ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১০ অক্টোবর ২০১৬

ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডে ছন্নছাড়া ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। সেই ধারাবাহিকতা চলছেই। আফগানদের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ভাল ব্যাটিংয়ের দেখা মিলেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও ভাল ব্যাটিং মিলেছে। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর যখন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিততেই হবে, জিতে সিরিজ বাঁচাতে হবে এমন ম্যাচে এসে আবারও ব্যাটসম্যান ছন্নছাড়া ব্যাটিং প্রদর্শন করেন। মাঝপথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৭৫ রান করে ও শেষে মাশরাফি বিন মর্তুজা যদি ৪৪ রান না করতেন; তাহলে দুই শ’ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করাটাইতো দুরূহ হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৩৮ রান করতে পারে বাংলাদেশ। শুরুটা অবশ্য ভালই হতে থাকে। ৫ ওভার পর্যন্ত দুইজন ভাল ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু ষষ্ঠ ওভার থেকেই যেন নড়বড়ে হয়ে যায় ব্যাটিং। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে দলের ২১ রানের সময় ১০ রান করা তামিম ইকবাল একবার ‘নতুন জীবন’ পান। ক্যাচ আউট থেকে রক্ষা পান। পরের ওভারেই ২৫ রানের সময় আউট হয়ে যান প্রস্তুতি ম্যাচ ও প্রথম ওয়ানডেতে শতক করা ইমরুল কায়েস (১১)। বোঝা হয়ে যায়, বিপদ আছে। ১ রান যোগ হতেই যখন তামিমও (১৪) সাজঘরে ফেরেন, তখন বাংলাদেশ চাপেই পড়ে যায়। ক্রিস ওকসের গতির সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না দুই ওপেনার। দুইজনই যখন এত কম রানে আউট হয়ে যান, তখন দল খাদের কিনারায় পড়বে; এটাই স্বাভাবিক। পড়েও যায়। সেই খাদ থেকে দলকে টেনে তুলবেন কি, উল্টো ৩৯ রানে মাত্র ৩ রান করেই সাজঘরে ফেরেন সাব্বির রহমান রুম্মন। এরপর দুই ‘ভায়রা-ভাই’ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহীম মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ১৬ ওভারে যখন পানি বিরতি দেয়া হয়, তার আগেই দুইজন মিলে দলকে ৫০ রানে নিয়ে যান। ১৭তম ওভারে এসে নিজের স্কোরবোর্ডে ১১ রান জমা করেন মুশফিক। চার হাজার রান থেকে আর এক রান দূরে থাকেন। ওভারের শেষ বলে ১ রান নিয়ে তামিম ও সাকিব আল হাসানের পর দেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪ হাজার রান পূরণ করেন মুশফিক। কিন্তু এরপর খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারলেন না। দলের প্রয়োজন হচ্ছে। আর মুশফিক ব্যর্থ হয়েই চলেছেন। এবার ২১ রান করে দলের ৮৯ রানের সময় আউট হয়ে যান মুশফিক। দুইজনের জুটিও ৫০ রানের বেশি এগিয়ে যেতে পারেনি। তবে মাহমুদুল্লাহ ঠিকই উইকেট আঁকড়ে থাকেন। দল ১০০ রানের বেশি করে ফেলে। সেই সময় মাহমুদুল্লাহ ক্যারিয়ারের ১৬তম অর্ধশতক পেয়ে যান। এক মাহমুদুল্লাহই ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়তে থাকেন। বাকিরা শুধু আসা যাওয়ার মিছিলেই সামিল হন। সাকিবও যেমন, স্টোকসের করা লেগ সাইডের বাইরের বলটি খেলবেন কি খেলবেন না, এই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন। শেষে বল ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু বলটি গ্লাভসে লেগে উইকেটরক্ষক বাটলারের হাতে যায়। ক্যাচ ধরে ফেলেন বাটলার। ১১৩ রান হতেই সাকিবও (৩) সাজঘরে ফেরেন। ৫ উইকেট হারিয়ে ভুগতে থাকে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত মিলে এরপর সেই ভোগান্তি দূর করার চেষ্টা করতে থাকেন। ৩৫ ওভারে ১৩০ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে বাংলাদেশ। ক্রিকেটটাই এমন। একটি জুটি কিংবা একটি-দুটি ভাল শট; খেলার মুহূর্তকেই পরিবর্তন করে দিতে পারে। ‘মোমেন্টাম’ ধরা দিতে পারে। ২৮তম ওভারের শেষ বলে সাকিব আউট হওয়ার পর টানা সাত ওভারে মাত্র একটি বাউন্ডারি আসে। সেটি ৩৩তম ওভারের চতুর্থ বলে গিয়ে মোসাদ্দেক হাঁকান। এরপর ৩৬তম ওভারে দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মোসাদ্দেক যেন ‘মোমন্টে’ই তৈরি করে দিলেন। মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেক মিলে ধীরে ধীরে এতক্ষণ এগিয়ে যেতে থাকেন। মোসাদ্দেক দুইটি বাউন্ডারি মারতেই আত্মবিশ্বাসও যেন বেড়ে যায়। ৩৮তম ওভারে গিয়ে ১৫৪ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে যায়। এ উইকেট জুটি ভাঙ্গতেই হবে। তা যে করেই হোক। এমনই ভাব ইংলিশদের। আর তাইতো ২৪ রানে থাকা মোসাদ্দেকের পায়ে বল লাগতেই আউটের আবেদন করেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। হাতে থাকা রিভিউও নেন। কিন্তু পায়ে বল লাগার আগে ব্যাট স্পর্শ করে বল। তাই আম্পায়ার যে আগেই আউট না বলে দেন, সেটিই সঠিক প্রমাণিত হয়। কিন্তু দুঃখ ঘিরে ধরে আরেকদিকে। সেই রশিদই এবার মাহমুদুল্লাহকে এলবিডাবলিউ করে দেন। ৪০তম ওভারে রশিদের করা চতুর্থ বলটি মাহমুদুল্লাহর প্যাডে লাগে। আউট চান। আম্পায়ারও আউট দেন। কিন্তু আউট নাও হতে পারে। ব্যাটে স্পর্শ করতে পারে বল। এ সম্ভাবনা থেকে ‘রিভিউ’ নেয়া হয়। কিন্তু এবার বাংলাদেশের রিভিউও বিফলেই যায়। রিপ্লেতে ধরা পড়ে যায় সরাসরি প্যাডেই লাগে বল। তাতে দলকে ১৬১ রানে রেখে আউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করা মাহমুদুল্লাহকে। সাজঘরে ফেরার আগে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়েন এবং ৮৮ বলে ৬ চারে ৭৫ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। এরপর ব্যাট হাতে নামেন নাসির হোসেন। যাকে নিয়ে অনেক আশা করা হয়। মোশাররফকে একাদশ থেকে ছেটে ফেলে নাসিরকে নেয়াও হয়। প্রথম বলেই ড্রাইভ করে কাভার দিয়ে ২ রান নেন। দুইজন মিলে এগিয়ে যাবেন কি, মোসাদ্দেকও (২৯) আউট হয়ে যান। ১৬৯ রানেই ৭ উইকেট পড়ার পর মনে করা হয় ২০০ রানও হয়তো স্কোরবোর্ডে যোগ হবে না। পরে যে ব্যাটসম্যান হিসেবে নাসিরের সঙ্গে থাকেন বোলাররা। কিন্তু মাশরাফি ব্যাট হাতে নেমে একের পর এক ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। দ্রুতই দুই শ’ রান হয়ে যায়। ৪৩তম ওভারে মঈন আলীর করা প্রথম ও শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন! ৪৫তম ওভারে ওকসের একটি বলেও বাউন্ডারি হাঁকান। দলের রান হু হু করে বাড়তে থাকে। ৪২ ওভারে ১৭০ রানে থাকে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৪৬ ওভারের তৃতীয় বলেই ২০০ রান হয়ে যায় বাংলাদেশের। উইলির করা বলটিতে লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে দুই শ’ রানে নিয়ে যান মাশরাফি। কি যে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নাসির নন স্ট্রাইক সামলান। আর মাশরাফি ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলতে থাকেন। ৩৫ বলেই দুইজনের জুটি ৫০ রান করে ফেলে। প্রায় ১০ বছর পর আবার ওয়ানডেতে অর্ধশতক করার আশা দেখান। ২০০৬ সালে যে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬ বলেই অর্ধশতক করেছিলেন, সেইরকম কিছুরই ইঙ্গিত দেন। কিন্তু ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ২৯ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ রান করে রান আউট হয়ে যান মাশরাফি। তবে দলকে ২৩৮ রানে নিয়ে যান। আর কোন রানও হয়নি। সেখানেই থেমে থাকে বাংলাদেশ। নাসির শেষ পর্যন্ত ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। তবে যে স্কোর ২০০ ও হত না, সেই স্কোর যে এত বেশি হয় সেটি মাঝে মাহমুদুল্লাহ ও শেষে মাশরাফির অসাধারণ ব্যাটিংয়েই সম্ভব হয়েছে।
×