স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী স্কুল-কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচিত ১২ হাজার ৬১৯ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথম থেকে দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দুই লাখ ৪৯ হাজার ৫০২ জন প্রার্থী শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে গত ২০ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। একেকজন প্রার্থীর একাধিক প্রতিষ্ঠানে
আবেদন করার সুযোগ থাকায় মোট আবেদনের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৭টি। নির্বাচিতরা এখন সরাসরি স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে যোগ দেবেন।
রবিবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একে মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, উদ্যোগ সফল করতে খুবই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে, খুবই কঠিন কাজ। গোপনীয়ভাবে কাজটা করা হয়েছে। এখানে তদবির বা স্বজনপ্রীতির কোন সুযোগ নেই। নির্বাচিতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কারও কাছে টাকা চাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেউ টাকা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবেন, ঘুষের অপরাধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য নির্বাচিতদের সম্মান রক্ষা করে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এলাকাবাসীও সেভাবে তাকে গ্রহণ করবেন, সহযোগিতা করবেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেনÑ শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান এএমএস আজহারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মনোনীতদের তালিকা এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে (িি.িহঃৎপধ.মড়া.নফ) পাওয়াা যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান, পরিচালনা পর্ষদ ও প্রার্থীরা টেলিটকের এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারছেন। নির্বাচিত প্রার্থীরা কোন্ স্কুল-কলেজে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, তা তাদের এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। মামলার কারণে স্থগিত থাকায় কম্পিউটার বিষয়ের এক হাজার ৯৫টি পদের বিপরীতে কোন প্রার্থী নির্বাচিত করা হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী তালিকার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নির্বাচন করে দিতে দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও সমপর্যায়ের ছয় হাজার ৪৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪ হাজার ৬৬৯টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের চাহিদার তথ্য এনটিআরসিএতে এসেছিল। মোট আবেদনের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৭টি। গত ১৭ আগস্ট থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থী বাছাই করা হয়। ৭১৮টি পদের বিপরীতে কোন আবেদন পাওয়া যায়নি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৬৮৫টি বাছাই স্থগিত রয়েছে। ২০৪টি মহিলা কোটা পদে কোন আবেদন পাওয়া যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছ, সব ধরনের বিড়ম্বনামুক্ত ও সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। এতে ভাল শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও কোন ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়া নিয়োগ পেয়েছেন।
এদিকে শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘদিনের জট খুলল।
জানা গেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এখন আর কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। এনটিআরসিএ জানিয়েছে, প্রথম থেকে দ্বাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা পর্যন্ত যেসব প্রার্থী আবেদন করেছেন তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তালিকা প্রকাশ করার পর এখন সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়োগপত্র ইস্যু করবে। নিবন্ধন অফিসের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদ, আবেদন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও মহানগর- নানা দিক সমন্বয় শেষে মেধা তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী, দানশীল ও বিশিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের উদ্যোগে দেশে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়ে আসছে। আবহমান কাল থেকে এ ধারা বজায় ছিল। তবে নিয়োগে অব্যাহত অনিয়ম, অর্থ লোপাট, অর্থ নিয়ে অযোগ্যকে নিয়োগসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নিয়োগের লাগাম টানার উদ্যোগ নেয়। ২০০৫ সালে প্রথম নিবন্ধন পরীক্ষা চালু করে।
সর্বশেষ গত বছরের ২১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে কেন্দ্রীয় প্রথা চালুর আদেশ জারি করে। গত বছরের ২১ অক্টোবর থেকে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়। এরপর শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এনটিআরসিএকে সফটওয়্যার তৈরিসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া গ্রহণের নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী এ সংস্থাটি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের আহ্বান জানায়।