ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয়ণ প্রকল্প ॥ নির্মাণের পর ঘর মেরামত হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১০ অক্টোবর ২০১৬

আশ্রয়ণ প্রকল্প ॥ নির্মাণের পর  ঘর মেরামত হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ব্যারাকের ঘর ব্যবহার ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নির্মাণের পর থেকে কোন মেরামত ও সংস্কার না করায় ঘরগুলোর এ্যাঙ্গেল-পাত, নাট-স্ক্রুসহ লোহার উপকরণে মরচে ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। সিমেন্টের পিলার ভেঙ্গে পড়ছে। টিনের চালে অজস্র ছিদ্র। বেড়া খুলে পড়েছে। দরজা-জানালা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অনেক ঘর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তাতে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাসে ঘরগুলো দুমড়ে-মুচড়ে জীবনহানি ঘটানোর মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে সাগরপাড়ের এ জনপদের আশ্রয়হীন মানুষের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ এখন অনেকের কাছে বোঝা। অনেকেই ব্যারাক ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে ঠাঁই নিয়েছে বেড়িবাঁধে। আবার কেউ কেউ পাড়ি জমাচ্ছে শহরে। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা মাঠে মারা যেতে বসেছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬-৯৭, ২০০০-০১ ও ২০০৫-০৬ অর্থবছরে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৭৯টি ব্যারাকে মোট এক হাজার ৭৯০টি ঘর নির্মিত হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এরমধ্যে ১১২টি ব্যারাকের এক হাজার ১২০টি ঘর বসবাসের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এর মধ্যে রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের বাহেরচর আশ্রয়ণে এক শ’ ঘরের মধ্যে ৩০টি এবং কাজীর হাওলা আশ্রয়ণের ৬০টি ঘরের মধ্যে ২০টি, বড় বাইশদিয়া ইউনিয়নের কুদ্দুসনগর আশ্রয়ণে দুই শ’ ঘরের মধ্যে ১২০টি, চরগঙ্গা-১ আশ্রয়ণে ১২০ ঘরের মধ্যে ৮০টি, চরগঙ্গা-২ আশ্রয়ণে ৮০ ঘরের মধ্যে ৫০টি, বড় বাইশদিয়া আশ্রয়ণে ৪০ ঘরের মধ্যে ২০টি, আশাবাড়িয়া আশ্রয়ণে ৮০ ঘরের মধ্যে সবগুলো, জাহাজমারা আশ্রয়ণে ১৫০ ঘরের মধ্যে সবগুলো, ছোট বাইশদিয়া ইউয়িনের তিল্লা আশ্রয়ণে এক শ’ ঘরের মধ্যে ৭০টি, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের পূর্ব চরমোন্তাজ আশ্রয়ণে ২শ’ ঘরের মধ্যে ১শ’টি, চরমোন্তাজ সøুইসগেট আশ্রয়ণে এক শ’ ঘরের মধ্যে ৫০টি, চরমার্গারেট আশ্রয়ণে ২শ’ ১০ ঘরের মধ্যে ১শ’ ৪০টি, চরবেস্টিন মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয়ণে ৮০ ঘরের মধ্যে ৩০টি, চরলক্ষ্মী আশ্রয়ণে এক শ’ ঘরের মধ্যে সবগুলো, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা-১ আশ্রয়ণে ৯০ ঘরের মধ্যে ৪০টি ও চরলতা-২ আশ্রয়ণে ৮০ ঘরের মধ্যে ৪০টি ঘর বসবাসের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নির্মাণের পর থেকে এসব ঘর সংস্কার বা মেরামত না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করছে। কেউ কেউ ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। যারা আছে, তাদেরও চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের কাজীর হাওলা আশ্রয়ণের বাসিন্দা ডালিয়া বেগম বলেন, ঘর ভাইঙা গ্যাছে। এ্যাহোন বৃষ্টির পানি বাইরে পড়ার আগেই ঘরের মধ্যে পড়ে। ঘরের মধ্যে পাতিল পাইত্তা রাখছি। বাহেরচর আশ্রয়ণের বাসিন্দা শিল্পী বেগম বলেন, পোলা-মাইয়া লইয়া কষ্টের মধ্যে এইহানে থাহি। ঝড়-বইন্যা আইলে আল্লারে ডাহা ছাড়া উপায় থাহে না। রাঙ্গাবালী সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন খান জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর আশ্রয়হীন মানুষদের নামে বরাদ্দের পর সরকার কোন দায়-দায়িত্ব নেয় না। এগুলোর মালিকানা যেহেতু হস্তান্তর হয়েছে, সেহেতু দরিদ্ররাই এগুলো সংস্কার ও মেরামত করুক, এটাই নিয়ম। কিন্তু বরাদ্দপ্রাপ্তরা এতটাই হতদরিদ্র যে, তাদের পক্ষে বেঁচে থাকাই যেখানে কষ্টকর, সেখানে তারা মেরামত করতে পারে না। যে কারণে বাহেরচর ও কাজীর হাওলাসহ অন্যান্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে অধিকাংশ বাসিন্দা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করছে। সংস্কারের অভাবে ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। চালিতাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, প্রকল্পের বাসিন্দারা বর্তমানে চরম কষ্টে আছে। স্বচক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরগুলো ভেসে যায়। ইচ্ছা থাকলেও বরাদ্দের অভাবে মানবেতর দিন কাটানো প্রকল্পবাসীর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু করা যায় না।
×