ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদে তিন নারী জঙ্গীর তথ্য

রূপনগরে অভিযানের আগে স্ত্রী-কন্যাকে সরিয়ে দেয় মুরাদ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১১ অক্টোবর ২০১৬

রূপনগরে অভিযানের আগে স্ত্রী-কন্যাকে সরিয়ে দেয় মুরাদ

আজাদ সুলায়মান ॥ আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের সপ্তাহখানেক আগেই নিজ পরিবার নিয়ে রূপনগর চলে যায় মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মেজর মুরাদ। সেখানে গিয়েও সে বাঁচতে পারেনি। তবে নিজে বাঁচতে না পারলেও রূপনগরের বাসায় অভিযানের চারদিন আগে স্ত্রী ও এক কন্যাকে অন্যত্র নিরাপদে সরিয়ে দেয়। যে কারণে তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। পুলিশ তাদের ধরার জন্য সক্রিয় রয়েছে। আজিমপুরের আস্তানা থেকে প্রেফতারকৃত তিন নারী রিমান্ডের প্রথম দিনেই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। ওই আস্তানায় কারা নিয়মিত যাতায়াত করতে, অভিযানের চারদিন আগে কারা সে বাসা থেকে অন্যত্র আত্মগোপন করেছে সে সম্পর্কেও জানিয়েছে। এই তিন নারী- আজিমপুরে নিহত তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, গুলশান হামলায় জড়িত নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি এবং আরেক জেএমবি নেতা বাসারুজ্জামান ওরফে চকলেটের স্ত্রী শারমিন ওরফে শায়লা আফরিন বর্তমানে সাতদিনের রিমান্ডে রয়েছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমদিনেই বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তিনজনেই স্বীকার করেছে, মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মেজর মুরাদ ও স্ত্রী জেবুন্নাহার দুই সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন। আজিমপুরের বাসায় বসেই তারা সিদ্ধান্ত নেন- শীঘ্রই বাসা বদল করার। তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে পড়ে গেছেন এমন আশঙ্কা থেকে বাসা বদলের চেষ্টা করেন। এরই অংশ হিসেবে আজিমপুরের বাসা থেকে জঙ্গী কমান্ডার জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নেছাকে রূপনগরে সরিয়ে নেন। তবে তিনি এক মেয়েকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেও বড় মেয়েটাকে আজিমপুরের বাসাতেই রেখে যান। রিমান্ডে থাকা তিন নারীর কাছ থেকে তথ্যানুযায়ী- জেবুন্নাহারই রাজধানীর নব্য জেএমবির নারীদের সংগঠিত করার দায়িত্ব পালন করতেন। তার স্বামী জাহিদ আজিমপুর থেকে মাঝে মাঝে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার আস্তানায় গিয়ে অবস্থান করতেন। ওই বাসা থেকেই তিনি মিরপুরের রূপনগরের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন এবং এখানেই নিয়মিত থাকতে শুরু করেন। তবে এ আস্তানায়ও যে নিরাপদ নয় এটা আঁচ করতে পেরে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে অন্যত্র রেখে আসেন। তারপরই গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের রূপনগরের একটি বাসায় পুলিশের অভিযানে জাহিদুল ইসলাম নিহত হন। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই জাহিদ ছিল দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। হলি আর্টিজান ও গুলশান হত্যাকা-ের পরপরই আরও কয়েকটি অপারেশনের পক্ষে মতামত প্রকাশ করেছিল এই জাহিদ। মূলত রাজধানীসহ দেশ বিদেশে জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল এই মেজর। এমনকি নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় যে বাসায় তামিম নিহত হয়-সেটা জাহিদই ভাড়া করে দেয়। কোন জঙ্গীর পরিবার ও ছেলেমেয়েদের কখন কোন বাসায় রাখতে হবে- সেটাও ঠিক করে দিত এই জাহিদ। রূপনগরের বাসায় অভিযানের আগের দিনও আজিমপুরে বাসায় রেখে আসা কিশোরী কন্যার সঙ্গে ফোনে কথা বলে জাহিদ। উল্লেখ্য রূপনগরের অভিযানের সপ্তাহখানেক আগে ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আজিমপুরে বিডিআর ২ নম্বর গেট সংলগ্ন একটি বাসায় সন্দেহভাজন জঙ্গীদের আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযানের পর ওই আস্তানা থেকে নব্য জেএমবির মূল সমন্বয়ক তানভীর কাদেরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে তিন শিশুকে উদ্ধার করার পাশাপাশি আহত অবস্থায় আটক করা হয় তিন নারীকে। তারা হলো-তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, গুলশান হামলায় জড়িত নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি এবং আরেক জেএমবি নেতা বাসারুজ্জামান ওরফে চকলেটের স্ত্রী শারমিন ওরফে শায়লা আফরিন। ঢাকার মহানগর হাকিম মোঃ নূর নবী গত রোববার পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম।
×