় গৃহীত কর্মকৌশল ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ ২০১০-২০১৫ মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ সময়ে আর্থ-সামাজিক খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। কর্মসংস্থান, মজুরি, খাদ্যশস্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানিসহ সকল অর্থনৈতিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি বজায় রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা। সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব কর্মসূচী এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্যের হার কমার পাশাপাশি বৈষম্যও হ্রাস পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৫ সালে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের অন্যান্য লক্ষ্যসমূহ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে ২০১৬-২০২০ অর্জন করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, রূপকল্প-২১ অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে বাংলাদেশÑ এই স্বপ্নপূরণে সরকারের উদ্যোগ ও করণীয়গুলো মেলার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। মূলত বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অর্জন বিষয়ক কার্যক্রমকে জনগণের মাঝে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এক সময়কার ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ খ্যাত বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ব্রত নিয়ে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক বিকাশ ও জীবনমান উন্নয়নের যে অগ্রগতি হয়েছে তা সারা বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকারের সাফল্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। সরকারের এসব সাফল্য তুলে ধরা এবং আগামী দিনে দেশকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া হবে তা উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে জনগণকে জানানো হবে। এই মেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ নিজস্ব অর্জন ও উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরবে। গত সাত বছরে দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কি করা হয়েছে তাও তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে আগামী দিনগুলোতে নতুন যেসব কর্মসূচী আসবে তারও একটি ধারণা দেয়া হবে উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে। তিনি বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর যে টার্গেট রয়েছে, তা পূরণ করতে হলে জনগণের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর সরকারের উন্নয়নের কর্মকা- জানতে পারলে জনগণ নিজ থেকে সরকারকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প যা ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়েছে। ছিন্নমূল ও গৃহহীনে আশ্রয়দানের লক্ষ্যে আশ্রায়ণ প্রকল্প, আধুনিক পাঠক্রম ও জনগণের দোরগোড়ায় ‘ই’ সেবা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা বৃত্তি ও বই বিতরণের উদ্দেশ্যে শিক্ষা সহায়তা, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, অসহায় নাগরিকদের সহায়তায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচীতে সরকার দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। এতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিভিন্ন সূচক বিশেষ করে মাথাপিছু আয় ও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, মাতৃমৃত্যুর হার কমে গেছে, বৈদেশিক রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে, গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিশু মৃত্যুহার কমে গেছে। তাই সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা জনগণকে অবহিত করতে এবং এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই এ উন্নয়ন মেলা। জানা গেছে, জঙ্গীবাদ-বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মুখেও বর্তমান সরকার উন্নয়নের পথে হাঁটছে। আগামী ২০২১ সালে এ উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রাথমিক ধাপ শেষ হবে। কিন্তু ২৬ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য মধ্যমেয়াদে যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তা হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কর্মসৃজন, দক্ষ উৎপদানশীলতা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং টেকসই পরিবেশবান্ধব নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। এসব বিষয় উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। এদিকে এবারের উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠানের জন্য মন্ত্রণালয়গুলো থেকে তিনটি বিষয়ে মতামত গ্রহণ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এগুলো হচ্ছে- মেলার আলোচনা, মতবিনিময়, সভা-সেমিনার, দ্বিতীয়ত মেলার জন্য সাধারণ পোস্টার প্রস্তুত এবং উন্নয়ন মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ।
×