ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৪১ ভাগ সক্ষম হলেও সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজে নারী নেতৃত্ব ৬ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১০ অক্টোবর ২০১৬

৪১ ভাগ সক্ষম হলেও সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজে নারী নেতৃত্ব ৬ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজে নারী নেতৃত্ব ৬ শতাংশ, যা গতানুগতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে ১ শতাংশ বেশি। নারীরা সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের ফুলটাইম কাজে ৪১ শতাংশ সক্ষম যা কিনা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ফুলটাইম কাজের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে বাংলাদেশে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ থেকে বার্ষিক গড় আয় ২ দশমিক ১ মিলিয়ন টাকা এবং আগামী অর্থবছরে এ খাতে এর পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পাবে। ‘দি স্টেট অব সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ পলিসি ল্যান্ডস্ক্যাপ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রকাশিত এক জরিপ রিপোর্ট এ তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশী সোশ্যাল এন্টাইপ্রাইজগুলো বেশিরভাগই কম সময়ে প্রতিষ্ঠিত এবং এগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণরা। জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭৯ শতাংশ সোশ্যাল এন্টাইপ্রাইজের নিবন্ধন ২০০৯ সালের মধ্যে এবং বেশিরভাগ নেতৃত্বদানকারীর বয়স ৩৫ বছরের কম। প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব এ খাতের বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া অর্থনৈতিক সঙ্কট, সচেতনতা এবং অর্থের নগদ প্রবাহের স্বল্পতা সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের ওপর দক্ষতার স্বল্পতাও আরও একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত। রবিবার রাজধানীর এক হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের নেতৃত্বে এবং বেটারস্টোরিজ, ইউএন লিঃ ও সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইউকের সহায়তায় বাংলাদেশের ওপর পরিচালিত জরিপের রিপোর্ট তৈরি করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। ‘দি স্টেট অব সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। একই সঙ্গে কোন খাতে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজসমূহ বেশি এবং সুবিধাভোগীদের সহায়তা করছে তা প্রকাশিত হয়েছে। এই রিপোর্টে বাংলাদেশের সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের কার্যক্রম, সুবিধাভোগী বাণিজ্য, কর্মী ইত্যাদি সম্পর্কে গুণগত ধারণা প্রদানে সাহায্য করবে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রিপোর্টে ঘানা, ভারত ও পাকিস্তানের সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ সম্পর্কেও একই ধারণা পাওয়া যাবে। ‘সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ পলিসি ল্যান্ডস্ক্যাপ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টের মাধ্যমে এ খাতের ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট বুঝতে সহায়তা করবে বলে আশা করে ব্রিটিশ কাউন্সিল। কাউন্সিল বলছে, সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ হচ্ছে একটি ব্যবসা যেখানে সামাজিক উদ্দেশ, উদ্বৃত্ত সামাজিক উদ্দেশে পুনঃবিনিয়োগের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়ে থাকে। মালিক ও অংশীদারদের জন্য শুধু মুনাফা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব না দিয়ে সামাজিক কর্মকা-ের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করাই হচ্ছে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ বর্তমানে ক্রমবর্ধমান এবং গতিশীল একটি খাত। সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণসহ সমাজের অনেক ছোট-বড় সমস্যা নিয়ে কাজ হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ খাতটির প্রতিনিয়ত উন্নয়ন ঘটছে। দেশের মোট সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই বয়স কম-বেশি ছয় বছর। সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ভালভাবে প্রভাব বিস্তার করছে উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, শিক্ষা এর মধ্যে একটি যদিও সেখানে লিঙ্গ বৈষম্য বিদ্যমান। জরিপে দেখা গেছে, নারীদের তুলনায় পুরুষ নেতৃত্ব সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজে বেশি। মাত্র ৬ শতাংশ নারী নেতৃত্বে সেখানে পুরুষের নেতৃত্ব ৩৯ শতাংশ। মোট ১৪৯টি প্রতিষ্ঠান এ জরিপে অংশ নেয়। জরিপের গণনা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজারটি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের আয়তন, বিস্তৃতি ও প্রভাব কতখানি তা নির্ণয় করতে এটিই প্রথম পদক্ষেপ। ব্রিটিশ কাউন্সিল বলছে, এই জরিপের মাধ্যমে পুরো দেশের সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের অবস্থা বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে আরও বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিপূর্ণ গবেষণার জন্য এটি সহায়ক উপকরণ হিসেবে কাজ করবে। অন্যরা এ বিষয়ের ওপর জরিপ করতে গেলে এটির ওপর ভিত্তি করে পরিচালনা করতে পারবে এবং এর পাশাপাশি আগামী তিন বছরে ব্রিটিশ কাউন্সিল নিজেদের পরবর্তী জরিপ পরিচালনা করতে পারবে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের গ্লোবাল হেড সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ মেইরি ম্যাকে বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং ঘানায় পরিচালিত জরিপে সহায়তার মাধ্যমে জানা গেছে, উক্ত খাতটির প্রতিবন্ধকতা, সুযোগ, গুরুত্ব এবং কিভাবে এর বৃদ্ধি সম্ভব তা শনাক্ত করা গেছে।
×