ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বেতন বেড়েছে ৪০ গুণ;###;বড় দুর্বলতা ইংরেজী জ্ঞান;###;নিয়োগ ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার সঠিক বিচার হয় না ;###;কিছু কিছু কর্মকর্তার কাজের মান ও সেবা প্রশংসাযোগ্য

বাড়েনি দক্ষতা ও সেবা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ অক্টোবর ২০১৬

বাড়েনি দক্ষতা ও সেবা

তপন বিশ্বাস ॥ স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ৪০ গুণ বেতন বাড়লেও গুণগতমান বা দক্ষতা বাড়েনি আমলাদের। বরং কমেছে ক্ষেত্রবিশেষে। পাশাপাশি সেবা প্রদানের মানসিকতাও কমেছে অনেক ক্ষেত্রে। কিছু কিছু কর্মকর্তার দক্ষতা ও সেবা প্রদানের মানসিকতা অবশ্য প্রশংসার যোগ্য। দুর্বল নিয়োগ প্রক্রিয়া, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, কোটা প্রবর্তন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত নিয়োগসহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন দক্ষতা হারাচ্ছেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। এর সঙ্গে সামাজিক মর্যাদা না থাকা ব্যক্তির নিয়োগ পাওয়া, বেআইনীভাবে বিশেষ ব্যাচের কর্মকর্তারা প্রশাসনের উচ্চপদে নিয়োগ পাওয়ায় প্রশাসনে দুর্নীতিও বাড়ছে। প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে কাগজে-কলমে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি। কর্মকর্তাদের অনেকেরই ইংরেজী জ্ঞান নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। এতে বিদেশের সঙ্গে চুক্তি বা দরকষাকষিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর এ পর্যন্ত আটটি বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে সরকার। এতে সচিবের বেতন বেড়েছে প্রায় ৪০ গুণ। ১০নং গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন বেড়েছে ১৩০ গুণেরও বেশি। ১৯৭৩ সালে ১নং গ্রেড তথা সচিবের বেতন স্কেল ছিল দুই হাজার টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার টাকায়। ১০নং গ্রেডে ১৯৭৩ সালে বেতন স্কেল ছিল ১৩০ টাকা। বর্তমানে সে বেতন স্কেল বেড় দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার টাকায়। এছাড়া অন্য কর্মকর্তাদের বেতন বেড়েছে ৭০, ৮০ ১০০ গুণ বা তারও বেশি। কিন্তু কর্মকর্তাদের দক্ষতা অনেক ক্ষেত্রেই বাড়েনি। সেবা প্রদানের মানসিকতার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই এখন নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চাকরির শুরুতেই। অবশ্য এর মধ্যে কিছু যোগ্য, মেধাবী ও সৎ কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের কারণে এখনও চলমান রয়েছে প্রশাসনযন্ত্র। সম্প্রতি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। উভয়পক্ষের এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের সিনিয়র এ্যাসোসিয়েট ডিন ডেবরা ইলস। এ চুক্তির আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। এতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নদুন দ্বার উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাজুক ইংরেজী জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পাশাপাশি রয়েছে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। তাই ইংরেজীতে ভাল দক্ষ না থাকলে তাদের এ প্রশিক্ষণে না পাঠানোর কথা বলছেন অনেকেই। দক্ষ কর্মকর্তাদের বেছে প্রশিক্ষণে না পাঠালে হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা কিছুই নিয়ে আসতে পারবেন না। আমলাদের দক্ষতা প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, নিয়োগে দুর্বলতার পাশাপাশি কোটা পদ্ধতিই কর্মকর্তাদের দক্ষতা কমার জন্য বেশি দায়ী। এছাড়া রাজনৈতিক অজুহাতে সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক পদে পদায়ন না করা ও পদোন্নতি না দেয়া, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মান কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রশাসনে কর্মকর্তাদের মধ্যে মেধা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, অবশ্য এখন জনগণের প্রত্যাশাও বেড়েছে। সে অনুযায়ী প্রশাসন সাড়া দিতে পারছে না। তবে এ প্রসঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, প্রশাসন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গণমুখী। সরকারী কাজ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আগে প্রশাসন যা করত তাই হতো। তাদের কাজের বিরুদ্ধে বলার লোক তেমন ছিল না। সে কারণে তাদের অনেক বেশি দক্ষ বলে মনে হতো। এখন উপজেলার চেয়ারম্যান, এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হয়। এখন একটা কাজ করতে গেলে অনেক ভিন্নমত থাকে। এগুলো ম্যানেজ করে কাজ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকদের অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রশাসন স্বাধীনভাবে কাজ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্যদের কাজ ভিন্ন ভিন্ন। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাজে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের কাজ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সব মিলিয়ে রয়েছে মাত্র ১০ মাসের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। ছেলেদের ক্ষেত্রে রয়েছে আরও ২৮ দিনের একটি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে ১০ মাস ২৮ দিনের। এর মধ্যে ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সর্বপ্রথম প্রশিক্ষণ হলো বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ। নিয়োগের পর পর্যায়ক্রমে সকল কর্মকর্তাকে এ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। কিন্তু সাভারে পিএটিসিতে একসঙ্গে মাত্র ২৫০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। সকল ক্যাডারের কর্মকর্তার জন্য এ প্রশিক্ষণটি বাধ্যতামূলক হওয়ায় কোন এক বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার আগেই অপর এক ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন, যে কারণে এ প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম-সচিব জনকণ্ঠকে বলেন, পিএটিসির অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ অপ্রতুল আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করার প্রস্তাব করেছি। কিন্তু তার আগে পিএটিসির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়া দরকার। সেখানে এক ব্যাচে ২৫০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। সর্বোচ্চ ২৬০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। সকল ক্যাডার মিলে একসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার নিয়োগ দেয়া হয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে এদের প্রশিক্ষণ দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সিএসপি কর্মকর্তাদের জন্য এ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছিল এক বছর মেয়াদের। সেক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা- জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে তা ঠিকমতো দিতে পারছি না। বাড়াবো কী করে? বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছাড়াও প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বর্তমানে প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির আইন ও প্রশাসন কোর্স। এ কোর্সের মেয়াদকাল চার মাস। এর পরে রয়েছে ‘সার্ভে এ্যান্ড সেটেলমেন্ট’ কোর্স। এর মেয়াদকাল দুই মাস। আর পুরুষ কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি কোর্স। এ কোর্সের মেয়াদ মাত্র ২৮ দিন। সিএসপি কর্মকর্তাদের এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল সব মিলিয়ে দুই বছর। এর মধ্যে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছিল এক বছর মেয়াদের। এছাড়া ‘সার্ভে এ্যান্ড সেটেলমেন্ট’ কোর্স এবং মিলিটারি একাডেমি কোর্সের মেয়াদ ছিল বাকি এক বছর মেয়াদের। তখন বিসিএস একাডেমিও ছিল না। আর ছিল না এ কোর্সও। তবে এক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণেই কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ করে তুলত। কিন্তু বর্তমানে দায়সারা গোছের প্রশিক্ষণ হয় এ কোর্সে। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা বলেন, তখন মোট কর্মকর্তাদের সংখ্য হতো ৩০ থেকে ৪০। তাদের দীর্ঘ সময় ধরে ভালভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হতো। কিন্তু বর্তমানে এক বিসিএসে প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়ে থাকেন, যে কারণে আগের মতো দীর্ঘ সময় ধরে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হয় না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এছাড়াও প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ৫০ কর্মকর্তার বিদেশে এমএস করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি আরও ২০ কর্মকর্তা বিদেশে ডিপ্লোমা করতে পারেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এছাড়া কেউ অন্য কোন ডিগ্রী নিতে চাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সরকারের অনুমতি নিয়ে তা সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু এ সংখ্যাও সীমিত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আগের তুলনায় এখন প্রশিক্ষণের মান বেড়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বর্তমান অনেক কর্মকর্তার মধ্যে ইংরেজী জ্ঞানের ঘাটতি আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, আগে ইংরেজী মিডিয়ামে পড়াশোনা করত। সঙ্গত কারণে তাদের ইংরেজীতে বেশি দখল ছিল। এছাড়া বর্তমানে অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজী চর্চা কম হয়। এ ঘাটতি মেটাতে ট্রেনিংয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সকল প্রশিক্ষণ ইংরেজী মাধ্যমে করা হচ্ছে। ম্যাট (ম্যানেজিং এ্যাট দ্য টপ) ট্রেনিংটা খুবই কার্যকর ছিল। সূত্র জানায়, সিএসপিদের নিয়োগের সময় মোট এক হাজার ছয় শ’ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হতো। এ প্রক্রিয়া চলে ৮২ রেগুলার ব্যাচ পর্যন্ত। এ সময় বাংলা ও ইংরেজীতে এক শ’ নম্বরের রচনা লিখতে হতো। এতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা যাচাইয়ের পাশাপাশি তার বাংলা-ইংরেজী ভাষাগত জ্ঞানের পরিমাপ পাওয়া যেত। যার সুফল তৎকালীন কর্মকর্তাদের কাজের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে এসেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সিএসপিদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। এর মধ্যে সামসুল হুদা, শরিফুল ইসলাম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এছাড়া মাহে আলম, মোফাজ্জল করিমসহ অনেকেই শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে অনেককেই দেখা গেছে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতায় ফিরে গেছেন। তৎকালীন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মেধা যাচাইয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তা লোপ পেয়েছে। এটা বেশ কার্যকরী ছিল। এতে বাংলা ও ইংরেজী ভাষাগত জ্ঞান যাচাইটা ভাল হয়। তিনি বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় ইংরেজী ও বাংলায় এক শ’ নম্বর করে রচনা লেখার ব্যাপারে সচিব কমিটিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এখন এটি পিএসসির ব্যাপার। তবে এটি অন্তর্ভুক্ত হলে ভাল হবে। ৮২ বিশেষ ব্যাচের পরীক্ষা ছিল মাত্র তিন শ’ নম্বরের। এর মধ্যে দুই শ’ নম্বর ছিল মৌখিক পরীক্ষা এবং বাকি এক শ’ নম্বরের ছিল টিক মার্কের উত্তর। প্রকৃতপক্ষে সারাদেশে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকরি দেয়ার জন্য একসঙ্গে সারাদেশের ৬৫০ কর্মকর্তাকে ওই ব্যাচে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই পরীক্ষায় বাবা-ছেলে একত্রে পরীক্ষা দেন। ৪০-৫০ বছর বয়সেও ওই ব্যাচে ঢুকে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট বনে যান। তাদের চাকরির শর্তই ছিল শুধুমাত্র উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকরি করবেন। কিন্তু ওই শর্ত লঙ্ঘন করে বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে তারা পদোন্নতি নিতে থাকেন। যদিও ওই ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তাই অবসরে চলে গেছেন। এর পর থেকে বিসিএসের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে বারবার। এর পর থেকে অর্থাৎ ৮৪ থেকে শুরু হয়েছে মোট এক হাজার এক শ’ নম্বরের পরীক্ষা। প্রশ্নপত্র নিয়ে অনেকে বলেন, এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হয়ে থাকে এসএসসি স্ট্যান্ডার্ড। এর পরও বারবার বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। তদ্বির হয়েছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য। বিগত চারদলীয় জোট আমলে রোল নম্বর দিয়ে পাস করানোর নির্দেশও দেয়া হয়েছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য গঠিত কমিটিকে। ২০০৫ সালে এ জাতীয় ঘটনা ঘটে, যা জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। এ সময় মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের এক সভাপতি যুগ্ম-সচিব ক্ষোভে বোর্ড থেকে চলে আসেন। এমনই এক পরীক্ষার্থীকে পাস করাতে নির্দেশ দেয়া হয় যে, ওই প্রার্থী ‘সে যায়’ ইংরেজীটাও শুদ্ধ করে বলতে পারে না বোর্ডে গিয়ে। এ জাতীয় নানা কারণে মানের অবমূল্যায়ন শুরু হয়েছে। বেড়েছে ব্যাচের কলেবরও। বড় বড় ব্যাচের কারণে প্রশাসন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বিসিএস পরীক্ষার নম্বর কমানো এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনায় বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া, কৃষিবিদসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিভাগের ছাত্ররা বিসিএসে অপেক্ষাকৃত বেশি ঢুকে পড়তে শুরু করে। এদের অনেকেরই বাংলা ও ইংরেজী ভাষার ওপর ভাল দখল না থাকায় ভাষাগত জটিলতায় আলাপ করুণ কালচার বেড়ে গেছে জনপ্রশাসনে। মূলত এ জাতীয় অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, ভাষাগত সঠিক জ্ঞান না থাকায় তারা যথাযথভাবে ফাইল নোট দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে ইংরেজী লেখা কোন ফাইল পড়ে নোট দিতে গেলে এ জাতীয় কর্মকর্তা প্রায়ই উর্ধতন কর্মকর্তার ধমক খেয়ে থাকেন। এ জাতীয় কর্মকর্তা যারা রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি পেয়েছেন তারা শুধু কাউন্টার স্বাক্ষর দিয়েই ফাইল ছেড়ে দেন। বাদ সাধে বিদেশীদের সঙ্গে কোন দরকষাকষির ক্ষেত্রে। ইংরেজী ভাষা জ্ঞান ভাল না থাকায় বিদেশীরা যা বলেন তাতেই সায় দিয়ে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় না নিয়ে নিয়োগ দেয়া এবং বিসিএসে বিভিন্ন কোটা পদ্ধতি বহাল থাকায় প্রশাসনে দিন দিন দুর্নীতি বাড়ছে। নিম্নপর্যায়ের কিছু কিছু লোক বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার পর তাদের পরিবারের চাহিদার দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখা গেছে। এরা নিজের বাড়ি পাকা করা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের চাকরি প্রদানে নিজেকে বেশি নিয়োজিত করে থাকেন। ব্রিটিশ আমলে এ চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বংশমর্যাদা দেখা হতো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রশাসনকে দক্ষ ও গতিশীল করতে হলে প্রশাসনের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। এ লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদীর মধ্যে যোগ্য ও সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক স্থানে পদায়ন করতে হবে আর মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় কর্মকর্তাদের ওপর দলীয়করণের প্রভাব কমিয়ে শূন্যের কোটায় আনতে হবে। এ প্রভাবমুক্ত করতে হলে সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠন করতে হবে। সকল কর্মকর্তা এ কমিশনের অধীনস্থ থাকবে। কর্মকর্তাদের মেধার প্রাধান্য দিতে হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে তাদের পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ জন্মাবে। কাজে কোন কর্মকর্তা ভুল করলে তার দায়দায়িত্ব তাকে বহন করতে হবে। ফাইল নির্ধারিত গ-িতে শেষ করতে হবে। দায়িত্ব এড়াতে অহেতুক কোন ফাইল উর্ধতন কর্মকর্তা বা মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো যাবে না। অর্থাৎ যে লেভেলে যে ফাইল নিষ্পত্তি করার কথা সেখানেই তা নিষ্পত্তি করতে হবে। বিভিন্ন কোটার কারণেও অপেক্ষাকৃত স্বল্প মেধার লোক সিভিল সার্ভিসে ঢুকে পড়ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে সিভিল সার্ভিসে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন কোটা কমিয়ে আনতে হবে। সর্বোপরি বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন এবং প্রশ্নপত্রের ধরন বদলাতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীদের খুঁজে নিয়োগ দিতে হবে। ইংরেজী মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা বা ইংরেজীতে ভাল দখল আছে এমন প্রার্থীদের সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিয়োগের পর তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশাসনের সংস্কারের জন্য নানাবিধ উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তার কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি। রাজনৈতিক সরকারগুলো ক্ষমতায় এসে প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। আস্তে আস্তে তা চলে যায় হিমাগারে। প্রশাসনকে গতিশীল করতে নেয়া ৯০ শতাংশেরও বেশি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয় না। নেতাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকা, প্রভাবশালী আমলাদের অনীহা, সিভিল সোসাইটি প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে কথা না বলা এবং জনগণ কথা বললেও তাদের কোন ফোরাম না থাকায় এ প্রস্তাবসমূহ শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক আমলের অধিকাংশ সুপারিশ এ আমলে যাচাই-বছাই করে জনপ্রশাসন (সংস্থাপন) মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ক্যারিয়ার প্লানিংয়ের বেশি জোর দেয়া হয়। কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রত্যেকের জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক প্রস্তাব তৈরি করা হয়। এছাড়া বিগত আমলের বির্তকিত পদোন্নতি বিধিমালা সংশোধনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়। সিভিল সার্ভিস এ্যাক্ট চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে হিমাগারে ঢুকে পড়ে। পাশাপাশি ক্যাডার বৈষম্য কমিয়ে আনতে ক্যাডারের সংখ্যাও কমিয়ে আনার প্রস্তাব তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র, আনসার, কাস্টমস এ্যান্ড ডিউটি, অডিট এ্যান্ড এ্যাকাউন্টস ফ্যামিলি প্লানিং, পাবলিক ওয়ার্কার্স ক্যাডারকে ঠিক রাখার সুপারিশ তৈরি করে। ফুড, কো-অপারেটিভ, ফরেস্ট, ট্রেড এবং পোস্টাল ক্যাডারকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ তৈরি করা হয়। এছাড়াও ফিশারিজকে এগ্রিকালচার এবং সাধারণ শিক্ষাকে ও টেকনিক্যাল এডুকেশনকে শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশও তৈরি করা হয়। একই সঙ্গে ইকোনমিক ও স্ট্যাটিসটিকস ক্যাডারকে যুক্ত করে ইকোনমিক ও স্টাটিসটিকস, বোডস এ্যান্ড হাইওয়ে ও পাবলিক হেলথকে যুক্ত করে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডার, টেলিকমিউনিকেশনকে ইনফরমেশন এবং টেলিকমিউনিকেশন নামে নতুন ক্যাডার করাসহ জুডিসিয়ালকে বিলুপ্ত করে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন, রেলওয়ে ট্রান্সপোর্ট এ্যান্ড কমার্শিয়াল এবং রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডারকে রেলওয়ে ক্যাডার করার প্রস্তাব তৈরি করা হয়। কিন্তু এর কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে সরকারী কর্মচারী আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখবে না বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন। তারা বলেন, আইনটিতে বিশেষ শ্রেণীকে সুবিধা দেয়ার কথা বিবেচনায় নেয়ায় এটি অনুমোদনের সুযোগ হারিয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত গ্রহণের পর প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ছিল মন্ত্রণালয়গুলোকে চার গুচ্ছে বিভক্তকরণ। পরে তা আবার ছয়টি গুচ্ছে বিভক্ত করা সুপারিশ করা হয়। সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু এ প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হয় না। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অধিকাংশ সরকারের সময় এই প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া প্রশাসনকে গতিশীল করতে নানা বিধি-বিধান বদল, কর্মকর্তাদের প্রত্যেকের জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, ক্যারিয়ার প্লানিং ডেভেলপ করা- বিশেষ করে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও টেম্পারিং রোধে নতুন এসিআর পদ্ধতি চালু করা, পদোন্নতির নতুন বিধিমালা তৈরি- এতে ছিল পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা নির্ধারণ, পদ শূন্য না থাকলেও নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি প্রদান, কাজের গতি বাড়াতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য সাবেক সচিবদের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন, প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করার জন্য সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠন, প্রশাসনের স্থবিরতা নিরসনে ভিজিল্যান্স টিম গঠন, রিসোর্স পারসনস পুল গঠনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেয়া এর কোন পদক্ষেপই আলোর মুখ দেখেনি। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত অধিকাংশ প্রস্তাব বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রশাসন ক্রমান্বয় গতিহীন ও অস্বচ্ছ হয়ে পড়ছে। প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৭২ সালে গঠন করা প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কমিটি প্রশাসনকে গতিশীল করতে বিস্তারিত সুপারিশ করে। এতে সার্বিক বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কতগুলো বেতন স্কেল করা প্রয়োজন তাও এই সুপারিশে উল্লেখ ছিল। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হলে প্রশাসনের এ হাল হতো না। বিগত বিভিন্ন আমলে প্রস্তাবগুলো নানা কারণে ঝুলে যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে মোজাফফর কমিটি কাজের ধরন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভিন্ন গুচ্ছে (ক্লাস্টার) বিভক্তির প্রস্তাব দেয়। এরপর দীর্ঘ সময় এ নিয়ে সরকারের কোন উচ্চবাচ্য না থাকায় ক্লাস্টারিং প্রথা তৈরির প্রক্রিয়া ঝিমিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্মেশন কমিটি (পার্ক) ২০০০ সালে মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভিন্ন গুচ্ছে বিভক্ত করার জন্য জোরেশোরে কাজ শুরু করে। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই আলোকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সুশাসন বিষয়ে গুড গবর্নেন্স সেল তৈরি করা হয়। দখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয়গুলোকে ৫টি গুচ্ছে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। পরে অনুমোদনের জন্য এটি মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ প্রস্তাবকৃত ৫টির পরিবর্তে মন্ত্রণালয়গুলোকে ৪টি গুচ্ছে বিভক্ত করার অনুমতি দেয়। ২০০৪ সালে অনুমোদন দেয়া এই প্রস্তাবের পর কোন মন্ত্রণালয় কোন গুচ্ছের অধীনে থাকবে তা নির্ধারণ করতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কমিটি ব্যস্ত থাকে ফাইল চালাচালি নিয়ে। এর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ উদ্যোগ নেয়ার পর আবার তা যাচাই-বাছাই শুরু হয়। যাচাই-বাছাই শেষে এবার মন্ত্রণালয়গুলো ৬টি গুচ্ছে বিভক্তের সুপারিশ করে জনপ্রশাসন (সংস্থাপন) মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেটিও আলোর মুখ দেখে না। সিভিল সার্ভিস কমিশনও ঝুলে যায় তখন। প্রশাসনকে গতিশীল করতে জনপ্রশাসন (সংস্থাপন) মন্ত্রণালয় পদোন্নতি ও নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং ক্যারিয়ার প্লানিং রূপরেখা প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব করে ২০০৭ সালের গোড়ার দিকে। এটি বাস্তবায়নের জন্য হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কমিটি একটি উপ-কমিটি গঠন করে দেয়। খসড়া প্রণয়ন করে উপ-কিমিটি এই কমিটির কাছে তা জমা দেয়। কিন্তু রহস্যময় কারণে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এগুলো অগ্রসর না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। ২০০৪ সালে রিসোর্স পারসন্স পুল তৈরির জন্য ২০৬ জনের প্রাথমিক তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করে। কিন্তু রিসোর্স পারসন্স তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দক্ষতার ভিত্তিতে পুল গঠন করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও উপযুক্ত স্থানে তাদের পদায়নের জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এছাড়া ২০০৭ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সিভিল প্রশাসন থেকে ইউএন মিশনে কর্মকর্তা পদায়নের নীতিমালা তৈরির কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ নীতিমালা, সিআর অধিশাখার সঙ্গে এসিআর মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পৃক্ততা করার জন্য নেয়া উদ্যোগসহ বিভিন্ন প্রস্তাব আজও আলোর মুখ দেখেনি। প্রশাসনকে গতিশীল করতে ইতোপূর্বে বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশে অভ্যুদয়ের পর সরকারের জন্য সংগঠন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে গঠন করা হয় প্রশাসনিক পুনর্গঠন কমিটি (এআরসি), সার্ভিস কঠামো গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় প্রশাসনিক ও সার্ভিস কঠামো পুনর্গঠন কমিটি, একই বছর ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় জাতীয় বেতন কমিশন, এরপর সার্ভিস কাঠামো ও বেতন সংক্রান্ত বিষয়াবলী সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে গঠন করা হয় বেতন ও সার্ভিস কমিশন, এরপর ১৯৮২ সালে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/পরিদফতর ও অন্যান্য সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামো পরীক্ষা সংক্রান্ত সামরিক আইন কমিটি গঠন করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সরকারী খাতের সংস্থাসমূহের সংগঠন ও জনবল যৌক্তিকিকরণ। একই বছল ১৯৮২ সালে জেলা/উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত হয় প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৮৪ সালে গঠন করা হয় তৃতীয় বেতন কমিশন, পদোন্নতি বিষয়াবলী সংক্রান্ত বিষয়ে ১৯৮৫ সালে গঠন করা হয় প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি, সিনিয়র সার্ভিস পুল কাঠামোকে (এসএসপি) উদ্দেশ্য করে ১৯৮৫ সালে গঠন করা হয় সিনিয়র সার্ভিস পুল কঠামো পুনর্বিবেচনা সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি, ১৯৮৭ সালে গঠন করা হয় মন্ত্রিপরিষদ উপকমিটি। উদ্দেশ্য ছিল এসএসপি পর্যালোচনা ও পদোন্নতির বিভিন্ন বিষয়, কতিপয় সরকারী দফতর রাখা বা না রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় এ লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয় পরিবর্তিত অবস্থার আলোকে কতিপয় সরকারী দফতর রাখার প্রয়োজনীয়তা পুনঃপরীক্ষা কমিটি, একই বছর ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় চতুর্থ জাতীয় বেতন কমিশন, ১৯৯১ সালে গঠন করা হয় স্থানীয় সরকার পর্যালোচনা কমিশন, ১৯৯৬ সালে গঠন করা হয় পঞ্চম জাতীয় বেতন কমিশন, মন্ত্রণালয়/অধিদফতর ইত্যাদি কাঠামো ও জনবল যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে ১৯৯৬ সালে গঠন করা হয় প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কমিটি (এআরসি), স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে গঠিত হয় স্থানীয় সরকার কমিশন। এরপর ২০০৫ ও ২০০৯ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম পে-কমিশন বাস্তবায়ন করা হয়। এ টি এম শামসুল হক কমিশনের রিপোর্টে সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি ক্রম বিলোপ করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় বস্তুনিষ্ঠতা বাড়ানো (ঐচ্ছিক বিষয় বাদ দেয়া, পৃথক মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা ব্যবস্থা করা), নির্ধাতি মেয়াদে (যোগ্যদের) অটোপদোন্নতি প্রদান করা, মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভিন্ন গুচ্ছে বিভক্ত করা, চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৬০ বছরে উন্নীত করা, কাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, সুশাসনের প্রতিশ্রুতি সম্বলিত একটি বেতন নীতি চালু করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে।
×