ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

১১ লাখ চালকই অবৈধ ॥ পরীক্ষা ছাড়াই এক লাখ ৯০ হাজার লাইসেন্স

পরিবহন ২৭ লাখ, বৈধ চালক ১৬ লাখ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৯ অক্টোবর ২০১৬

পরিবহন ২৭ লাখ, বৈধ চালক ১৬ লাখ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সারাদেশে সড়কপথে পরিবহন চালক কত? সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। সরকারী পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ বলছে, বর্তমানে দেশে তালিকাভুক্ত পরিবহনের সংখ্যা ২৭ লাখের বেশি। লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক আছে প্রায় ১৬ লাখ। এই হিসেবে ১১ লাখের বেশি চালক অবৈধ। যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, ৬০ লাখের বেশি চালকের কথা। সংগঠনের হিসেব অনুযায়ী অবৈধ চালকের সংখ্যা ৪৪ লাখ। এরমধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক আছে মাত্র ১২ ভাগ। ২২ লাখ অনুমোদনহীন যানবাহন দাবড়ে বেড়াচ্ছে সড়ক মহাসড়কে। বিআরটিএ সূত্র বলছে, পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সুপারিশে কোন রকম পরীক্ষা ছাড়াই এক লাখ ৯০ হাজার চালক পেয়েছেন ভারি যানবাহন চালানোর সনদ! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল পরিমাণ অবৈধ চালক এখন রাস্তায়। এমন বাস্তবতায় সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। তাদের পরামর্শ দ্রুত সময়ের মধ্যে বিআরটিএকে রেগুলেটরি অথরিটি ঘোষণা করা হোক। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ চালক তৈরিসহ পরিবহনের ফিটনেস পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবে। এতে সেবার মান বাড়বে। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা। উন্নত দেশগুলোতে এভাবেই পরিবহন নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। উন্নত সেবার প্রস্তাব আলোর মুখ দেখেনি ॥ বর্তমানে ব্যাঙ্ককের পরিবহনের সংখ্যা ৭৫ লাখ। থাইল্যান্ডে সাড়ে তিন কোটি। বিশাল এই পরিবহন রাজ্যের দেখভাল কিন্তু দেশটির সরকারী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থার হাতে নেই। উন্নত দেশগুলোতে সঠিক সেবা ও মান নিশ্চিত করার জন্য সরকারী সংস্থা ‘রেগুলেটরি বডি’ হিসেবে কাজ করছে। যা আমাদের দেশে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সেবার মান বাড়ছে। দক্ষ চালক তৈরি হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা কমছে। সেইসঙ্গে আনফিট কোন পরিবহন রাস্তায় চলতে পারছে না। চোখে দেখে ফিটনেস সনদ দেয়ার প্রবণতাও নেই সেখানে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। তেমনি নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের জবাবদিহিতাও রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক শামসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক আগেই দক্ষ চালক তৈরি ও যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষায় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন ছিল। ২০০৭ সালে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদ পর্যন্ত গিয়েছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থন্বেষী মহল তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশে কাজ করেছে। এতে প্রস্তাবটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে প্রতিবছর গাড়ি বেড়েছে। এখন বাড়ছে। কিন্তু চালক বাড়েনি। দক্ষ চালক তৈরি হচ্ছে না। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। মরছে মানুষ। অনেকে দুর্ঘটনায় সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও সরকারী পরিবহন অথরিটি চালক তৈরি ও যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে না। এটি বেসরকারীভাবে পরিচালিত হয়। আমাদের দেশের বিআরটিএ-এর নির্দিষ্ট জনবল দিয়ে বিশাল কাজ নিখুঁতভাবে করা সম্ভব নয়। বাস্তবে তাই হচ্ছে। বিআরটিএ-এর পরিবহন রেজিস্ট্রেশনের বিপরীতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের সংখ্যা অন্তত ১১ লাখ কম। কিন্তু পাঁচ লাখ গাড়ি তো বসে নেই। সবগুলোই রাস্তায় চলছে। তাহলে সড়কের নিরাপত্তা কিভাবে হবে। তাছাড়া কমার্শিয়াল গাড়ি প্রতি দুইজন চালক থাকার নিয়ম রয়েছে। এই হিসেবে গাড়ির বিপরীতে চালকের সংখ্যা আরও কম হবার কথা। সব মিলিয়ে কথা হলো দেশে চালকের ঘাটতি অনেক দিনের। এটা নতুন কিছু নয়। আউট সোর্সিং করে চালক বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, এ প্রস্তাব সরকারের কাছে অনেক আগেই দেয়া আছে। এক্ষেত্রে বিআরটিএ থাকবে রেগুলেটরি অথরিটি। অন্যরা চালক তৈরিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দেখবে। চালক তৈরি ও ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া বিআরটিএর কাজ হতে পারে না। ব্যাংককের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে ৭৫ লাখ গাড়ি সরকারী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রেগুলেটরি বডি হিসেবে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। থাইল্যান্ডে সাড়ে তিন কোটি গাড়ি কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে না। এসব বিষয় আমাদের নীতিনির্ধারকরা বোঝেন না। অনুভবও করেন না। বিআরটিএ চালকের লাইসেন্স বা ফিটনেস দেয়া বিভাগগুলো দুর্নীতিগ্রস্ত ও হয়রানিমূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা প্রয়োজনীয় কাজটি কোনভাবেই করতে পারছে না। আবার একটি প্রভাবশালী অংশ বিআরটিএ রেগুলেটরি অথরিটি হোক তা চায় না। তাই সঙ্কট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দৃষ্টি দেয়া জরুরী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিআরটিএ সকল কর্মকা- বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজই চোখের দেখায় হচ্ছে। অথচ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এরকম নেই। এভাবে চলতে থাকলে গাড়ি বাড়বে, চালক বাড়বে না। দক্ষ জনবল তৈরি হবে না। সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য নানা কায়দায় গোপন করা হবে। মানুষ কখনই জানতে পারবে না সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র। কারণ পুলিশ ও বিআরটিএ ছাড়া দুর্ঘটনার কোন তথ্য কারো কাছে নেই। যেসব ঘটনায় মামলা হয় সেগুলো শুধুমাত্র পুলিশের নথিভুক্ত হচ্ছে। এই সুযোগে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, দুর্ঘটনা কমছে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনের সঙ্গে সরকারী তথ্যের মিল নেই। বিআরটিএ কাজের পদ্ধতিগত পরিবর্তন না আনা হলে দিন দিন দুর্নীতি ছাড়া উন্নতি হবে না উল্লেখ করে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে উন্নতির বিষয়টিকে আড়ালে রাখতে চায়। প্রকৃতঅর্থে তারাই এখন প্রভাবশালী। মাত্র ১৬ লাখ তালিকাভুক্ত চালক ॥ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত পরিবহনের সংখ্যা ১০ লাখ ২২ হাজার ৬১৯ জন। একই সময়ে সারাদেশে তালিকাভুক্ত যানবাহনের সংখ্যা ২৭ লাখ ১৩ হাজার ২৯৪টি। এরমধ্যে বাসের সংখ্যা ৩৮ হাজার। কার্গো ভ্যান ৬ হাজার ৬০৮টি। মাইক্রো ৮৯ হাজার ৭৩১টি। মিনিবাস ২৭ হাজারেও বেশি। কাভার্ডভ্যান ১৯ হাজার, ডেলিভারি ভ্যান ২৪ হাজার, প্রায় ১৬ লাখ মোটরসাইকেল রয়েছে সারাদেশে। এছাড়াও এক লাখ ১৮ হাজার ট্রাক, ২৩ লাখ ২৪ হাজারের বেশি অটোরিক্সা, তিন লাখ ২৬ হাজার প্রাইভেটকার ছাড়াও আছে অন্যান্য পরিবহন। জানতে চাইলে বিআরটিএ সচিব শওকত আলী জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের সংখ্যা ১৬ লাখের কাছাকাছি। তবে অবৈধ চালক আছে কিনা আমাদের জানা নেই। অবৈধভাবে বা লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালালে যারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের ধরার কথা। সরকারী এই কর্মকর্তা বলছেন, দেশে অবৈধ চালক থাকার কথা নয়। যদি থেকে থাকে তাহলে হাইওয়ে পুলিশ, মহানগর পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ, ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা পুলিশের দেখা বা ধরার কথা। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দুর্ঘটনা রোধ বা চালক সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার। দক্ষ চালক তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। সারাদেশে ৬০ লাখ চালক ॥ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান বলছে, তখন সারাদেশে চালকের সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। এখন আরও বেশি। এরমধ্যে ১৬ লাখেরও কম বৈধ চালক রয়েছে। অথচ বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশনভুক্ত পরিবহনের সংখ্যা ২৭ লাখ। অর্থাৎ এর বাইরে সব চালকই অবৈধ। সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেলক হক জনকণ্ঠকে বলেন, ৬০ লাখ চালকের মধ্যে বৈধ মাত্র ১২ ভাগ। দেশজুড়ে প্রায় ২২ লাখ নসিমন, করিমন, ভটিভটিসহ অনুমোদনহীন যানবাহন ও চালক থাকার দাবি করে তিনি বলেন, এসব চালকদের নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরী। অথচ সবার চোখের সামনে এসব পরিবহন চলছে। চালকরাও দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। সরকারী উদ্যোগে দক্ষ চালক প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারীভাবে চালক তৈরির প্রক্রিয়ায় গলদ আছে। তাই পরিবহনে নতুন চালক তৈরিসহ চলমান নানা সঙ্কট সমাধানে গবেষণা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। পরিবহন সেক্টরে মালিক শ্রমিক কমিটি জনস্বার্থে কাজ না করার দাবি করে তিনি বলেন, এসব কমিটির কোন গবেষণা সেল নেই। চালক তৈরির বিষয়টি কেউ অনুভব করেন না। নেতারা সরকারের পক্ষে কথা বলে। পাশাপাশি মালিক- শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলসহ নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ সবই কোন না কোনভাবে সরকারের সঙ্গে যুক্ত। পরিবহন সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো এখন সরকারের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। কারণ এসব কমিটির নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের অনেকে সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য। তাই প্রয়োজন থাকলেও অনেক কিছুই হচ্ছে না। ভাল কাজের প্রস্তাবও আসছে না। সঙ্কট থেকেই যাচ্ছে। নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে’ জনকণ্ঠকে বলেন, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে দুর্ঘটনার জন্য প্রধান সাতটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারলোডিং ও ওভারটেকিংকালে নিয়ম ভঙ্গ, দীর্ঘক্ষণ বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের বেহাল দশা। দুর্ঘটনার পেছনে দক্ষ চালকের অভাব ও লাইসেন্সবিহীন চালকের আধিপত্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনার চিত্র ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ২১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। তবে বাংলাদেশের যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে একই বছরে এই সংখ্যা সাড়ে আট হাজার। তারা মূলত সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে। আর সরকারী হিসেবে প্রাণহানির সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৩৭৬। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত বছরের গবেষণা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দিক থেকে এশিয়ায় বাংলাদেশ অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশের ওপরে আছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। কিন্তু এই দেশগুলোর প্রতিটিতে যানবাহনের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। ২০১৪ সালের তথ্য ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গবেষণা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের অভাবে দুর্ঘটনা মাত্রা কমছে না। তাই এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সুপারিশে মিলেছে দক্ষ চালকের সনদ ॥ বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভারি যানবাহনের চালক প্রায় আড়াই লাখ। তাদের ১ লাখ ৯০ হাজার লাইসেন্স পেয়েছেন পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে। তারা লাইসেন্স পান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দেয়া তালিকা ধরে। সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হলো, তিন ধরনের লাইসেন্স দেয়া বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এর কোনটিরই সঠিক মান যাচাই করা হয় না। নিবন্ধিত যানবাহন অন্তত ৪ লাখের ফিটনেস সনদ নেই। আর যেসব যানের সনদ আছে, সেগুলোর বেশির ভাগকে দেয়া হয়েছে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। কারণ, মোটরযান আইনে যানবাহনের ৫০টির বেশি কারিগরি পরীক্ষা নিশ্চিত করেই চলাচলের সনদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব যাচাই করা হয় যন্ত্রের সাহায্যে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দক্ষ চালক তৈরিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সকল মান যাচাই নিশ্চিত করা ছাড়া লাইসেন্স দেয়া হলে সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব হবে না। নিরাপদ সড়ক যোগাযোগের জন্য এডুকেশন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও এ্যানফোর্সমেন্ট খুবই জরুরী। এরমধ্যে আমাদের দেশে সড়ক নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় ইঞ্জিনিয়ারিং দিকটি ভাল। অন্য দুটির অবস্থা বেহাল বলা চলে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ট্রাফিক রুলস চালকসহ যাত্রী ও সাধারণ মানুষ খুবই কম জানে। অবৈধ পার্কিং, রাস্তার পাশে বাজারসহ স্থাপনা, উন্নত পরিবহন এর কোন কিছুই মানের দিক থেকে সন্তোষজনক নয়। পাশাপাশি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এ্যানফোর্সমেন্টও যথাযথ হচ্ছে না। ফলে অরাজকতা চলছেই।
×