ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রুখো জঙ্গী

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১১ অক্টোবর ২০১৬

রুখো জঙ্গী

সাহসের বরাভয় কাঁধে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গীদের আরও চারটি আস্তানা। গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে ১২ জঙ্গী। এদের আস্তানা উচ্ছেদের ফলে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে জঙ্গীদের। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর অনেকটা ঘোষণা দিয়ে জঙ্গী দমনে যেভাবে মাঠে নেমেছে সংশ্লিষ্ট বাহিনী, তাতে সারাদেশকে জঙ্গীমুক্ত করার প্রত্যয়ে তারা বদ্ধপরিকর। দেশের জনগণের সার্বিক সহায়তা পাচ্ছেন তারা। জনসচেতনতা বাড়ার ফলে জঙ্গীরা চোরাগোপ্তা হামলা, টার্গেট কিলিং বা বড় ধরনের নাশকতায় লিপ্ত হতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। শারদীয় দুর্গাপূজা আর মহরমকে কেন্দ্র করে জঙ্গীরা যে নাশকতার পরিকল্পনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছিল, তা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যরা। গত বছর মহরমের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হোসেনী দালানে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল জঙ্গীরা। কিন্তু গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ঢাকার আশুলিয়ায় জঙ্গীদের চারটি আস্তানায় হামলা চালিয়ে তাদের কর্মকা- স্তিমিত করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাব গাজীপুরের দুটি স্থানে, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় একযোগে অভিযান চালিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাব মাইকযোগে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালেও তারা তাতে সাড়া দেয়নি। বরং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা হামলা চালায়। এতে পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। পুলিশকেও পাল্টা গুলি চালাতে হয়। ফলে তাদের জীবিত আটক করা যায়নি। তদুপরি জঙ্গীরা আত্মঘাতী হিসেবে প্রশিক্ষিত। দেশে এই প্রথম একাধিক স্থানে একযোগে অভিযান চালানো হলো। বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে জঙ্গীরা এসব স্থানে সংগঠিত হয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গীদের শেকড় ও উৎস নির্মূলে অনেক বেশি সতর্কতা ও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠছে। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ তাদের উৎস সন্ধানের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। নিহত জঙ্গীদের সবার পরিচয় উদ্ঘাটন করা যাবে সহসাই। এদের মধ্যে একজন রয়েছে জঙ্গীদের অর্থ ও মদদদাতা। আরেকজন নব্য জেএমবির তামিম চৌধুরী নিহত (দল প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত)। এদের সম্পর্কে দ্রুত তথ্য নিশ্চয় সংগৃহীত হবে। গত ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার এক শ’ দিনের মাথায় এই অভিযান চালানো হয়। এই এক শ’ দিনে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সাতটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালায় সংশ্লিষ্ট বাহিনী। এসব অভিযানে অন্তত ৩২ জঙ্গী নিহত হয়েছে। আর জঙ্গীদের হামলায় চার পুলিশ সদস্য, ১৭ বিদেশী নাগরিকসহ মোট ২৫ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে জেএমবির শীর্ষ নেতাও রয়েছেন। গুলশান ও শোলাকিয়ার পর যে তৎপরতা চলছে, তা প্রশংসনীয় এবং গ্রহণযোগ্য। তবে বিএনপির মহাসচিব জঙ্গী নিধনে ক্ষোভ জানিয়েছেন এই বলে যে, তাদের কেন জীবিত ধরা হচ্ছে না। আত্মঘাতী জঙ্গীদের জীবিত উদ্ধার সহজসাধ্য কিনা, তা ব্যাখ্যার দরকার নেই। তবে এভাবে জঙ্গী নিধনে বিএনপি-জামায়াত জোট যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা বলাইবাহুল্য। দেশে জঙ্গীবাদের স্রষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক বিএনপি-জামায়াত চায় না জঙ্গী নির্মূল হোক। এই জঙ্গীদের কাঁধে ভর করে তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। জনগণের ক্ষোভ তাদের সে পথে এগোতে দিচ্ছে না। সারাদেশ থেকে জঙ্গীদের রুখতে জনগণকে পাশে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনী এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।
×