ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চেয়ারম্যানের নামে কার্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১১ অক্টোবর ২০১৬

চেয়ারম্যানের নামে কার্ড

স্টাফ বিপোর্টার, নীলফামারী ॥ চৌদ্দটি ইউনিয়নে দশ টাকা কেজি দরের সেপ্টেম্বর মাসের চাল বিক্রির পর বাকি ৪৬টি ইউনিয়নের চাল বিক্রি আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। সুবিধাভোগী হতদরিদ্রদের নামের তালিকায় প্রবাসী, প্রভাবশালী, সম্পদশালী, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত শিবির বিএনপি নেতাকর্মী ও পরিবারবর্গের নাম থাকার ঘটনা বেরিয়ে পড়ায় তা পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এসব প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নাম তালিকা হতে বাদ দিতে মাঠ পর্যায় পুনরায় নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। যে ১৪টি ইউনিয়নে সেপ্টেম্বর মাসের চাল বিক্রি করা হয় ওই সব ইউনিয়নেরও নামের তালিকা সংশোধন করা হচ্ছে। সূত্র মতে, অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র ডিমলা, ডোমার, জলঢাকা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় দেখা গেছে ফলে এসব এলাকার তালিকা পুনরায় করা হচ্ছে। এদিকে নীলফামারী ১ আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার ডোমার ও ডিমলা উপজেলার ২০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বার ও ডিলারদের সঙ্গে জরুরী সভা করে ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে হতদরিদ্রদের নামের তালিকায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। এরপর যাচাই-বাছাইয়ে সম্পদশালী ধরা পড়লে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর ডিলারা যদি ওজনে কম দেয় তাহলে তাদের ডিলারশীপ বাতিলসহ মামলা করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন। জানা যায় ডোমার উপজেলায় হরিণচড়া ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের কার্ডধারী সম্পদশালী রশিদুল ইসলাম এবং বনমালী রায়, ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম ও তিন নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিত্যুঞ্জয় রায় বর্মণ। এ ঘটনার পর তোলপাড় শুরু হয়। জলঢাতা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নে প্রবাসে থাকে এমন পরিবারকেও এই তালিকায় আনা হয়। জেলায় ছয় উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের জন্য এক লাখ ১৬ হাজার হতদরিদ্রের বিপরীতে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ডিলার নিয়োগ করা হয় ২৩৪ জন। সেপ্টেম্বর মাসের চাল বিক্রি করা হয় ডোমার উপজেলার ১০ ইউনিয়ন, ডিমলা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে তিন ইউনিয়ন ও সদরের ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে এক ইউনিয়নে। এখনও জেলার জলঢাকা উপজেলার ১১ ইউনিয়ন, কিশোরীগঞ্জ উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৫ ইউনিয়নে চাল বিক্রি করা হয়নি। হতদরিদ্রদের তালিকা অফিস সিক্রেট স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, দশ টাকা কেজির সেপ্টেম্বর মাসের চাল তুলতে পারেনি মনিরামপুরের ২৩ হাজার ১৮৭ পরিবার। ফলে সরকারী বরাদ্দের সাত হাজার ১৮ টন চাল ফেরত গেছে। বঞ্চিতরা এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের গাফিলতিকে দায়ী করছে। তবে খাদ্য অফিস দায়ভার নিজেদের কাঁধে নিতে নারাজ। তারা এর জন্য চেয়ারম্যানদের দায়ী করেছে। এদিকে এই কর্মসূচীর আওতায় প্রকৃত হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতি বা টাকার বিনিময়ে এমন লোকের নাম তালিকায় রাখা হচ্ছে, যারা সচ্ছল। এ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য তৈরি তালিকা চাইতে গেলে তা কোনভাবেই গণমাধ্যমকে দিতে রাজি হননি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফাতেমা সুলতানা। তিনি বলেন, তালিকা অফিসিয়াল সিক্রেট। দেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে ইউএনও বরাবর আবেদন করে তার স্বাক্ষর আনলে তবে তালিকা পাবেন। হতদরিদ্রদের তালিকা কীভাবে অফিসিয়ার সিক্রেট হয় তা অবশ্য বুঝতে পারেননি গণমাধ্যম কর্মীরা। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নবেম্বর, মার্চ ও এপ্রিল বছরের এই পাঁচ মাস দেশের দরিদ্র অর্ধকোটি পরিবারকে দশ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জনসংখ্যা অনুযায়ী মনিরামপুর উপজেলায় এই সুবিধা পাবে ২৩ হাজার ১৮৭ পরিবার। ইউনিয়ন প্রতি দুইজন করে নিয়োগ ডিলারের মাধ্যমে মাসে সাত হাজার ১৮ টন চাল বিতরণের কথা রয়েছে। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে কার্ড বিতরণের মাধ্যমে এই চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে চাল পাননি হকদাররা। শুধু উদ্বোধনের জন্য দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের এক ডিলারের মাধ্যমে মাত্র ২৩২টি পরিবারের মধ্যে ছয় টন চাল দেয়া হয়েছে, যা নিয়েও উঠেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। লক্ষ্মীপুরে তদন্ত কমিটি গঠন নিজস্ব সংবাদদাতা থেকে জানান, রামগঞ্জে ১০ টাকা মূল্যের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সকালে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আয়োজিত উন্নয়ন সভায় প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ আউয়াল তিনটি ইউনিয়নে চাল বিতরণ না করে দেলোয়ার হোসেনসহ তিন ডিলারের অনিয়মে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনটি ইউনিয়ন হচ্ছে ভাদুর, করপাড়া ও ইছাপুর। ডিলার দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া লিখিতভাবে নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু ইউছুফকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করবেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাহানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়।
×