ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হিলারিকে জেলে পাঠাব- ট্রাম্প ॥ প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য ট্রাম্প- হিলারি

হিলারির কাছে ফের ধরাশায়ী হলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১১ অক্টোবর ২০১৬

হিলারির কাছে ফের ধরাশায়ী হলেন ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় বিতর্কেও হিলারি ক্লিনটনের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল) মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস শহরের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ৯০ মিনিটের ওই বিতর্কে উভয় প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তোপ দাগেন। বিদ্বেষ ছড়ান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টশিয়াল বিতর্কে সাধারণত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নে নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরেন এবং অন্যদের পরিকল্পনার খুঁতগুলো খুঁজে বের করে প্রতিপক্ষকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করেন। তবে এবারের বিতর্ক হচ্ছে সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে একে অপরের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো টেনে আনছেন। তাই রবিবারের ওই বিতর্ককে মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে কুরুচিপূর্ণ’ বিতর্ক বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এ বিতর্কে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন দু্যঁদে সাংবাদিক মার্থা রাডাৎস ও এ্যান্ডারসন কুপার। অধিকাংশ মার্কিন টেলিভিশন এ বিতর্ক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে। বিতর্কে মুসলিমবিরোধী বিতর্ক, নারীদের যৌন হয়রানি, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ, মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া, ইরান ও আইএস ইস্যু নিয়ে কথা বলেন তারা। এ সময় একে অপরকে নিয়ে জঘন্যসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে বিতর্কের শেষে একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান। খবর সিএনএন, বিবিসি ও এএফপির। বিতর্কের একপর্যায়ে নিজেকে নিপাট ভদ্রলোক বলে দাবি করেন ট্রাম্প। বিতর্কের পর তাৎক্ষণিক জরিপে দেখা যায়Ñ ৫৭ শতাংশ ভোটার হিলারি ক্লিনটন আর মাত্র ৩৪ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পের ওপর সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি নিজ দলের নেতাদের কাছেই সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন অনেকে। অনেকে তাকে অগণতান্ত্রিক নেতা বলে সমালোচনা করেছেন। প্রথম বিতর্কে হিলারির কাছে হেরে যাওয়ার পর ট্রাম্পের কাছে রবিবারের এ বিতর্ক ছিল ডু অর ডাই ম্যাচের মতো। কিন্তু এ বিতর্কেও হিলারির কাছে কোণঠাসা হলেন এই মার্কিন ধনকুবের। ট্রাম্প হিলারির ব্যক্তিগত নানান বিষয় বিতর্কে টেনে আনেন। কিন্তু হিলারি কথার মারপ্যাঁচে তা উতরে যান। একপর্যায়ে হিলারিকে জেলে ঢোকানোর হুমকি দেন ট্রাম্প। এরপরও বিতর্কে ধৈর্যহারা হননি ৬৮ বছর বয়সী সাবেক এই ফ্রার্স্ট লেডি। হিলারিকে শয়তান বলেন ট্রাম্প। এমনকি তার স্বামী বিল ক্লিনটনকেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি প্রকাশিত নারীদের নিয়ে তার বেফাঁস মন্তব্যের পক্ষে সাফাই গান। রিপাবলিকান প্রার্থী এমনকি নারীদের যৌন হয়রানির কথা অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের দিকে অগ্নিবাক্য ছুড়ে দেন। হিলারির সঙ্গে দ্বিতীয় নির্বাচনী বিতর্কে ট্রাম্প বলেন, রাজনীতির ইতিহাসে তার (বিল ক্লিনটন) মতো আর কোন ব্যক্তি নেই যিনি নারীদের এত অপব্যবহার করেছেন। তবে এ সময় হিলারি তার স্বামীর ব্যাপারে ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান। বিতর্ক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এ্যান্ডারসন কুপার ২০০৫ সালে ধারণ করা নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়টি উত্থাপন করলে রিপাবলিকান এই প্রার্থী ক্লিনটন দম্পতিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। শুক্রবার ওয়াশিংটন পোস্টে প্রচারিত ওই ভিডিও টেপে দেখা গেছে, ট্রাম্প সগর্বে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টার বর্ণনা দিচ্ছেন। সুন্দরী নারী দেখলেই তিনি চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারকা হলে পুরুষ নারীর সঙ্গে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে।’ তবে কোন নারীর সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন কিনা সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এমন আচরণের কথা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরিবর্তে তিনি হিলারি ক্লিনটনের স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের যৌন কেলেঙ্কারি এবং হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেল নিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। হিলারি ক্লিনটনও জোরালো ভাষায় এর জবাব দেন। সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প নারীদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তার উল্লেখ করে হিলারি ক্লিনটন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। তিনি বলেন, নারীদের নিয়ে তার মন্তব্য প্রমাণ করে ট্রাম্প কেমন ব্যক্তি। ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে হিলারির ঘটনা তদন্তে একজন বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেবেন এবং ব্যক্তিগত ই-মেল চালাচালির জন্য তাকে কারাগারে যেতে হবে। জবাবে হিলারি বলেন, ট্রাম্প এতক্ষণ যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে আমি বিস্মিত নই। কারণ ট্রাম্পের মতো স্বভাবের একজন মানুষ দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, তা তো বটেই, কারণ আপনাকে তো তাহলে জেলে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, হিলারির হৃদয় ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ। দুই প্রার্থী সিরিয়া ও রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়েও বিতর্কে জড়ান। প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বিতর্কে উভয় প্রার্থী প্রায় ৪০ মিনিট করে সময় পান। হিলারিকে জেলে পাঠানো প্রসঙ্গে ট্রাম্পের সমালোচনা করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিও বুশের মুখপাত্র বলেন, একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তার অপর প্রার্থীকে জেলে ঢোকানোর হুমকি দিতে পারেন না। হিলারিকে জেলে পাঠানো বিষয়ে মার্কিন ফ্রার্স্ট লেডি মিশেল বলেছেন, রিপাবলিকানরা যখন নোংড়া বিষয় নিয়ে ভাবছে তখন হিলারি আরও উচ্চতায় উঠছেন। ভোটারদের কাছে আবেদন জানিয়ে মিশেল বলেন, এটা কোন সাধারণ বিষয় নয়। এটা নির্বাচন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার এক টুইটার বার্তায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে জেলে ঢোকানোর হুমকির উদাহরণ নেই। এটা স্রেফ ক্ষমতার অপব্যবহার। এর আগে প্রথম টিভি বিতর্কের পর সিএনএন/ওআরসি জরিপ চালিয়েছিল। সেবারও হিলারি জয়ী হয়েছিলেন। তখন তার জয়ের পক্ষে ৬২ শতাংশ মত পড়েছিল। তবে দ্বিতীয় টিভি বিতর্কে তার সমর্থন প্রথমবারের মতো ততটা ভাল ছিল না। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিতর্কে যেমনটা আশা করা হচ্ছিল, তার চেয়ে ভাল করেছেন ট্রাম্প। প্রথম বিতর্কের পর ট্রাম্পের পক্ষে ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
×