ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী মেন চ্যানেল আই হিরো বাঁধন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৯ অক্টোবর ২০১৬

ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী মেন চ্যানেল আই হিরো বাঁধন

মনোয়ার হোসেন ও গৌতম পাণ্ডে॥ টানটান উত্তেজনা। কে হবে আগামীর নায়ক। লক্ষ্যে পৌঁছতে ইতোমধ্যে ১৫টি পর্ব পেরিয়ে আসা পাঁচ চৌকস তরুণ অংশ নিলেন চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়। অভিনয়, এ্যাকশন, র‌্যাম্প মডেলিং, ফটোশূটসহ বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বিচারকদের রায়ের ভিত্তিতে খুঁজে পাওয়া গেল সেই নায়ককে। বাকি চার প্রতিযোগীকে ছাপিয়ে মেধার আলোকছটায় ‘ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী মেন চ্যানেল আই হিরো, পাওয়ার্ড বাই বাংলাদেশ আর্মি’ নির্বাচিত হলেন বাঁধন। প্রথম রানার আপ হন পুষন। দ্বিতীয় রানার আপ হন তণ্ময়। প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অংশ নেয়া বাকি দুই প্রতিযোগী হলেন নীল ও সজীব। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রি হলে অনুষ্ঠিত হয় ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী মেন চ্যানেল আই হিরো, পাওয়ার্ড বাই বাংলাদেশ আর্মির প্রথম হিরো প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিরোর হাতে পুরস্কার তুলে দেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বাংলাদেশ আর্মির লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাব্বির আহমেদ ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড বিল্ডিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার। প্রতিযোগীদের সঙ্গে তারকা শিল্পীদের নাচ, গান, ফ্যাশন শোসহ নানা পরিবেশনায় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বটি ছিল দারুণ মনমাতানো। এ পর্বে ছিল লাক্স তারকা মেহজাবিনের একক পারফরমেন্স। পরিবেশিত হয় ব্যান্ডদল এ্যাভয়েড রাফার গান। নতুন-পুরান ঢাকাই ছবির সাড়া জাগানো গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন বড় পর্দার রোমান্টিক জুটি বাপ্পি ও মাহি। নন্দিত লোকসঙ্গীত শিল্পী মমতাজ গেয়ে শোনান তুমুল জনপ্রিয় ‘লোকাল বাস’ গানটি। সেই গানের সুরে নাচ করেন অভিনেত্রী টয়া। অনবদ্য এই পরিবেশনায় উল্লসিত হয়ে ওঠে মিলনায়তন ভর্তি দর্শক-শ্রোতা। এছাড়া সেরা পাঁচ প্রতিযোগীর সঙ্গে পরিবেশনায় অংশ নেন স্পর্শিয়া, তানজিন তিশা, শেহতাজ, অমৃতা, বুবলির মতো এ সময়ের আলোচিত শিল্পীরা। আজরার কোরিওগ্রাফিতে অনুষ্ঠিত হয় ফ্যাশন শো। প্রসঙ্গত, ২৯ জুন থেকে শুরু হওয়া এই শোয়ের ১৫টি পর্ব সম্পন্ন হয়। শনিবার অসংখ্য প্রতিযোগীর মধ্য থেকে বিভিন্ন টাস্কের মাধ্যমে প্রথমে বাছাই করা হয় সেরা পনেরো। এই সেরা পনেরো বাংলাদেশ আর্মির তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন রকম টাস্ক শেষ করেন। পুরো ব্যাপারটাই তাদের জন্য ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। এদের মধ্য থেকে বাছাই করা সেরা দশজনের ভেতর থেকে নাচ, এ্যাকশন, অভিনয়, র‌্যাম্প মডেলিং, ফটোশূট ও টিভিসিতে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ শেষে নির্বাচন করা হয় সেরা পাঁচজনকে। এই পাঁচজনকে নিয়েই অনুষ্ঠিত হয় গ্র্যান্ড ফিনালে। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ভূমিকা রেখেছেন দেশের নামকরা শিল্পীরা। প্রধান বিচারক হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ এবং অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। বিভিন্ন সময় অতিথি বিচারক ছিলেন দেশের স্বনামধন্য অভিনেতা ফেরদৌস, নোবেল, অভিনেত্রী মাহি, তারিন এবং পরিচালক গাজী শুভ্র। লেখালেখি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আসাদ চৌধুরী ও আল মুজাহিদী ॥ কাব্য সাধনায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দুই খ্যাতিমান কবিকে প্রদান করা প্রকাশনা সংস্থা লেখালেখি প্রবর্তিত লেখালেখি সাহিত্য পুরস্কার। ২০১৪ সালের পুরস্কারটি প্রদান করা হয় কবি আসাদ চৌধুরীকে। ২০১৫ সালের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি আল মুজাহিদী। শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবিদ্বয়ের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। পুরস্কার হিসেবে কবিদ্বয়কে সম্মাননা স্মারক, সনদপত্র এবং পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী, গীতিকবি কে জি মোস্তফা ও ছড়াকার ফারুক হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেখালেখি প্রকাশনার কর্ণধার আবুল কাসেম হায়দার। অনুষ্ঠানে জন্মদিন উপলক্ষে স্বরচিত ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার জগলুল হায়দার। অনুভূতি প্রকাশ করে আসাদ চৌধুরী বলেন, আমি আমার লেখায় সময়ের কথা বলতে চেয়েছি। আফসোস করে কবি বলেন, লেখার জন্য আমার আরও বেশি সময় দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু নানা সামাজিক আমাকে কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। মানুষের সঙ্গে মিশতে আমার ভাল লাগে। চলমান সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখন যেন বড় দুঃসময় পার হচ্ছে, মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করছে না। কথা শেষে তিনি নিজের লেখা একটি কবিতা পাঠ করেন। আল মুজাহিদী বলেন, বিবেক ও বোধের বারুদ জ্বালিয়ে পৃথিবীকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে হবে। আমাদের আরও মানবিক হতে হবে। কবিকে স্বাধীন হতে হবে। কোন নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ হলে চলবে না। তবে যে কবি যত ভাল কাঠামো নির্মাণ করতে পারবে, সে তত ভাল কবি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কিছুটা রসিকতা করে আনিসুজ্জামান বলেন, আমার জন্য আজকের দিনটি আনন্দের উপলক্ষ বয়ে এনেছে। কারণ, এই পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই কবিই কপালদোষে আমার ছাত্র ছিলেন। এজন্যই এ আয়োজনে সানন্দে চলে এসেছি। দুজনই বাংলা সাহিত্যকে সাধনা, শ্রম, মেধা ও লেখা দিয়ে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কার রয়েছে। তার কোনটি গুরুত্বপূর্ণ, তার বিবেচনা অর্থ দিয়ে হয় না। পুরস্কারের গুণমান নির্ধারণ হয় পুরস্কার কাকে প্রদান করা হচ্ছে সেটার ওপর। সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সাহিত্য পুরস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এটি প্রচলিত। কখনও পুরস্কার পেয়ে কেউ সম্মানিত হয়, কেউ আবার পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত হয়। আজকে যারা পুরস্কার পেলেন এই পুরস্কার না পেলেও তাদের জন্য অপ্রাপ্তি হতো না। বরং তাদের পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত হয়েছে প্রকাশনা সংস্থা লেখালেখি । ২০১৩ সাল থেকে প্রবর্তিত হয় লেখালেখি সাহিত্য পুরস্কার। প্রথমবার এ পুরস্কার পেয়েছিলেন কবি আল মাহমুদ। স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি ॥ শেষ হলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব। ৮৪টি চলচ্চিত্র নিয়ে ২ অক্টোবর থেকে সারা দেশের ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে একযোগে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী এ উৎসব। ১৯৭১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নির্মিত ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এ আয়োজন। শনিবার ছিল প্রয়াত লেখক সৈয়দ শামসুল হককে উৎসর্গকৃত উৎসবের সমাপনী দিন। সন্ধ্যায় সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। উৎসবের শেষ দিনে স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উভয় বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ নির্মাতা ও বিশেষ জুরি বিভাগে দেয়া হয় পুরস্কার। স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে মোঃ আবিদ মল্লিক নির্মিত ছবি ‘পথ’। এ বিভাগে ‘দি সুজ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নির্মাতা নির্বাচিত হয়েছেন সাদাত হোসাইন। বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছে মোঃ মামুনুর রশীদ নির্মিত ছবি ‘মাটির পাখি’। প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে মকবুল চৌধুরী নির্মিত ছবি ‘নট পেনি নট এ পান’। এ বিভাগে ‘বিষকাঁটা‘ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নির্মাতা নির্বাচিত হয়েছেন ফারজানা ববি। ‘যে গল্পের শেষ নেই’ ছবির জন্য বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছেন ফৌজিয়া খান। উভয় বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ১ লাখ টাকা করে দুজনকে এবং দুই শ্রেষ্ঠ নির্মাতাকে ৫০ হাজার করে টাকা সম্মানী দেয়া হয়। বিশেষ জুরি পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতাকে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র। এছাড়া উৎসবে অংশগ্রহণকারী সকল নির্মাতাকে দেয়া হয় সনদপত্র। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি স্থপতি লায়লুন নাহার স্বেমি ও চলচ্চিত্র গবেষক ফাহমিদুল হক।
×