ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১১ অক্টোবর ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

মারুফঢাকা মোটেও ভাল ছিল না গত সপ্তাহে। কথাটা বললাম বটে যদিও তা সর্বাংশে সত্য নয়। ঢাকা আনন্দের ছিল। প্রতিদিনের মানবজীবনের মতোই ভাল আর মন্দে মেশানো থাকে রাজধানীর দিনানদৈনিক চালচিত্র। হেমন্তের আগমনীর আভাস কি মিলছে কেবল পঞ্জিকা ছাড়া? তেত্রিশ ডিগ্রী ছুঁই ছুঁই তাপমাত্রা তো থাকে এপ্রিল-মে মাসে। মানে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে। এখন কেন! গ্রীষ্মপ্রধান এই দেশে অক্টোবর থেকেই স্বস্তি চলে আসার কথা। হাসফাঁস গরমের দিন বিদায় নেবে, শিশির-সিক্ত সকাল এসে ঘুম ভাঙাবে। না, ভীষণ বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। কয়েকটা দিন ছিটেফোঁটা বৃষ্টি নগরবাসীকে ক্ষণিকের স্বস্তি দিয়েছে। অলিগলির আগন্তুক ঢাকার আবাসিক এলাকার সকাল হয় হরেক রকম হকার আর ফেরিওয়ালার হাঁকডাকে। এসব ডাকাডাকি ঘুমকাতুরেদের বিরক্তি ঘটায়, অসুস্থ ব্যক্তিদের কানে কর্কশ লাগে; পরিবারের শুদ্ধতাবাদী সদস্যের কাছে চিৎকার-চেঁচামেচি বলে মনে হয়। তবে গৃহকর্ত্রী, গৃহকর্মী ও রাঁধুনীদের জন্য এসব বিকিকিনির আহ্বান যে নিত্যপ্রয়োজনীয়Ñ তা স্বীকার করতেই হবে। তারা কান পেতে শোনেন বা বলতে পারি কান খোলা রাখেন। গ্রাম ও শহুরে নাগরিকদের ভেতর স্পষ্ট দু’ধরনের আবেদন ছড়ায় সকাল বেলার ওইসব আগন্তুক; গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় সবজিওয়ালাদের গাড়ি আসে না। ঝাঁকি ভর্তি মাছ মাথায় করে ফেরি করতে আসে না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা একনিষ্ঠ নিকেরিÑ তাই গ্রামীণ যেসব অধিবাসী ইট-সিমেন্ট-ধুলো-ধোঁয়ার শহর ঢাকায় বসতি গড়েন তাদের কাছে ধীরে ধীরে সহনীয় হয়ে ওঠে হকার ফেরিওয়ালারা। আর অভিজাত শহুরেরা, যারা সামান্য টয়লেট পেপার কেনার জন্যও অভিজাত সুপার শপে ছোটেন, তাদের কাছে এরা এক মিশ্র অনুভূতির নাম। উদাসীন দু’চোখে তাদের উপস্থিতি উপেক্ষা করতে চাইলেও ঠেকায় পড়ে জ্যান্ত জিয়ল বা টাটকা টমেটো কিনতেই হয়। ঢাকা শহর যে এক অর্থে ‘অভিবাসীদের শহর’ তাতে কোন সন্দেহ নেই। ছিন্নমূল, নদী ভাঙ্গনের শিকার ও ভূমিহীন কৃষক এবং ক্ষেতমজুর বা মৎস্য চাষী হয়েও ক্রমশ কর্মহীন- এমন লোকের সংখ্যাই বেশি? নাকি ঢাকার আগন্তুক হিসেবে তারাই সংখ্যাগুরু যারা চাকরি সূত্রে কিংবা চাকরি সন্ধানে এই নগরের দ্বারস্থ হয়েছে? শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসে শিক্ষা সমাপনের পর এখানেই থিঁতু হয়ে যাওয়া মানুষও তো লাখ লাখ! ঢাকায় স্বকর্মসংস্থানের সংগ্রামে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে কত বিচিত্র পেশাতেই না জড়িয়েছে। ঢাকার আদি বাসিন্দারা আছেন, আছে তাদের নিজস্বতাখচিত ভাষা। বরং গত অর্ধশতকের অতি নগরায়ন ও শহর সম্প্রসারণের ফলে তারাই হয়ে উঠেছেন সংখ্যালঘু। দেশের প্রতিটি জেলার মানুষ এই ঢাকাকে নিজের শহর করে নিয়েছে। বাংলাদেশ এমনই একটি দেশ তার প্রতিটি জেলার মানুষের রয়েছে নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা, আর ভাষা থাকলে তার উচ্চারণ-বাচন স্বরভঙ্গিও পৃথক হবে। নগরের অলিগলির হকার-ফেরিওয়ালাদের খরিদ্দার শ্রুতি আকর্ষণকারী বয়ান থেকে তাদের শেকড় কিনে নেয়া এমন কঠিন কিছু নয়। এসব থেকে অবশ্য ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যেও প্রকাশিত হতে পারে। আমাদের গলিতে যে গুটিকতক মাছ বিক্রেতা আসেন তাদের একজন ধরে ধরে প্রতিটি মাছের নাম বলেনÑ যেমন ওই পাঙ্গাস মাছ, ওই কাতল মাছ, ওই চিংড়ি মাছ... গলার স্বর শুনে ভেবেছিলাম অল্পবয়সী কোন তরুণ হবে। পরে দেখি দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ। তার কাঁধের দু’দিকে বৃত্তাকার বিরাট ডালার ভারে তার উচ্চতা ২৫ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। মুরগি বিক্রেতারা সব কোথা গেল! এখন তাদের প্রায় দেখাই যায় না। বরং বাতিল ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী সংগ্রহকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে গলির বাদশা হয়েই সবজি বিক্রেতারা সারাটা সকাল এ মাথা ও মাথাজুড়ে তাদেরই দাপট। টাকার দাম যে পড়ে যাচ্ছে তার ধারাবাহিক সাক্ষী তো এরাই। এক শ’ টাকার নোটে যে সবজি মেলে তাতে ছোট্ট সংসারের দু’বেলার চাহিদা মেটানো দায়। সে যাক সবজির ভ্রাম্যমাণ দোকান ঘিরে মহিলাদের আড্ডা জমে ওঠে। ‘সবজি ফেরিওয়ালার প্রতি’ নামের কবিতায় বহুতল ভবনাকীর্ণ নগরের গলিপথের ছবি উঠে এসেছে। ১৫ বছর আগের লেখা হলেও আজও তা সমান প্রাসঙ্গিক। ও সবজিওয়ালা, কাঠের ভাঙাচোরা ঠেলাগাড়ি ঠেলে ঠেলে আসো তুমি আমাদের পাথুরে গলিতে যার তেতলার ছাদে টবগুলো সব বন্ধ্যা, নাকি চলছে বেলির হরতাল গোলাপের ধর্মঘট, ধুঁকছে বামন বেগুন, শুধু গাদা গাদা গাঁদাফুলের সন্ত্রাস, ভেজা শাড়ির টুপটাপ ঝরা জলে, ঠা ঠা রোদ্দুরেÑ ও তরকারি বিক্রেতা, তোমার হাঁক শুনে গাঁয়ের ঝিদের মন উড়ে যায় প্রান্তর- হাওয়ায়, পুকুর-শয্যায় একটা আস্ত বাগান নাকি এক টুকরো সবজি ক্ষেত তুলে নিয়ে এসেছ তুমি আজ হুড়োহুড়ি অফিস টাইমেÑ ফ্ল্যাটের জানালায় মিষ্টিকুমড়োর পিছু পিছু এসেছে মৌমাছি, লেটুস পাতায় বসন্তের রোদ ঝলকায়, আহা পেঁপেরা পিপে ভর্তি করে এনেছে গ্রামের গন্ধ, সদ্য শহরে আসা বউদের মতো টমেটোরা সরল রক্তিমÑ কোথায় পাবে ন্যাংটো শিশুর আদর ক্লিনিক আর কিন্ডারগার্টেনে ভরা অবাক আবাসিক এলাকায় ও সবজিওয়ালা, দাড়িপাল্লায় মেপে মেপে ভেজিটেবল দিয়ে যাও সকাল বিকেল রক্তের শর্করা মাপা প্রৌঢ় দম্পতিকে, কচি দেখে শসা আর নেবু নিবেদন কর ফেসিয়াল প্রিয় সানন্দাসমীপে আমাকে কী দেবে তন্দ্রা-তাড়ানিয়া-দিও চালশে চোখের আরাম শুনিও শিম আর শিশিরসিক্ত পাড়াগাঁর গান, রকমারি শাক নিয়ে হাঁক পেড়ে পেড়ে গরিব গলিতে বারবার এসো হে সবুজের প্রতিনিধি। রাজধানীর হাসপাতাল ঘন ঘন আমাকে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে বলে এ নিয়ে লিখতে বসেছিÑ একথাটাও সর্বাংশে সত্য নয়। গত কয়েক দিন রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল নিয়ে বেশ লেখালেখি হচ্ছে, টিভি প্রতিবেদনও চোখে পড়ছে। তাছাড়া টানা তিনটে দিন রাজধানীর একটি বেসরকারী অভিজাত হাসপাতালের দিকে দৃষ্টি ছিল শুধু রাজধানীবাসীর নয়, গোটা দেশবাসীর। সিলেটে এক নরাধমের হাতে মারাত্মক জখম হওয়া ছাত্রী খাদিজা ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সংসদে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এই খাদিজার প্রসঙ্গ তুলেছেন। যা হোক, একটা কথা তো সবারই জানা যে গোটা দেশের মানুষের শেষ ভরসা ঢাকার হাসপাতাল। তাই ঢাকার বড় বড় হাসপাতালের, তা সরকারী হোক বা বেসরকারী, মানসম্পন্ন হওয়া চাই, চাই রোগীবান্ধব। হাসপাতাল নিজেই ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে উঠলে মানুষের কী উপায় হবে? বলা দরকার ঢাকার বাইরের হাসপাতাল নিয়ে প্রায়শ নেতিবাচক রিপোর্ট ছাপা হয়। ‘বেহাল হাসপাতাল’, ‘হাসপাতালের রোগ সারাবে কে?’Ñ এ ধরনের রিপোর্ট ঢালাওভাবে লেখা হয়। দেশের সীমিত সম্পদ ও লোকবলের মাধ্যমেও কোটি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে চলেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। চেষ্টা চলছে পরিস্থিতি উন্নতির। তবে ঢাকার হাসপাতালের ওপর বাধ্য হয়ে ভরসা রাখতে হয় সারাদেশের রোগীদের, সেজন্যেই এত কথা বলা। রাজধানীর মহাখালীতে ৩০০ শয্যার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিস্থিতি নাজুক। প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে অনেক দিন ধরে। ক্যান্সার হাসপাতালের এই চিত্র সত্যিই খুব দুঃখজনক। পত্রিকা পড়ে জানছি হাসপাতালের এমআরআই যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে চার বছরের বেশি সময়। আর সিটি স্ক্যান যন্ত্র নষ্ট আড়াই বছর। বায়োপসি না করেও ক্যান্সার সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা পেতে ‘সেল ভিশন’ নামে একটি যন্ত্র কেনা হয়েছিল সাড়ে তিন কোটি টাকায়। যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থে প্যারিস ভ্রমণে গিয়েছিলেন চারজন চিকিৎসক। কিন্তু ওই যন্ত্র ১০ জন রোগীরও ক্যান্সার পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়নি। যন্ত্রটি এখন অচল। অধিকতর সূক্ষ্মভাবে ল্যাপারেস্কপি করা যাবে এই কথা বলে একটি ‘পিন পয়েন্ট ল্যাপারেস্কপি’ যন্ত্র কেনা হয়। এই যন্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন একাধিক অধ্যাপক। কিন্তু যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়নি, পড়ে আছে। এ রকম মোট ৭৪টি যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে ৪৩টি যন্ত্র মেরামতের অযোগ্য। এ কারণে অনেক রোগীকে পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। এছাড়া হাসপাতালে কোন রেকর্ড রুম নেই। এ তো বহুল উচ্চারিত ক্যান্সার একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। তবে এটা জেনে হাত গুটিয়ে বসে থাকারও কিছু নেই। সঠিক চিকিৎসা পেলে অনেক ক্যান্সার রোগী সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু ক্যান্সার হাসপাতালের চিত্র যদি এই হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? পানির নাম জীবন, হাসপাতালে এই পানি হচ্ছে দ্বিগুণ জীবনেরই সমতুল্য। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দিকে তাকানো যাক। তিনটি গভীর নলকূপের মধ্যে একটি প্রায় এক বছর ধরে নষ্ট। আরেকটি গত বুধবার প্রায় সাত ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এ কারণে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কয়েকটি ওয়ার্ড ও বার্ন ইউনিটে কয়েক ঘণ্টা পানি ছিল না। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের। তারা মিছিল করে পানির দাবি জানানোর পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পানি না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন বার্ন ইউনিটের রোগীরা। পানি না থাকায় ড্রেসিং ও পরিচ্ছন্নতার কাজ সাধারণ স্যালাইন দিয়ে সারতে হয়েছে। শৌচাগার ব্যবহারে চিকিৎসাধীন রোগীদের ভোগান্তি ছিল আরও বেশি। হাসপাতালটিতে পানি সরবরাহ করা হয় তিনটি গভীর নলকূপের মাধ্যমে। নলকূপগুলো একটি জরুরী বিভাগের পাশে, একটি সার্জারি বিভাগের পাশে ও সবচেয়ে বড় নলকূপটি নতুন ভবনের পাশে অবস্থিত। জরুরী বিভাগের পাশের নলকূপটি প্রায় এক বছর থেকে নষ্ট। এ কারণে দীর্ঘদিন থেকে বার্ন ইউনিটে পানি সরবরাহে প্রায়ই সমস্যা হয়। বলছিলাম নিজের কথা। চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি যে হাসপাতালটিতে আমার একাধিকবার যেতে হয়েছে সেটির নাম উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এটি বেশ পরিচিত বিশাল একটি হাসপাতাল। মজার ব্যাপার হলো, হাসপাতালটির নামে গুগলে সার্চ দিলে বাংলায় যে লেখাটি আসে সেটি হাসপাতালটির ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। লেখক লিখেছেন, ‘রোগীদের জীবন নিয়ে খেলা চলে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রবিবার ২৭ মে ২০১২, অপরাহ্ণ ০৪:৩৭)। ...এক রোগী তো বলেই ফেললেন ‘আমাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে ভর্তি করছে।’ এরপর লম্বা ফিরিস্তি। পরিশেষে লিখছেন, ‘একটি আবেদন : ব্লগার ভাইদের মধ্যে কেউ যদি সাংবাদিক থাকেন তাহলে দয়া করে আমাকে সহযোগিতা করবেন। যাতে লেখাটা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়। উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে কিছু বিশিষ্ট ব্যাক্তির উদ্যোগে বাংলাদেশ মেডিক্যাল স্টাডিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইগঝজও) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্যোগেই ২০০৩ সালে উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল যাত্রা শুরু করে। আর এই হাসপাতালের ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যাত্রা শুরু। ১৭ তলা ভবনের এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার। এখানে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে শল্যচিকিৎসা, ধাত্রীবিদ্যা, স্ত্রীরোগ ইত্যাদি। অত্যাধুনিক রোগনির্ণয় সুবিধা আছে এখানে। তথ্যগুলো স্বস্তিকর সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তথ্যের ব্যবধান দেখলে আশাহত হতে হয়। অবশ্য প্রশংসা করব চিকিৎসকদের। প্রচুর রোগী তাদের সামাল দিতে হয় প্রতিদিন। ডাক্তারের সংখ্যা বললেই তো আর বাড়ানো যায় না। অর্থোপেডিকের ডাক্তার দেবাশীষকে দেখলাম ভীষণ ব্যস্ত। তারপরও সারাক্ষণ মুখে হাসি তার, যা রোগীদের জন্য খুব উপকারী। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে আমি কেবল দুটো সুপারিশ করছি। এক্সরে রুম মাত্র একটি, রোগীদের সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সিরিয়াল নিয়ে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করা গুরুতর রোগীদের জন্য অসম্ভব একটি কাজ। তাই একটি এক্সরে রুম দরকার। এক্সরে টেবিল হুইল চেয়ারের লেবেল থেকে বেশ উঁচু। এটাও রোগীবান্ধব নয়। একই দশা জরুরী বিভাগেও। আধুনিক শব্দটির ওজন অনেক। প্রতিষ্ঠানের নামের আগে যে কোনো শব্দ জুড়ে দিলেই দায় সারা যায় না। শারদীয় উৎসব গত কয়েকটি দিন ঢাকা ছিল উৎসবমুখর। শারদীয়া দুর্গোৎসবে মেতে উঠেছিল নগর। প্রতিটি পূজামণ্ডপেই ছিল মানুষের ভিড়। শনিবার মহাসপ্তমীর দিন ঢাকার পূজাম-প পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী যে কথাটি বলেছেন তা কোটি বাঙালীর মনের কথাÑ ধর্ম যার যার উৎসব সবার। সত্যিই বাংলাদেশ এক অসাম্প্রদায়িক দেশ। পূজার আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছে ঢাকার লাখো মুসলিম। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরার কলারোয়ার ১৮ শতকের মঠবাড়িয়ার নবরতœ মন্দিরে (১৭৬৭) দুর্গাপূজা হতো। ঢাকেশ্বরী মন্দির চত্বরে আছে দুই ধরনের স্থাপত্য রীতির মন্দির। প্রাচীনতমটি পঞ্চরতœ দেবী দুর্গার যা সংস্কারের ফলে মূল চেহারা হারিয়েছে। মন্দিরের প্রাচীন গঠনশৈলী বৌদ্ধ মন্দিরের মতো। ধারণা করা হয়, দশম শতকে এখানে বৌদ্ধ মন্দির ছিল যা পরে সেন আমলে হিন্দু মন্দির হয়েছিল এবং ১১ বা ১২শ’ শতক থেকে এখানে কালী পূজার সঙ্গে দুর্গা পূজাও হতো। ইতিহাসবিদ দানীর মতে, প্রায় সাড়ে পাঁচ শ’ বছর আগে রমনায় কালী মন্দির নির্মিত হয়েছিল এবং এখানেও কালী পূজার সঙ্গে দুর্গা পূজাও হতো। যা হোক, আজ ঢাকায় বহু পূজাম-পেই পূজা হয়। ঢাকা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর হিসেবে সুনাম অক্ষুণœ রেখেছে। ৮ অক্টোবর ২০১৬
×