ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে’

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১০ অক্টোবর ২০১৬

‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু হে  আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অতিক্রম করেছেন জীবনের সীমানা। পাড়ি জমিয়েছেন ধূসর মৃত্যুরেখায়। তবে এই জীবন ও মৃত্যুর মাঝে রয়েছেন তিনি সৃষ্টির আলোয়। আছেন কাব্যনাটকে, গল্প-উপন্যাসে ও কবিতায়। রয়েছেন শ্রুতিমধুর গানের সুরে কিংবা মননতাড়িত কোন প্রবন্ধের পৃষ্ঠায়। এভাবেই সৃষ্টির বৈভবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েও বিরাজমান সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক। তাঁরই সৃষ্টির আলোয় স্মরণ করা হলো কবিকে। স্মৃতিচারণের সঙ্গে উচ্চারিত হলো তাঁর কাব্যনাটকের অংশ বিশেষ। বলা হলো বিচিত্র বহুমাত্রিক লেখকের ক্লান্তিহীন সৃজনের কথা। তাঁকে নিবেদন করে গাওয়া হলো গান। রবিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। আয়োজনের শুরুতেই কবিকে স্মরণ করে পালিত হয় এক মিনিটের নীরবতা। এরপর মিলনায়তনে ভেসে বেড়ায় তাঁকে নিবেদিত গানের সুরে। অনেকগুলো এক সঙ্গে গেয়ে শোনায়Ñ জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে, বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে ...। গানটি পরিবেশন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদারের সূত্র ধরে স্মরণের আয়োজনটিতে পঠিত হয় ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ কাব্যনাটকের কিছু সংলাপ। শিল্পীর স্বতঃস্ফূর্ত কণ্ঠের সঙ্গে অভিব্যক্তির আশ্রয়ে কয়েক মিনিটের পরিবেশনাটির মাধ্যমে না থেকেও হৃদয়ে আলোড়ন তুলে যান সৈয়দ হক। পীরের সঙ্গে মাতব্বরের মেয়ের কথোপকথনটি উপস্থাপিত চমৎকার নৈপুণ্যে। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। কবিকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন নাট্যজন আলী যাকের, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লেখক মফিদুল হক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। সেলিনা হোসেন বলেন, ষাটের দশকে প্রথম সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার সঙ্গে পরিচিত হই। পরবর্তীতে পাঠ করি তাঁর কবি নামের গল্পটি। এই দুই লেখার মাধ্যমেই আবিষ্কার করি একজন শক্তিমান লেখককে। তখন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে আমার সরাসরি পরিচয় হয়নি। কবি গল্পে প্রতিরোধের সাহিত্য রচনা করেছেন তিনি। যে ধারা রচনা করেছিলেন, সেটি সঠিক পথ দেখিয়েছিল জাতিকে। তাঁর ‘রক্ত গোলাপ’ গল্পটি জাদু বাস্তবতার এক অনন্য উদাহরণ, যা পাঠকের চিন্তার সুরঙ্গকে ধাবিত করে বিভিন্ন পথে। এভাবেই সাতচল্লিশ পরবর্তী ধারায় যারা বাংলা সাহিত্যের শক্তি ও শিল্পমান প্রতিষ্ঠা করেছেন সাহিত্যের স্রোতধারায়, যারা জাতির দিক নির্ধারণ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ শামসুল হক অন্যতম। মফিদুল হক বলেন, তাঁর কবিতা, গল্পে উঠে এসেছে অসাধারণ নগর বন্দনা, তরুণ মনের আকুতি-দ্বন্দ্ব। হক ভাই আমাকে বলতেন, আমাদের ভাষাবোধকে ধারণা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী প্রেক্ষাপট নিয়ে বলতেন, ভাষা আন্দোলনের পর আমরা যে বাংলায় লিখলাম, তাও একটা যুদ্ধ। এভাবে তাঁর জীবন সাধনায় যুক্ত হয়েছিল ভাষাবোধ । সৈয়দ শামসুল হকের আরেক কালজয়ী কাব্যনাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ এর নির্দেশক ও প্রধান অভিনেতা আলী যাকের স্মৃতিকাতর হয়ে বলেন, আমার অভিনীত কোপিনিকের ক্যাপ্টেন মঞ্চনাটকটি দেখে এসে তিনি একদিন আমার হাতে ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ এর চিত্রনাট্য তুলে দিলেন্। বিশাল বড় সম্মান হাতে তুলে নিলাম হতভম্বের মতো। আমার কাছে মনে হয়, আসল নূরলদীন ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। আলী যাকের সৈয়দ শামসুল হককে বাংলার মঞ্চনাটকে দ্বিজ শিল্পকর্মের জনক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাঁর প্রতিটি নাটকে আমি নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। নাটকের ঘটনাপ্রবাহ যেন তিনি দেখতে পেতেন দিব্য চোখে, তাইতো তিনি এ ধরনের সংলাপ, নাটক তৈরি করেছেন অবলীলায়। নূরলদীনের সারাজীবন নাটকের বিষয়বস্তু ও সংলাপের ধরনটাই এমন যে এটাকে যে কোন অভিনেতা ধারণ করতে পারেন তাহলেই তিনি উৎরে যাবেন অভিনেতার মাপকাঠিতে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ হকের মূল পরিচয় তিনি সাহিত্যিক ছিলেন। সাহিত্যের প্রতি তাঁর যে নিবেদন, তা খুব কম পাওয়া যায়। সারাক্ষণ অতৃপ্তিতে ভুগতেন তিনি, যা তাঁকে সর্বদা ব্যস্ত রেখে সাহিত্যকর্ম সৃষ্টিতে। সৈয়দ শামসুল হক যা কিছু স্পর্শ করেছেন, তাই সজীব করে তুলেছেন। অত্যন্ত সাহসী মানুষটির সাহিত্যের প্রতি যে ভালবাসা দেখেছি তাতে কোন খাদ ছিল না। আচরণে তিনি ছিলেন আধুনিক। বিশ্ব ধ্রুপদী সাহিত্যকে তিনি নিয়ে এসেছেন আমাদের মাঝে। আলোকচিত্রে রাঙ্গামাটির নিসর্গ ॥ শতাধিক আলোকচিত্রে ফুটে উঠেছে রাঙ্গামাটির অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ফ্রেমবন্দী আলোকচিত্রগুলো দেখে এক ধরনের রাঙ্গামাটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও হতে পারে আপনার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি-২ এ রবিবার বিকেলে শুরু হয়েছে ‘নৈসর্গিক লীলাভূমি রাঙ্গামাটি’ শীর্ষক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এটি আলোকচিত্রী শামীমুল আহসানের দ্বিতীয় একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। মুনতাসির ট্যুরিজম ক্লাবের উদ্যোগে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ‘দৈনিক রাঙ্গামাটি’ নামক রাঙ্গামাটির একটি স্থানীয় পত্রিকা। সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীতে রয়েছে ১২১টি আলোকচিত্র। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এক দশকেরও বেশি সময়ে এসব আলোকচিত্র ধারণ করা হয়েছে। বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্র শিক্ষক ও লেখক রফিকুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি জেলা শাখা বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান প্রমুখ। সভাপতি ছিলেন দৈনিক রাঙ্গামাটির প্রকাশক জাহাঙ্গীর কামাল। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উš§ুক্ত থাকবে।
×