ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাসির কেন উপেক্ষিত?

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৯ অক্টোবর ২০১৬

নাসির কেন উপেক্ষিত?

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ নাসির হোসেন কেন একাদশে নেইÑ গত বেশ কিছুদিন ধরেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে। ঘরের মাটিতে দুর্বল আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচ ও চলতি ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর সেই প্রশ্ন এখন আরও বড় হয়ে সামনে উঠে আসছে। দুটি যুক্তিসঙ্গত কারণে বিশ্লেষকরা এটি সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। এক. সাব্বির রহমানের ওয়ান-ডাউনে উঠে আসার পর টেল-এন্ডে ব্যাট হাতে একজন ‘সলিড ফিনিশারের’ অভাব। প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানিস্তান আর ইংল্যান্ড যেমন এক নয়, তেমনি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যে নাসির-মাহমুদুল্লাহর বিকল্প হতে পারেন না, সেটি বুঝতে ক্রিকেটবোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয়ত, নাসির বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডারদের একজন, প্রয়োজনে ব্রেক থ্রু এনে দিতে বল হাতে তার অফস্পিনটা বেশ কার্যকর। সর্বোপরি তিনি একজন দুর্দান্ত এ্যাথলেট। একেবারে নাগাল থেকে ফসকে যাওয়া প্রথম ওয়ানডের কথা মনে করলে নাসিরের জন্য হাহাকারটা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। মিরপুরে খেলা দেখে ফেরা অনেক দর্শক সেটি বলছিলেন। জয়ের জন্য শেষ ৫৪ বলে চাই ৪৫ রান, হাতে ৬ উইকেট। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছিল, ইংলিশরাও হয়তো হাল ছেড়ে দিয়েছেন। ৪২ ওভারের তৃতীয় বলে সাকিব (৭৯) আউট হলেই বা কি? অপরপ্রান্তে সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল কায়েস, হাতে ৫ উইকেট। ম্যাচ তো বাংলাদেশ জিততে যাচ্ছে। কিন্তু ১৭ রানের মধ্যে বাকি সব উইকেট হারিয়ে ২৮৮তে অলআউট, ২১ রানের হার। যার শুরুটা রানের খাতা খোলার আগেই মোসাদ্দেকের (০) ওই বোল্ড দিয়ে...। নাসিরের জন্য হাহাকারটা বড় হয়ে ওঠে, যখন দেখা যায় ১৮ বলের ১১টিতেই ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ মোশাররফ! টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের কাঠে হৃদয় খান খান করে দেয়া ১ রানের সেই হার, ঘরের মাটিতে আফগান-লজ্জা (গিনিপিগদের কাছে এক ম্যাচে হার তো লজ্জারই সামিল!), অতঃপর প্রথম ওয়ানতে এভাবে ইংল্যান্ডকে জয় উপহার দেয়া, দলে একজন দক্ষ ‘ফিনিশারে’র অভাব যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। নিকট অতীতে সাফল্যের রঙিন বছরগুলোতে প্রতিনিয়ত নাসির যেখানে সফলতম নাম। ইংল্যান্ডের কাছে এভাবে হারের পর একাদশে তার জায়গা না হওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমন নয় যে নাসির থাকলেই বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতে যেত, তবে এভাবে আফসোসে পুড়তে হতো না। সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান যেমন বলছিলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা ভেবে মোসাদ্দেককে সুযোগ দেয়া ঠিক আছে। কিন্তু একাদশে নাসিরকে প্রয়োজন। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই সে দারুণ। সেক্ষেত্রে মোশাররফকে বসানো যেতে পারে।’ ৩ ওভারে ২৩ রান দিয়ে চরম ব্যর্থ স্পেশালিস্ট এ স্পিনার ব্যাটিংয়ে ১৮ বলে করেন ৭ রান। ফিল্ডিংয়ে বেন স্টোকসের তুলে দেয়া সহজ ক্যাচ যেভাবে ফেলেছেন সেটি রীতিমতো অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে। জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। মূলত নাসিরের পরিবর্তে মোসাদ্দেককে খেলানো হচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকে ভাল করলেও ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ওয়ানতে ৯ ওভারে ৫০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শূন্যহাতে সাজঘরে ফিরেছেন ২০ বছর বয়সী তরুণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবে পা রেখেছেন। এত বড় দলের বিপক্ষে চাপটা যে তিনি নিতে পারেননি সেটি স্পষ্ট। অথচ নাসিরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায় ম্যাচের খারাপ সময়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার অনেক নজির তার রয়েছে। ১৭ টেস্ট, ৫৬ ওয়ানডে ও ৩১ টি২০’র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ২৪ বছর বয়সী ক্রিকেটার ফতুল্লায় এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলেছেন ৪৬ রানের চমৎকার ইনিংস। একজন ‘ফিনিশার’ নাসিরের বিকল্প এখনও খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। দলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা বড় প্রয়োজন। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের মতো এমন বড় দলের বিপক্ষে। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সব ফিনিশিংয়ের নজির রয়েছে। বিশ্লেষকরা তাকে সময়ের সফল ফিনিশার বলে মনে করেন, সেই তাকে দিনের পর দিন বসিয়ে রাখা হতাশার। গুঞ্জন রয়েছে কোচ হাতুরাসিংহের বিরাগভাজন হয়েই নাসিরের এভাবে পানি আর তোয়ালে টেনে বেড়ানো। যদি সত্যি হয়, সেটি তো বাংলাদেশে ক্রিকেটের জন্য আরও বিপজ্জনক খবর!
×