ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চসিকের ২২২৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১০ অক্টোবর ২০১৬

চসিকের ২২২৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসন, ক্লিন ও গ্রীন সিটি বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বৃদ্ধির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ২২২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। রবিবার দুপুরে কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে এ বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। একইসঙ্গে তিনি পূর্ববর্তী অর্থবছরের ৫৯২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটও ঘোষণা করেন। এ সময় মেয়র নগরীর উন্নয়ন ও নগরবাসীর জীবনমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬৬ দফা কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন। ঘোষিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১১৫৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং ত্রাণ সাহায্য, উন্নয়ন অনুদান ও অন্যান্য উৎস থেকে ১০২৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় দেখানো হয়েছে। অপরদিকে, সবচেয়ে বেশি ২৭৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক বাবদ। এছাড়া মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ৯৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ভাড়া কর ও অভিকর খাতে ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, বিদ্যুত, জ্বালানি ও পানি খাতে ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং কল্যাণমূলক ব্যয় হিসাবে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। কর্পোরেশনের ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত এই পাঁচটি। ব্যয় নির্বাহের জন্য আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে রাখা হয়েছে হাল কর ও অভিকর। এ খাতে ৫৫০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা আয় হবে বলে বাজেটে দেখানো হয়। এছাড়া বকেয়া কর ও অভিকর থেকে ২৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং অন্যান্য করাদি থেকে ২২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা আয় হবে বলে ধরা হয়। আয়ের সবচেয়ে বড় এ তিনটি খাত থেকেই আসবে বাজেট বাস্তবায়নের বড় একটি অংশ। ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম। উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং সিটি কর্পোরেশনের সকল বিভাগের দায়িত্বশীল উর্ধতন কর্মকর্তাগণ। বাজেট বক্তৃতায় চসিক মেয়র তুলে ধরেন চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন, নাগরিক সেবা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার গৃহীত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা। তিনি বলেন, নগরবাসীর সহযোগিতা নিয়ে প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার একে একে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তার বক্তব্যে জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে নগরীর ২৬ খাল খনন ও সংস্কার, গ্রীন ও ক্লিন সিটি বাস্তবায়নে ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহ, নগরীর সড়কদ্বীপগুলোর সবুজায়ন, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার এবং আলোকায়ন সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। কর্পোরেশনের ব্যয় নির্বাহের জন্য পরমুখাপেক্ষী না থেকে নিজস্ব উৎস থেকে আয় বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দেন মেয়র। বাজেট বক্তৃতায় মেয়র বলেন, ১৯৮৮ সালের অনুমোদিত জনবল কাঠামো দিয়েই চলে আসছিল সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এর মধ্যে শহরের পরিধি ও জনসংখ্যা বেড়েছে, কাজ বেড়েছে কিন্তু জনবল বৃদ্ধির পরিবর্তে বরং আরও কমে যায়। ৬০ লাখ নাগরিকের সেবা প্রদান করা এই জনবল দিয়ে কঠিন হয়ে পড়ে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জনবল ২ হাজার ৩৪৭ জন বৃদ্ধিও জন্য জনপ্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়। মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৪৬ পদ সৃজনে সম্মতি প্রদান করেছে। বর্তমানে চসিকে ৭ হাজার ৪৯১ স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মকর্তা কর্মাচরী নিয়োজিত রয়েছেন। অস্থায়ী কর্মচারীদের ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাদের উৎসব বোনাস ও বৈশাখী ভাতাও কার্যকর করা হয়েছে। তিনি জানান, ডোর টু ডোর গমন করে বিন এর মাধ্যমে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য আরও ২ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কর্পোরেশনের শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে চসিকের অধীনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, দুটি অনার্স কলেজ, ৭ ডিগ্রী কলেজ, ১৪ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, ৪৭ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি ইংলিশ মিডিয়ামসহ ৭টি কিন্ডার গার্টেন, ৭ প্রাথমিক, একটি কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ৫ কম্পিউটার কলেজ, একটি থিয়েটার ইনস্টিটিউট, একটি শিক্ষক কেন্দ্র, চারটি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র ও ৩৫০ ফোরকানিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে মেডিক্যাল অফিসারসহ জনবল বাড়ানো হয়েছে। দুস্থ ও দরিদ্রসহ আপামর জনসাধারণের চিকিৎসা সেবা সুলভ করতে হাসপাতালসমূহের বহিঃবিভাগে রেজিস্ট্রেশন ফি ৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চসিক জেনারেল হাসপাতালকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে, চালু করা হয়েছে চক্ষু বহিঃবিভাগ ও ১০ শয্যাবিশিষ্ট বার্ণ ইউনিট। মাতৃসনদ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাসমূহের চিকিৎসা ফি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। চসিকের উদ্যোগে একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন ও মেমন মাতৃসনদ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে এনআইসিইউ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে মেয়র উল্লেখ করেন। নগরীর উন্নয়নে তিনি ৩৬ দফা কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামকে গ্রীন ও ক্লিন সিটিতে পরিণত করা, ছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলাদের জন্য ২০টি এসি বাস চালু, জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে প্রস্তাবিত ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন, যানজট নিরসনে বাস-ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন, কালুরঘাটে গার্মেন্টস পল্লী স্থাপন, অত্যাধুনিক নগর ভবন নির্মাণ, চট্টগ্রামে পর্যটনের উন্নয়ন, জাইকার সহায়তায় অত্যাধুনিক সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন, নগরীর পাহাড়সমূহকে পরিকল্পিত উন্নয়নের আওতায় এনে বিনোদন-পর্যটন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আবাসন সুবিধা হিসাবে গড়ে তোলা, কর্পোরেশন এলাকায় ছাব্বিশটি খাল খনন ও প্রয়োজনীয় পাম্প হাউসসহ সøুইচগেট নির্মাণ, পতেঙ্গা হতে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সমুদ্র সৈকত উন্নয়ন, বিশেষ রুটে কমিউটার ট্রেন, প্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার নির্মাণ, নগরীর সব সড়ক বাতিকে এলইডি বাতিতে রূপান্তর এবং সাগরিকাস্থ টিউবলাইট কারখানাকে এলইডি বাতি কারখানায় রূপান্তর। তিনি সরকার ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার বরাদ্দ ও কর্পোরেশনের নিজস্ব উৎসে অর্জিত অর্থ ও নগরবাসীর আন্তরিক সহায়তায় এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×