ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্মৃতি...

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৯ অক্টোবর ২০১৬

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্মৃতি...

সময়টা খুব বেশিদিনের তা কিন্তু কারও মনেই হয় না অথচ প্রায় চার বছর হতে চলেছে। সেই ২০১১ সালের জানুয়ারিতে মিলিত হয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। উদ্দেশ্য প্রত্মতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করা। সবার চোখেমুখে তখনও ভর্তিযুদ্ধের ক্লান্তির ছাপ। বাবা-মায়ের প্রত্যাশা আমার সন্তান অনেক বড় হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে আমাদের মাঝে স্বপ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছিলাম আমরা। ক্যাম্পাসে প্রথম দিন থেকেই এমনভাবে সবাই সবার সুখ-দুঃখে মিশে গেলাম যে, কেউ কাউকে আগে কখনই যে দেখিনি তা মনেই হয় না। শুরু হলো ক্লাস- পরীক্ষা আর আবাসিক হল জীবন। নিয়মিত ক্লাস, ক্লাসের অবসরে আড্ডা জমিয়ে ক্লাসের ক্লান্তি নিমিষেই ভুলি। একসঙ্গে বটতলার খাবারের দোকানে দুপুরের খাবার সারি। বিকেলে দলবেঁধে ঘুরে ফিরি সবুজ ক্যাম্পাস। বসে যাই অডিটোরিয়মের সিঁড়িতে, টিএসসির ফ্লোরে, শহীদ মিনার বা কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সবুজের ওপর। জুড়ে দিই সুখ-দুঃখের বাহারী গল্প। সন্ধ্যায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে নাটক আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে কত যে মজা করলাম তার হিসাব কে রাখে? হুট করে কিছুদিনের জন্য সবাই পড়ার টেবিলে কারণ একটাই পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার জন্য অনেকদিন একসঙ্গে মজা করতে পারিনি। এবার পরীক্ষার পরে একসঙ্গে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পালা। ঘুরতে যাই মানিকগঞ্জের জমিদারবাড়ি, টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ, পুরান ঢাকার লালবাগের কেল্লা, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, বিভিন্ন জাদুঘর প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান। ঈদ আর গরমের ছুটিতে বছরে মোট দুবার বাড়িতে লম্বা ছুটিতে যাই সবাই কিন্তু বাড়িতে দু-তিন দিন পর থেকেই উদগ্রীব হয়ে বসে থাকি কখন আবার সবাই মিলব প্রিয় ক্যাম্পাসে। আহা এসব দিনগুলো যে ভোলার নয়। এই তো সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক স্টিফেন টি ইকার্ড আমাদের বিভাগে জাদুঘর বিষয়ে বেশ কয়েকদিন ক্লাস নিলেন। পশ্চিমাদের প্রতি সবার মতো আমাদেরও বেশ কৌতূহল বরাবরই ছিল। তবে এই ভদ্রলোক বেশ বয়স্ক কিন্তু তিনি যে ভিন্ন ধারায় আমাদের ক্লাস নিলেন তা উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। ভদ্রলোক প্রথম দিন জানতে চাইলেন সবার ভবিষ্যত পরিকল্পনা। এরপরের দিন নিয়ে গেলেন জাতীয় জাদুঘর এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদঘর পরিদর্শনে। যাত্রাপথে আমরা অনেক মজা করলাম। ভদ্রলোক সবার সঙ্গে বেশ আন্তরিকভাবেই মিশে গেলেন। এরপর বিভাগে এসে পরের দিন ভদ্রলোক লিখিত জানতে চাইলেন তোমরা বর্তমান জাদুঘরের কি গঠনমূলক সংস্কার চাও তা লেখ। তিনি জাদুঘরে শিশুদের আকৃষ্ট করতে সেখানে শিশুবান্ধব কিছু চালু করার প্রতি গুরুত্ব দেন। তিনি আমাদের কাগজ দিয়ে মজার কিছু ফুল বানানো শিখালেন, রঙিন টিনে খোদাই করে নেমপ্লেট বানানো শিখালেন হাতে-কলমে। যা আমাদের ক্লাসে ভিন্নমাত্রার মজা দিয়েছিল। যে যার বানানো ফুল এবং নেমপ্লেট নিয়ে ভদ্রলোকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যাই ক্যামেরার সামনে ছবি তুলতে। সঙ্গে বিভাগীয় শিক্ষক সিকদার জুলকারনাইনও ছিলেন। সত্যিই এসব মুহূর্তগুলো আনন্দের। এই কয়টা বছর একসঙ্গে হাসি-আনন্দ, দুঃখ- বেদনার কত স্মৃতি যে হয়ে গেল সত্যিই তা অমলিন। কখনও ভোলার নয়। শুধু আফসোসের সুরে বলতে হয়, আহা দিনগুলো যে চলে যায়...। যেখানেই যাস ভাল থাকিস বন্ধু তোরা। তোরা ছিলি বলেই আমি ভাল ছিলাম, আমরা ভাল ছিলাম। ভাল থাকিস বন্ধু। ওয়ালীউল্লাহ মিঠু
×