ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানে কাঁপছে বাংলাদেশ ফুটবল দল!

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৯ অক্টোবর ২০১৬

ভুটানে কাঁপছে বাংলাদেশ ফুটবল দল!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জিততে হলে সবার আগে চাই আত্মবিশ^াস, তারপর শারীরিক সক্ষমতা, তারপর দক্ষতা। কিন্তু এই তিনটি ক্ষেত্রেই বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। যে কারণে সংশয় আর আত্মবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে গেছে বাংলাদেশের ভুটান-জয়। যদিও এর আগে ভুটানের কাছে কখনই হারেনি বাংলাদেশ (৬ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৪ ম্যাচে। বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। বাংলাদেশের সর্বশেষ জয় ৩-০ গোলে, গ্রুপপর্বে, ২০১৫ সাফ সুজুকি কাপে, ভারতের কেরলে), কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলের এমনই অবস্থা হয়েছে যে এখন ভুটানের সঙ্গে খেলতে গেলেও হাঁটু থরথরি কম্পমান! বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে এর আগে কখনও এমন সঙ্কটময় মুহূর্ত বা সন্ধিক্ষণ আসেনি। ভুটান-চ্যালেঞ্জে হারলে আরও অধোগতিতে চলে যাবে দেশের ফুটবল। আর উৎরে গেলে ওপরে ওঠার পথ প্রশস্ত হবে। আগামীতে জাতীয় দল নিয়ে কি ধরনের পরিকল্পনা তৈরি করবে বাফুফে, তা নির্ভর করছে এ ম্যাচের ফলের ওপর। ‘এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে অফ-২’এ এ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন অবস্থান করছে ভুটানের থিম্পুতে। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে সোমবার খেলাটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়। কোচ টম সেইন্টফিটের অধীনে মামুনুলরা আদৌ জিতে বা যে কোন গোলের স্কোরলাইনে ড্র করে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ফুটবলামোদীরা আছেন সংশয়ে। অনেকেই বলছেন, ঢাকায় নিজেদের মাঠেই ভুটানকে যারা হারাতে পারে না, তারা ভুটানের মাটিতে কিভাবে জেতার প্রত্যাশা করে? বরং হেরে আসবে কমপক্ষে ২-০ গোলে! কেন তাদের এমন সংশয়? কারণ ৭টি। ১. কোচ দলকে প্রস্তুত করার জন্য খুব বেশি সময় পাননি, ২. ক্যাম্প শুরুর দিনও তিনি প্রাথমিক দলের সবাইকে পাননি। ৩৩ ফুটবলারের মাত্র ১৩ জন রিপোর্ট করেন, ৩. অনুশীলনে ফুটবলারদের দিয়ে গোলপোস্টে কোচ যে শূটিং প্র্যাকটিস বা ফিনিশিং করিয়েছেন তাতে বেশিরভাগ ফুটবলারই নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, ৪. দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়-মিডফিল্ডার জামাল ভুঁইয়াকে দলেই নেননি কোচ সেইন্টফিট, ৫. ভুটান সফরে ফিটনেস ট্রেনার ছাড়াই গেছে বাংলাদেশ, ৬. এর আগে কখনই ভুটানে গিয়ে খেলেনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল, ৭. এবার সেখানে গিয়ে তাদের খেলতে হবে ঠা-ায়, টার্ফে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে (৭৬৫৬ ফুট) অনেক উঁচুতে। এছাড়া এখনও বিস্ময়করভাবে দলীয় অধিনায়কই ঠিক করতে পারেনি বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটি! প্রশ্ন উঠেছে কোচ সেইন্টফিটকে নিয়েও। দলগঠনের সময় মুড়ি-মুড়কির মতো ইচ্ছেমতো খেলোয়াড় ডেকেছেন। দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই পুরোপুরি ফিট না। অথচ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়-মিডফিল্ডার জামাল ভুঁইয়াকেই দলে নেননি! এর জন্য বাংলাদেশ দলকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীরা। তারা আসলে সামগ্রিকভাবেই হতাশ বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবল নিয়ে। তাদের মতেÑ দেশের ফুটবলের খোলনলচেটাই পাল্টে ফেলতে হবে পুরোপুরি। এসব ফুটবলার দিয়ে আর চলে না। চলে না এসব প্রশাসনিক কর্তাদের দিয়েও। তারা সবসময় ব্যস্ত থাকেন নিজেদের আখের গোছানো নিয়ে। সবকিছুই শুরু করতে নতুনভাবে, নতুনদের নিয়ে। নিতে হবে নতুন-তরুণ ফুটবলার। জোর দিতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। মহিলা ফুটবল যেভাবে সাফল্য পাচ্ছে, তাদের অনুসরণ করতে হবে। কমবয়সী ফুটবলার নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ-অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হবে পুরুষ জাতীয় দল। শনিবার ছিল ভুটানে অবস্থান করা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ফরোয়ার্ড শাখাওয়াত হোসেন রনির ২৫-তম জন্মদিন। ফেসবুকে তিনি তার ভক্তদের কাছে বাংলাদেশ দলের সাফল্যের জন্য দোয়া চেয়েছেন। ভক্তরা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নিজের আসল কাজটা করার ব্যাপারেও মনে করিয়ে দিয়েছেন। একজন রনির ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘জিতে আসতে হবে কিন্তু। অথবা যে কোন গোলের স্কোরলাইন হলেও চলবে।’ আরেকজন লিখেছেন ‘আশাকরি বাংলাদেশ জিতবে এবং আপনার গোল থাকবে।’ এখন দেখার বিষয়, ভক্ত-অনুরাগীদের এই প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারেন রনি।
×