ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বৈঠক

সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে আগের সিদ্ধান্তে অনড় শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১০ অক্টোবর ২০১৬

 সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে আগের সিদ্ধান্তে অনড় শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নম্বর বণ্টনে আগের সিদ্ধান্তেই অনড় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতিতে ছয়টির বদলে সাতটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার নিয়ম বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলেও রবিবার শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এটার কোন পরিবর্তন হবে না। এটা পরিবর্তনের কোন যুক্তি নেই, কারণ নেই। শিক্ষার্থীরা সময় কম পাচ্ছে না। সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনÑ শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সৃজনশীলে সাত প্রশ্ন রাখার পক্ষে সরকারের আগের অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানান। পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতিতে ছয়টির বদলে সাতটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার নিয়ম করে ২০১৭ সালের এসএসসি, দাখিল, এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার সময় বিভাজনের নতুন বিন্যাস করে দিয়েছে, যা গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটি। ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন শুরু করেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছে, ছয়টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আগে সময় ছিল ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট। আর এখন ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের মধ্যে সাতটির উত্তর দিতে হবে। পাশাপাশি এমসিকিউ প্রশ্নের নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে। এতে তাদের ওপর চাপ বেড়ে যাবে। শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, নতুন সময় বিভাজনের এ সিদ্ধান্ত ২০১৫ সালেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ তারা পেয়েছে। আগামী বছর থেকে এমসিকিউ ও রচনামূলক অংশের পরীক্ষার মধ্যে কোন বিরতি থাকবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এতে সৃজনশীলে ছয়টির পরিবর্তে সাতটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য বাড়তি সময় শিক্ষার্থীরা পাবে। আগে ছয়টি সৃজনশীল প্রশ্নের নিয়মে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে শিক্ষার্থীরা গড়ে ২১ মিনিট ৪০ সেকেন্ড সময় পেত। আর এখন সাতটির উত্তর করতে হলেও প্রতিটি প্রশ্নের জন্য গড়ে ২১ মিনিট ২৬ সেকেন্ড সময় পাবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগে সৃজনশীলে শিক্ষার্থীদের ছয়টির উত্তর লিখতে হতো নয়টি প্রশ্নের মধ্য থেকে। আগামী বছর থেকে তাদের ১১টি প্রশ্নের মধ্য থেকে সাতটি বেছে নিতে হবে। সকাল ১০টায় যে পরীক্ষা শুরু হবে ওই পরীক্ষার এমসিকিউ ও রচনামূলকের উত্তরপত্র পৌনে ১০টায় দেয়া হবে। পরীক্ষা শুরুর আগে ওই ১৫ মিনিট সময় শিক্ষার্থীরা পাবে দুটি উত্তরপত্রে শিক্ষার্থী তথ্যপূরণের জন্য। ফলে ওই কাজে তাদের পরীক্ষার সময় ব্যয় হবে না। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমরা কারিকুলাম আরও যুগোপযোগী করতে চাই। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যদি কোন অসঙ্গতি থেকে থাকে তবে সেগুলো সমন্বয় করেই কারিকুলাম তৈরি করা হবে, যার ভিত্তিতে একটা সহজ, সুন্দর ও চমৎকার পাঠ্যপুস্তক তৈরি হবে। শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করছেন। এর ফলে ভবিষ্যতে কারিকুলাম আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে সক্ষম হব। আমরা চাই পরীক্ষা পদ্ধতি সহজ করতে, স্বল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নিতে এবং ছেলেমেয়েরা যাতে সহজে পরীক্ষা দিতে পারে, একই সঙ্গে তাদের মূল্যায়ন করা যায়, যাতে ছেলেমেয়েরা চাপ অনুভব না করে। শিক্ষকদের পরমর্শে অনেক কাজ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে পরিবর্তন করতে পারব। শিক্ষাবিদদের পরামর্শে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, বিশ্বমানে পৌঁছাতে হলে সৃজনশীল পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। অনেক বাধা অতিক্রম করার পর সবাই মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন আমরা সব মিলিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতির বড় ধরনের সংস্কার করব, যার মূল উদ্দেশ্য হলো ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় যেন চাপ বোধ না করে, সহজে প্রস্তুতি নিতে পারে। সভায় অংশ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বড় ধরনের সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে কী ধরনের সমন্বয় করবে- এগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নতুন করে কারিকুলামের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশ্নভা-ার করা যায় কিনা- শিক্ষকরা সৃজনশীল প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হিমশিম খেয়ে যান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদী যে পরিবর্তন সেটা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু করলে হবে না। সমন্বয় করে করতে হবে।
×