ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মীপ্রতি ৭/৮ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ রফতানিকারকের বিরুদ্ধে

সৌদি গমনেচ্ছুদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিলে বাজার বন্ধ হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ অক্টোবর ২০১৬

সৌদি গমনেচ্ছুদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিলে বাজার বন্ধ হতে পারে

ফিরোজ মান্না ॥ খরচ কমানোর শর্তে দীর্ঘদিন পর শ্রমবাজার খুলে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। অথচ সেই বাজারেই সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়ে কর্মীদের যেতে হচ্ছে। দালাল, ফড়িয়া আর জনশক্তি রফতানিকারকরা প্রতি কর্মীর কাছ থেকে ৭-৮ লাখ টাকা করে নিচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীও যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয় ও বায়রা যৌথভাবে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে খরচ নির্ধারণ করে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নির্ধারিত খরচের বাইরে জনশক্তি রফতানিকারক কোন প্রতিষ্ঠান বেশি টাকা নিতে পারবে না। বেশি টাকা নিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। এমন অভিযোগের কথা মন্ত্রণালয় জানলেও এ বিষয়ে অভিযুক্ত কোন জনশক্তি রফতানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও কর্মীদের কাছ থেকে ৭-৮ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ তুলেছে। সূত্র জানায়, সৌদি কর্তৃপক্ষ অভিবাসন ব্যয় কমানোর শর্তে কর্মী নিয়োগের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি মেনে নিয়ে কর্মী নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়টি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি মনিটর করবে। সৌদি কর্তৃপক্ষকে আড়াল করে কর্মীপ্রতি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে আবার বাজার হারাতে হতে পারে। বাজারটি রক্ষার জন্য এখনই জনশক্তি রফতানিকারকদের লাগাম টেনে ধরা উচিত বলে মনে করছেন এ সেক্টরের অভিজ্ঞরা। বাজার নষ্ট হলে আবার উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই সতর্কতার সঙ্গে কর্মী নিয়োগের আহ্বান জানান তারা। মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম-সচিব বলেন, সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি। অভিযুক্ত জনশক্তি রফতানিকারক কোন প্রতিষ্ঠান সৌদিতে কর্মী পাঠাতে পারবে না। অভিযোগবিহীন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানই সৌদিতে কর্মী নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। তারা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত খরচের বাইরে বেশি টাকা নিতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাতিল হবে জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স। দীর্ঘ ছয় বছর পর সম্প্রতি সৌদি আরব সব খাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছে। কোন প্রকার অনিয়মের কারণে বাজার নষ্ট করতে দেয়া হবে না। সরকার যে টাকা নির্ধারণ করেছে, তা যৌক্তিক। সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি টাকা নিলে মন্ত্রণালয় চুপ করে বসে থাকবে না। অন্যদিকে, সৌদি আরবে কারও বিরুদ্ধে ভিসা কেনাবেচার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৫ বছর কারাদ-ের আইন করা হয়েছে। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে উভয় দেশই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত কয়েকদিনে মন্ত্রণালয়ের এমন অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। জনশক্তি রফতানিকারকরা দালাল-ফড়িয়াদের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে ৭-৮ লাখ টাকা করে নিয়ে সৌদি পাঠাচ্ছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তাই জানেন। জেনেও তারা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বিষয়টি জানার জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও সচিব বেগম সামছুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন কথা বলেননি। সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, এমন ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৈঠকে কমিটির একাধিক সদস্য সৌদিতে কর্মী নিয়োগে ৭-৮ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ তোলেন। কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম অভিযোগ করেন, তার নির্বাচনী এলাকার অনেকেই সৌদি আরব যেতে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছেন। জবাবে মন্ত্রী এ ঘটনার প্রমাণ হাজির করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×