ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের খোলা বাজার থেকে আরও বিদ্যুত কিনতে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ অক্টোবর ২০১৬

ভারতের খোলা বাজার থেকে আরও বিদ্যুত কিনতে চায় বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের খোলা বাজার থেকে আরও বিদ্যুত কিনতে চায় বাংলাদেশ। ভারত সফর শেষে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দেশে ফিরে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। ভারত সরকারের নীতি নির্ধারকরা এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে ভারত। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের খোলা বাজারে প্রতিইউনিট বিদ্যুত বিক্রি হয় দুই টাকা ২০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে। প্রতি ঘণ্টায় সর্বনিম্ন এক মেগাওয়াট বিদ্যুতের ক্রেতা খোলা বাজার থেকে বিদ্যুত কিনতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভারতের খোলা বাজার থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুত কিনতে পারলে বিদ্যুত বাণিজ্যের বড় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এজন্য উভয় দেশের সরকারকে ‘ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড’ বা আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত বাণিজ্য উন্মুক্ত করতে হবে। এখন ভারত থেকে বাংলাদেশ যে বিদ্যুত ক্রয় করছে তা ওই দেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত। দেশটি থেকে বাংলাদেশ এখন ৬০০ মোগওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে। এর মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট খোলা বাজার থেকে কেনা হয়। ভারতের সরকারী প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যুত কিনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রতিমন্ত্রী জানান, কোন ক্রেতা ভারতের কোন বেসরকারী উৎপানকারীর কাছ থেকে বিদ্যুত ক্রয় করলে ক্রেতাকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান সরবরাহ লাইন থেকে ওই বিদ্যুত সরবরাহ করে নির্দিষ্ট বিতরণ কোম্পানি। বাংলাদেশও এ পদ্ধতিতে ভারত থেকে বিদ্যুত কিনতে চায়। দরপত্রের মাধ্যমে ভারতের খোলা বাজার থেকে বিদ্যুত কেনার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। এ বিষয়ে দেশটির নীতিনির্ধারকরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এখন ভারত সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিলেই বিদ্যুত আমদানি সম্ভব। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নেতৃত্বে গত ১ অক্টোবর জ্বালানি ও বিদ্যুত বিভাগের ১৭ কর্মকর্তা ভারত সফরে যান। ওই সফরে ভারতের জ্বালানি মন্ত্রী, বিদ্যুত মন্ত্রী ও কয়লা মন্ত্রী ও দেশটির সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুত সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানি, ভারতের খোলা বাজার থেকে বিদ্যুত ক্রয় ও বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে ভারতকে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকগুলোতে দুই দেশেই বেশ কিছু বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভুটানের জলবিদ্যুত উৎপাদনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। ভুটান থেকে বিদ্যুত আনার জন্য ভারত তাদের সঞ্চালন লাইন ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত আনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। দুটি দেশ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত আনতে হলে প্রয়োজন হবে ভারতের ভূমি ব্যবহারের। ভারত তাদের ভূমি ব্যবহার করে ভুটান ও নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। নেপাল, ভুটান ও ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে জলবিদ্যুত বাংলাদেশে আনা সম্ভব হলে বিদ্যুতের দাম অনেকটা কমে যাবে। ভারতীয় বিদ্যুত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আদানী পাওয়ার লিমিটেড নিজেদের বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত রফতানির প্রস্তাব দিয়েছে সরকারকে। বিষয়টি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। নিজেদের ভূখ- ব্যবহার করে ভারতকে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে দেয়ার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। এর বিনিময়ে সেখান থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত চেয়েছে বাংলাদেশ। ভারত দুটি বিদ্যুতের করিডর চেয়েছে। এখন ভারত একটি বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সঞ্চালন লাইনটি ভারতের অসম থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর হয়ে ভারতের বিহার পৌঁছাবে। সঞ্চালন লাইনটির ক্ষমতা হবে তিন হাজার মেগাওয়াট। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়াতে একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করছে ভারত। সেখান থেকে একটি পাইপ লাইন বাংলাদেশের খুলনা থেকে রংপুর হয়ে ভারতের শিলিগুড়িতে গিয়ে শেষ হবে। এখান থেকে ভারত বাংলাদেশকে এলএনজি সরবরাহ করার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। এই পাইপ লাইন থেকে খুলনার ৭৮০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুতকেন্দ্রে গ্যাস দেবে ভারত। কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের এলপিজি ব্যবসায়ীদের ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে এলপিজি ব্যবসায় বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশী এলপিজি উদ্যোক্তরা ভারতে এলপিজি খাতে বিনিয়োগ করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন নসরুল হামিদ।
×