ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে ভারি নৌযান, আড়াই হাজার বাঁধ অপসারণ

মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে নাব্য বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১০ অক্টোবর ২০১৬

মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে নাব্য বৃদ্ধি

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন সরকারী খাল অবমুক্ত করে দেয়ায় আন্তর্জাতিক নৌরুটের নাব্য বেড়েছে। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা এই সরকারী খালগুলো অবমুক্ত করে দেয়ার ফলে জোয়ারের সময় চ্যানেলের পানি ওই সব খাল ও তার শাখা-প্রশাখায় প্রবেশ করে তা আবার ভাটার সময় নেমে আসছে। ফলে চ্যানেলে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পলি জমার হার কমতে শুরু করেছে। এখন ১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ সহজেই মংলা বন্দরে আসা-যাওয়া করতে পারছে। সম্প্রতি ড্রেজিংয়ের পর ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চ্যানেলটি খুলে দেয়া হলেও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে এবং দ্রুত পলি পড়ে যাওয়ার কারণে বড় আকারের জাহাজ চলাচল করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। কিন্তু বর্তমানে এ চ্যানেল সংলগ্ন খালের বাঁধ অবমুক্ত হওয়ায় পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে এবং প্রতিদিন ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০টি জাহাজ এ রুট দিয়ে চলাচল করছে। ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে খাল কেটে দেয়ায় এ চ্যানেলটিতে নাব্য ফিরেছে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম ফরহাদুজ্জামান বলেন, চ্যানেল সংলগ্ন খাল কেটে দেয়ার কথা আমরা আনেক আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছিলাম। বর্তমানে খালগুলো কেটে দেয়ার ফলে এ চ্যানেলে পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে এবং পলি পড়ার হারও অনেক কমে গেছে। ফলে এখন এ চ্যানেল দিয়ে ১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচলের অনুমতি থাকলেও বর্তমানে ১৪ ফুট ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে যাতায়াত করতে পারছে। এ নাব্য রক্ষায় ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি চ্যানেল সংলগ্ন সরকারী খালগুলো প্রবাহমান রাখা জরুরী বলে তিনি মত দেন। এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌরুট সংলগ্ন ২৩৪টি সরকারী খালের আড়াই হাজার বাঁধ চিহ্নিত করে তা অপসারণ করা হয়েছে, যার ফলে এ রুটে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি যে কোন অবস্থাতেই রক্ষা করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, চ্যানেলটির নাব্য রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রস্তাবিত ৮৩টি খালের পুনঃখনন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকারী নির্দেশনায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি চালু রাখতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। রামপাল উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখানে ১০টি ইউনিয়নের ২৩৪টি খালের প্রত্যেকটি খাল এলাকার প্রভাবশালী মহল অবৈধ বাঁধ দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করে আসছিল। ফলে সময় প্রবাহে সরকারী খালগুলো প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়। তারা ওই সব খালের ওপর ১৮শ’র বেশি বাঁধ নির্মাণ করেছিল। দীর্ঘ সময় খালগুলো বদ্ধ থাকায় খালগুলো ভরাট হয়ে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে যায়। চ্যানেল সংলগ্ন এ খালগুলো মরে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক এ রুটের নাব্য আস্তে আস্তে কমতে থাকে। একপর্যায়ে ২০১১ সালে চ্যানেলটি নৌচলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে যায়। চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেলে চ্যানেল ব্যবহারকারীরা বিকল্প পথ হিসেবে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শ্যালা নদী দিয়ে যাতায়াত করতে থাকে। কিন্তু পরিবেশবাদীরা সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে ওই পথ ব্যবহার বন্ধ করে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খনন করার আহ্বান জানায়। কিন্তু একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবে গেলে সরকার ওই রুটটি বন্ধ করে দিয়ে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক চ্যানেলটি খননের মাধ্যমে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিআইডব্লিটিএ ২০১৪ সালে চ্যানেল খনন কাজ শুরু করে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চ্যানেল ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু বিআইডব্লিটিএ’র সামনে ড্রেজিং কাজে সব চেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা দেয় খননকৃত জায়গা অতি অল্প সময়ে অধিক পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া। দেখা যায়, খননকৃত জায়গায় এক থেকে দুই মাসের মধ্যে এক থেকে দেড় মিটার পরিমাণ পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তখন সরকারী নির্দেশনায় প্রশাসনের তত্ত্বাধানে চ্যানেলের সাথে সংযুক্ত খালগুলোর বাঁধ অপসারণের কাজ শুরু হয়। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার এ কাজের সরেজমিন নিবিড় তদারকি করেন। ২৩৪টি খালের আড়াই হাজার অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে ৮৩টি খালের খনন কাজের জন্য পাউবোর অধীনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ কাজ দ্রুত করা প্রয়োজন বলে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আঃ সামাদ মত দেন।
×