ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

নতুন চ্যালেঞ্জে ব্যাংকিং খাত

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৯ অক্টোবর ২০১৬

নতুন চ্যালেঞ্জে ব্যাংকিং খাত

‘দেশের ব্যাংকিং খাত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এসব ব্যাংকে সুশাসন বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করলেও খুব একটা সফল হতে পারছে না। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো মূলধন সঙ্কটে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারী মালিকানাধীন ৮ ব্যাংকের মধ্যে ৭ ব্যাংকই মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। যেখানে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে মাত্র ৯টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকিং খাতের আর্থিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে যাবে। বিশেষ করে সরকারী ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি খুবই খারাপ। খেলাপী ঋণের উর্ধগতি, ঋণ পুনর্গঠন, ঋণ অবলোকন, ঋণ ও আমানতের উচ্চ সুদহারসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণ কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদরা। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে। বাকি ৬৯ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে। তাছাড়া ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ব্যাংক এ্যাকাউন্টের আওতায় এসেছে ৭০০ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তবে এ সময়ে ২ বিলিয়ন মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানা উদ্যোগের পরও মূলধন ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না সরকারী ব্যাংকগুলো। গত জুনে সরকারী খাতের ৭ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। গত মার্চে ৫ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৩ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকের সংখ্যা ও পরিমাণ উভয় বেড়েছে। নিয়মানুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। জুন শেষে সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ১৪ হাজার ১৭০ কোটি মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হওয়ায় ৬ হাজার ৭১ কোটি টাকা ঘাটতি পড়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৭৭ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো ৭৬ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে ৬৪০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি হয়েছে। দেশের মোট ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৯টি বাদে ৪৭টি ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে মূলধন রাখতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে এই ৯ ব্যাংকের ১৬ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা ঘাটতি হলেও অন্য ব্যাংকের অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ করায় সামগ্রিকভাবে ঘাটতি কমে এসেছে। এছাড়া জুন শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন পর্যাপ্ততার হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। মার্চে এর পরিমাণ আরও বেশি ছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে মূলধন পর্যাপ্ততার হার কমেছে। খেলাপী ঋণ বেড়ে যাবার ফলে খেলাপী ঋণসংক্রান্ত মামলার জট সৃষ্টি হয়েছে। ঋণ পুনর্গঠন হতাশাজনক হারে বেড়েছে। একই ঋণ বারবার পুনর্গঠন করা হচ্ছে। উচ্চ সুদের কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঋণ খেলাপী হওয়ার সংস্কৃতি বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত জবাবদিহি না থাকা ও কাক্সিক্ষত স্বচ্ছতার অভাব সত্ত্বেও সম্প্রসারণশীল ব্যাংক খাত এ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে।
×