ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুর্বার মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১০ অক্টোবর ২০১৬

ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুর্বার মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ব্যাট হাতে দারুণ কিছু করার ক্ষমতা রাখেন সেটার প্রমাণ আগেও অনেকবার দিয়েছেন। আর ঘরোয়া ক্রিকেট প্রায় নিয়মিতই দুর্দান্ত কিছু ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকদিন সেভাবে ভাল কোন ইনিংস খেলতে পারেননি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অবশেষে, একেবারে উপযুক্ত সময়েই দলের বিপদের মুহূর্তে আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন তিনি। রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেললেন মাত্র ২৯ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। তার কারণেই বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ইনিংসটা দু’শ’ পেরিয়ে সম্মানজনক এক অবস্থানে পৌঁছে। দারুণ ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও শুরু থেকেই আগুন ঝরান মাশরাফি, যেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামটা অনেক দিন পর আবার মনে করিয়ে দেন ক্রিকেটপ্রেমীদের। ইংলিশ টপঅর্ডার তছনছ করে দেন প্রথম স্পেলেই ৩ উইকেট নিয়ে। জেক বলের উইকেট নিয়ে তিনি দলের জয় নিশ্চিত করেন। ৮.৪ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন মাশরাফি। দারুণ একটি ইনিংস খেলে দলকে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে টেনে তোলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৮৮ বলে ৬ চারে ৭৫ রান করে মাহমুদুল্লাহ যখন বিদায় নেন তখনও বাংলাদেশের অবস্থা করুণ। দুর্দশাগ্রস্ত চেহারা ১৬১ রানেই ৬ উইকেট খুইয়ে। মোসাদ্দেকও বিদায় নেন দলীয় ১৬৯ রানের মাথায়। ঘোরতর বিপদে ৯ নম্বরে নামেন অধিনায়ক মাশরাফি। ১০ বছর আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের একমাত্র ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ২৭ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫১ রানের অপরাজিত এক বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। আবার সেই মিরপুরেই জ্বলে উঠলেন যখন দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরা রান করতে হিমশিম খেয়েছেন। এদিন নিজের দ্বিতীয় বলটি মোকাবেলা করেই সেটাকে ছক্কায় পরিণত করেন মাশরাফি। মঈন আলীর করা ইনিংসের ৪২তম ওভারের প্রথম বল ছিল সেটি, একই ওভারের শেষ বলেও লং-অন দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে মুষড়ে পড়া দর্শকদের আবার জাগিয়ে তোলেন মাশরাফি। চলতি বছর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) ৫০ বলেই শতক হাঁকিয়েছিলেন তিনি। সেটি ছিল দেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। সেটাই যেন অনুপ্রেরণা হয়ে আসল এদিন। এরপর আর থামানো যায়নি মাশরাফিকে। নাসির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েছেন মাত্র ৪৯ বলে! এর মধ্যে মাশরাফির অবদান ২৯ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪! ঝড়ো ইনিংসটা থেমে যায় রানআউটের খপ্পরে পড়ে। ততোক্ষণে বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন মাশরাফি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেরা ইনিংস। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫১ ছাড়াও অপরাজিত ৪৪ রান করেছিলেন কেনিয়ার বিরুদ্ধে ১৭ মার্চ ২০০৬ সালে বগুড়ায়। এছাড়া নাইরোবিতে ১৩ আগস্ট ২০০৬ কেনিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ৪৩ ও ১২ মার্চ ২০০৭ ভারতের বিরুদ্ধে মিরপুরে ৪২ রান- এ কয়েকটিই তার ওয়ানডেতে চল্লিশোর্ধ ইনিংস। আর টেস্টে তিনি তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন যার মধ্যে ৭৯ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংসও আছে। একাধারে ব্যাটে-বলে দারুন নৈপুণ্য দেখিয়ে বেশ কয়েকবারই দলকে সাফল্য এনে দিয়েছেন মাশরাফি। ইংলিশদের বিরুদ্ধে যেন দিনটাই ছিল তাঁর। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর বল হাতে নিয়েও সফরকারী ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দিলেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের একমাত্র অর্ধশতকের দিন বল হাতে ৩৯ রানে দুই উইকেট নিয়ে দলকে জিতিয়েছিলেন। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ প্রথমবার ভারতের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ দল সে ম্যাচেও ব্যাট হাতে অপরাজিত ৩১ রান করার পর বল হাতে ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। ১৩ আগস্ট ২০০৬, নাইরোবির জিমখানায় বল হাতে ৫৩ রানে ৩ উইকেট নেয়ার পর ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলকে ২ উইকেটের জিতিয়েছিলেন। ২৩ ডিসেম্বর ২০০৬ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বগুড়ায় ব্যাট হাতে অপরাজিত ২৩ এবং বল হাতে ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। রবিবার যেন সেই দিনটাই ছিল মাশরাফির। নিজের প্রথম ও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ২ রান দেন, ইনিংসের চতুর্থ ওভারে এসে জেমস ভিন্সকে (৫) শিকার করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন। দারুণ লাইন-লেন্থে বল ফেলে কিপটে বোলিং করা মাশরাফি ইনিংসের অষ্টম ওভারে এসে ফিরিয়ে দেন আক্রমণাত্মক ওপেনার জেসন রয়কে (১৩) এলবিডব্লিউ করে। দশম ওভারে চতুর্থ বলে উড়িয়ে দেন আরেক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান বেন স্টোকসের (০) অফস্টাম্প। প্রথম স্পেল শেষ ৬-০-২৩-৩! এমন আগুন বোলিংয়ের মুখেই চরম বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। শুরুর এই ধাক্কাটা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইংলিশরা দ্বিতীয় স্পেলে এসে। প্রথম স্পেল শেষ ৬-০-২১-৩! এমন আগুন বোলিংয়ের মুখেই চরম বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। শুরুর এই ধাক্কাটা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইংলিশরা। দ্বিতীয় স্পেলে এসে ২.৪ ওভারে ৮ রানে আরেকট্ িউইকেট নেন। ৪৫ রানের দশম উইকেট জুটি ভেঙ্গে দলের জয় নিশ্চিত করেন বলকে আউট করে। সব মিলিয়ে ২৯ রানে ৪ উইকেট মাশরাফি।
×