ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে এবার কুমারীদেবী শর্বাণী ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১০ অক্টোবর ২০১৬

ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে এবার   কুমারীদেবী  শর্বাণী  ভট্টাচার্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহাষ্টমীতে এবারও দেশের সব রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারীপূজা। দশভুজা দেবী বন্দনার পাশাপাশি রবিবার মহাষ্টমীতে মাতৃরূপে পূজিতা হন কুমারী। আজ সোমবার মহানবমী। রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন পূজাম-পে এবারও কুমারীপূজার বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। ভোর থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জড়ো হতে থাকেন রামকৃষ্ণ মিশনে। অষ্টমী পূজা শুরু হয় সকাল সাড়ে ছয়টায়। সকাল এগারোটায় কুমারী দেবীকে আসনে বসানো হয়। হাজারো ভক্ত দেবী দুর্গা ও কুমারী মাকে জয়ধ্বনি, উলুধ্বনি দিয়ে বরণ করে নেন। এবার কুমারী দেবীরূপে ম-পে অধিষ্ঠিত হন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ৫৩ নং ঝাউগড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী শর্বাণী ভট্টাচার্য (বিদ্যা)। কুমারীর শাস্ত্রীয় নাম কুব্জিকা মালিনী। তার বাবার নাম নারায়ণ ভট্টাচার্য। মায়ের নাম অনিতা চক্রবর্তী। তার জন্ম ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই। ১৯০১ সালে দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার অদূরে বেলুড় মঠে নয় কুমারীকে পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। পরবর্তীতেও কুমারীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করেন। সকালে কুমারী শর্বাণী ভট্টাচার্যকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। মাথা ও গলায় ফুলের মালা, অলঙ্কার ও প্রসাধনে নিপুণ সাজে সাজিয়ে তোলা হয় । এরপরই কুমারী মাকে মন্ত্র পাঠ করে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শরীর মন শুদ্ধ করে মাতৃজ্ঞান রূপে পূজা করা হয়। ষোলটি উপকরণ দিয়ে কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস-এ পাঁচটি উপকরণ দিয়ে কুমারীকে পূজা করা হয়। কুমারী পূজা সম্পন্ন হলে ভক্তরা মাকে প্রণাম করেন। কুমারী পূজা শেষে ভক্তরা দুর্গাপূজার অঞ্জলি নিবেদন করেন। অঞ্জলি প্রদান শেষে হাজার হাজার ভক্ত দর্শনার্থীর মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। পূজা শেষে শর্বাণী ভট্টাচার্য বলেন, সবাই আমাকে পূজা দিয়েছে, খুবই ভাল লাগছে। আমি সবাইকে আশীর্বাদ করেছি, তারা যেন ভাল থাকেন। বাংলাদেশে সুদূর অতীত থেকেই কুমারী পূজার প্রচলন ছিল এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় কুমারীপূজা প্রয়োগ গ্রন্থের পুঁথি থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, হবিগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ কুমারী পূজার তাৎপর্য প্রসঙ্গে বলেন, কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে মাতৃভাবে ঈশ্বরেরই আরাধনা করা হয়। কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করি। কুমারীকে দুর্গাজ্ঞানে পূজা করে সকলের মধ্যে মাতৃভাবের সঞ্চার করা হয়। তাই কুমারী পূজা। নারী জাতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা সমাজ ও জীবনকে মহৎ করে তোলে কুমারী পূজা আমাদের এ শিক্ষাই দেয়। কেন কুমারী পূজা করা হয় এ সম্পর্কে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পুতপবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি। ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে নয়জন কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্ব ব্রহ্মা-ে রয ত্রিশক্তির বলে প্রতনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। এ সাধনপদ্ধতিতে সাধকের নিকট বিশ্বজননী কুমারী নারীমূর্তির রূপ ধারণ করে; তাই তার নিকট নারী ভোগ্যা নয়, পূজ্যা। অষ্টমী পূজা ছাড়াও রাতে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। অষ্টমীর শেষ নবমীর শুরুর সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। যেসব ম-পে কুমারীপুজা হয় সেখানে একই দিনে হয়েছে তিনটি পূজা। দিনের বেলা অষ্টমী বিহিতপূজা আর কুমারীপূজা পরে সন্ধিপূজা। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কেন্দ্রীয় পূজাম-পে সকাল নয়টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধিপূজা শুরু হয় বিকেল পাঁচটা ৩৯ মিনিটে। দুপুরে বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে আজ সোমবার মহানবমী পূজা শুরু হবে সাতটা ১৫ মিনিটে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সকাল নয়টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হবে। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা। আজ ম-পে ম-পে প্রধান আকর্ষণ থাকবে আরতি প্রতিযোগিতা। রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠবেন নানা ঢঙে আরতি নিবেদনে। একই সঙ্গে দিনভর চলবে চ-ীপাঠ। থাকবে ভক্তদের কীর্তনবন্দনা। রবিবার দুপুরের পর থেকে ম-পগুলোতে ঢল নামে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, সব ধর্মের দর্শনার্থীরাই ম-পে ম-পে প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন। পূজাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মেলায়ও ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। এদিকে, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নগরীর বিভিন্ন ম-প পরিদর্শন করেছেন। সাংবাদিক নেতাদের ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ॥ শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রবিবার সাংবাদিক নেতারা ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেছেন। ওই সময় বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এদেশের মানুষ এখন বিশ্বাস করেন ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ প্রধানমন্ত্রীর এই চেতনার সঙ্গে দেশের মানুষ আজ একমত। সে কারণে এদেশের মানুষ ধর্মীয় পরিচয় ভুলে ঈদ বা পূজায় পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিশে উৎসব পালন করেন। এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব অমিয় ঘটক পুলক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সাংবাদিক নেতাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা। সাংবাদিক নেতারা মন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছালে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা স্বাগত জানিয়ে মঞ্চে নিয়ে যান।
×