ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রীদের ওপর সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনের ডাক

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৯ অক্টোবর ২০১৬

ছাত্রীদের ওপর সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনের ডাক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাত্রীদের ওপর সহিংসতা প্রতিরোধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়ে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুদিনের প্রতিবাদী কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আগামী ১৮ অক্টোবর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন ও ২০ অক্টোবর সচেনতনামূলক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। ২০ অক্টোবরের সভায় শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির প্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সহিংসতারোধে কমিটি করা হবে। এরপর ঐক্যবদ্ধভাবে শুরু করা হবে সহিংসতাবিরোধী প্রচারাভিযান। বিভিন্ন স্থানে ছাত্রীদের ওপর বখাটে সন্ত্রাসীদের হামলার প্রেক্ষাপটে শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালনরত অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী সিলেটে ছাত্রলীগ নামধারী বখাটের হামলায় গুরুতর আহত কলেজছাত্রী খাদিজার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং হামলাকারীর কঠোর শাস্তি দাবি করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একের পর এক বখাটেরা ছাত্রীদের ওপর হামলা করে যাচ্ছে। ছাত্রীদের সুন্দর ভবিষ্যত নষ্ট করছে। এ থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদের সামাজিক আন্দোলন, গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত কিছু অমানুষ, বখাটেদের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। এটা কোনভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। এর জন্য দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলন, সমাজ সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সহিংসতা রোধে ১৮ অক্টোবর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ মিনিটের প্রতীকী মানববন্ধন এবং ২০ অক্টোবর সভা হবে। ওই মানববন্ধনে আমরা মানুষরূপী পশুদের যথাযথ বিচারের দাবি জানাব। হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে শপথ নিয়ে এই সামাজিক আন্দোলন, প্রতিরোধ গড়ে তোলার লড়াইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করব। এরপর ২০ অক্টোবরের সভায় শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির প্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সহিংসতারোধে কমিটি করা হবে। স্থানীয়রা মিলেই এ কমিটি করবে। এরপর সবাই মিলে স্কুলের চারপাশে ব্যাপক প্রচার চালাবে- ‘সন্তান যেন বিপথগামী না হয়, সেদিকে সবাই দৃষ্টি রাখবে।’ মন্ত্রী বলেন, এসব কমিটি বখাটেদের প্রথমে শোধরানোর চেষ্টা করবে, এরপরও কাজ না হলে তাদের আইনের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা নেবে। যদি অপরাধীকে না পাওয়া যায়, তাহলে কমিটি অপরাধীর বাবা-মাকে এমনভাবে অভিযুক্ত করবে, যেন তারা সন্তানকে আইনের হাত তুলে দিতে বাধ্য হন। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে বখাটের উপদ্রব কমানো সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। অপরাধীর কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য ‘বিচার নিশ্চিতে’ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ বাণীর পরে আমি আশা করব, ওই দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোথাও কেউ কোন শঙ্কা এবং দ্বিধা করবেন না। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, তনু, রিশা এবং খাদিজার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত তাদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। যাতে পরবর্তীতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরপর সারাদেশে ছাত্রীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ১৪টি শোকসন্তপ্ত পরিবারের কাছে ছুটে গেছি। তাদের মা-বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইভটিজিং বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা অনেক কমে এসেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ছাত্রীদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে সমাজে যে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজেই লক্ষণীয়। ছাত্রীরাও এখন আর এ ধরনের অপরাধ নীরবে সহ্য করছে না, তারা নিজেরাই প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। কেবল আইনের মাধ্যমে ইভটিজিং নির্মূল সম্ভব নয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইভটিজিংবিরোধী ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং অপরাধীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে সমাজের সকল স্তরের জনগণের সহায়তা এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ছাত্রীদের সঙ্গে এসব সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার, ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়ার পথে এলাকাবাসীর নজরদারির বাড়াতে হবে। শিক্ষকতায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ॥ এদিকে শিক্ষামন্ত্রী অপর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিশ্বায়নের উপযোগী করে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হলে চাই বিশ্বমানের শিক্ষক। ক্লাসরুম শিক্ষাদান পদ্ধতিতে নানা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষকতা পেশায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এসব প্রযুক্তি সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে ক্লাসরুমকে আকর্ষণীয় করে তুলতে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নবনিযুক্ত প্রভাষকদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ৩৪তম বিসিএসের মাধ্যমে গত ১ জুন ২০১৬ শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করা ৭৫৮ জন প্রভাষককে চাকরি সম্পর্কিত বিষয়াদি অবহিত করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সারাদেশে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে মেধারভিত্তিতে নির্বাচিত প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষকের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। শিক্ষা ক্যাডারের ৩৮৫ জন সদস্যকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক আদেশ জারির কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। সরকার শিক্ষকদের মানসম্মান, মর্যাদা ও স্বার্থরক্ষায় সবসময় তৎপর। শিক্ষকরাও তাদের ওপর অর্পিত জাতি গঠনের মহান দায়িত্ব নিবেদিতপ্রাণে পালন করে যাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
×