ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খেলাপী ঋণ আদায়ে আলাদা কোম্পানি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৯ অক্টোবর ২০১৬

খেলাপী ঋণ আদায়ে আলাদা কোম্পানি হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আলাদা কোম্পানির মাধ্যমে ব্যাংকের খেলাপী ঋণ আদায়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই মধ্যে ‘ডেট রিকভারি এজেন্ট কোম্পানি’ গঠনের জন্য খসড়া আইনও করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে ব্যাংক খাতের কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, যেখানে মামলা করেও খেলাপী ঋণ আদায় হয় না, সেখানে আলাদা কোম্পানির মাধ্যমে সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। খেলাপী ঋণ দেশের ব্যাংক খাতের বড় প্রতিবন্ধকতাগুলোর একটি। এই সমস্যা নিরসনে প্রত্যেক ব্যাংকে ‘খেলাপী আদায়’ নামে আলাদা বিভাগ আছে। আছে অর্থঋণ আদালত আইন। দেউলিয়া আদালতও আছে এ জন্য। পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি এ্যাক্ট আছে। এমনকি খেলাপী ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি আলাদা টাস্কফোর্স সেলও আছে। তবুও কাক্সিক্ষত হারে খেলাপী ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না। এ কারণে আলাদা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে করে, প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে বিকল্প পদ্ধতিতে ঋণ আদায়ে ডেট রিকভারি কোম্পানির মাধ্যমে খেলাপী ঋণ আদায় সম্ভব হলে পরিস্থিতি ইতিবাচক হতে পারে। তবে দ্বিমতও জানিয়েছেন কেউ কেউ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেখানে আদালতে মামলা করেও খেলাপী ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না, সেখানে আলাদা কোম্পানি করেও লাভ হবে না। ভারত ও পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় বিভিন্ন এজেন্ট কমিশনের বিনিময়ে ব্যাংকের হয়ে খেলাপী ও অবলোপন করা ঋণ আদায় করে। বাংলাদেশেও এজেন্ট নিয়োগ করে খেলাপি ঋণ আদায় করা যেতে পারে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে এজেন্ট দিয়ে খেলাপী আদায়ের রীতি আছে। আমাদের দেশেও বেশ কয়েকটি এজেন্ট কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কমিশন বা ফি নির্ধারণ করে দিলে খেলাপী ঋণ আদায়ে তা ইতিবাচক হবে।’ দেশে খেলাপী ও বিভিন্ন সময়ে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে এর পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত তফসিলি ব্যাংক মতামত দেয়ার পর গত ২০ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অডিট, প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলা) মানিক চন্দ্র দের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় প্রণীত খসড়া আইনের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা প্রণয়নে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ আদায়ও করে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের নিয়োগ দেয়া এজেন্টরা কাক্সিক্ষত হারে খেলাপী আদায় করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এই তিনটি ব্যাংক মতামত দিয়েছে, ডেট রিকভারি এজেন্ট নিয়োগের ফলে ঋণ আদায়ে কোন উন্নতি হয়নি। বরং কমিশন পাওয়ার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক ব্যক্তির চাপ বেড়েছে। নানা কারণে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে এজেন্ট ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে; যা ঋণ আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডেট রিকভারি এজেন্ট কোম্পানি গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তবে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
×