ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেজর জিয়া যে কোন মুহূর্তে গ্রেফতার;###;তিনটি অভিযানকালে র‌্যাব ও পুলিশের প্রতি গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে জঙ্গীরা;###;তামিমের পর দায়িত্ব নেয়া নব্য জেএমবি কমান্ডার আকাশ ও অর্থদাতা আব্দুর রহমান নিহত

একদিনে চার আস্তানায় অভিযান ॥ ১২ জঙ্গী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৯ অক্টোবর ২০১৬

একদিনে চার আস্তানায় অভিযান ॥ ১২ জঙ্গী নিহত

গাফফার খান চৌধুরী/মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/ইফতেখারুল অনুপম/সৌমিত্র মানব ॥ শনিবার চারটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ। গাজীপুরের দুটি এবং টাঙ্গাইল ও আশুলিয়ায় একটি করে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে ১২ জঙ্গী নিহত হয়েছে। গাজীপুরে পুলিশের চালানো জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে সাত জঙ্গী নিহত হয়। তাদের মধ্যে আকাশ নামে একজনের পরিচয় মিলেছে। বাকি ছয়জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পুলিশের তরফ থেকে এ অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন শরতের তুফান’। আর র‌্যাবের চালানো গাজীপুরের অপর একটি আস্তানায় রাশেদুল ও তৌহিদুল ইসলাম নামে দুই জঙ্গী এবং টাঙ্গাইলের একটি জঙ্গী আস্তানায় চালানো অভিযানে সাগর ও আতিক নামে দুই জঙ্গী নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। টাঙ্গাইলের আস্তানাটির বাড়ির মালিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গাজীপুরের দুটি জঙ্গী আস্তানার মধ্যে দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। দুই জঙ্গী আস্তানায় অবস্থানকারী জঙ্গীদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল বলে মনে করছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। আর ঢাকা জেলার আশুলিয়ার বাইপাইলের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের সময় আহত অবস্থায় আটক আব্দুর রহমান ওরফে আইনুল ওরফে নাজমুল সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। সাভারের পুলিশ সূত্র বিষয়টি শনিবার রাতে নিশ্চিত করে। র‌্যাবের দাবি আব্দুর রহমান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির মূল অর্থদাতা। অভিযানের সময় তার দুই স্ত্রী ও দুই কন্যাকেও আটক করা হয়। এ সময় আহত আব্দুর রহমানের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা ও অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের সময় সোহাগ নামে অপর এক জেএমবি জঙ্গীকেও গ্রেফতার করা হয়। নিহতরা দুর্ধর্ষ জঙ্গী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়। আস্তানাগুলো থেকে অস্ত্র-গোলাবরুদ, স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। এদিকে পঁচিশ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত দুর্ধর্ষ জঙ্গী ও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার কমান্ডার মেজর জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া নজরদারিতে রয়েছে। যেকোন সময় তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গাজীপুরে ও টাঙ্গাইলে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে পুলিশ ও র‌্যাবের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে একই সঙ্গে চারটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানোর এটিই প্রথম ঘটনা। ইতোপূর্বে একসঙ্গে এত জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানোর রেকর্ড নেই। পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে এর চেয়েও বেশিসংখ্যক জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানো হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গাজীপুরের দুই জঙ্গী নিহত ॥ শনিবার ভোরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার হারিনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাজার এলাকার আতাউর রহমানের একতলা পাকা বাড়ির আশপাশে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবস্থান নেয় র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। র‌্যাব অভিযানের জন্য পুলিশের সহায়তা নেয়। একপর্যায়ে বাড়ির চারদিকে অবস্থান নেয় পুলিশ ও র‌্যাব। এ সময় পুলিশ ও র‌্যাবের লোকজন বাড়ির আশপাশের লোকদের নিরাপদে সরিয়ে দেয়। বাড়ির সামনে থাকা কলাপসিবল গেট খুলে দেয়ার কথা বলে র‌্যাব। কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। আচমকা বিকট শব্দে হ্যান্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটে। ভেতর থেকে জঙ্গীরা র‌্যাব পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালাতে থাকে। গুলি চালাতে চালাতেই বাড়ির মূল গেটের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় ভেতর থেকে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে দফায় দফায় গুলি চালানো হয়। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালাতে থাকে। প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে থেমে-থেমে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ভেতর থেকে আর কোন হামলা হচ্ছিল না। এরপর র‌্যাব ভেতরে ঢোকে। বাড়ির ভেতর থেকে দুই যুবকের মরদেহ এবং একটি একে-২২ রাইফেল, একটি পিস্তল, রাইফেলের ৭০ রাউন্ড গুলি, কিছু বিস্ফোরক ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়। বাড়ির মালিক আতাউর রহমান জানান, নিহতদের একজন নরসিংদীর রাশেদুল ইমলাম (২০) এবার এইচএসসি পাস করেছে। অপরজন তৌহিদুল ইসলাম (২২) ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থী ছিল। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, নিহত দুইজন জঙ্গী বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। বাড়িটির মালিক ব্যবসায়ী আতাউর রহমান ঢাকায় থাকেন। মাস দেড়েক আগে বাড়ির কাজ শেষ হয়। তখনই বাড়িটি ছাত্র পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিল নিহত জঙ্গীরা। গাজীপুরের অপর জঙ্গী আস্তানায় সাত জঙ্গী নিহত ॥ শনিবার বেলা এগারোটার দিকে গাজীপুরের আফারখোলা পাতারটেক এলাকার একটি দোতলা পাকা বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। এ আস্তানাটির দূরত্ব র‌্যাবের চালানো গাজীপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার। অভিযান পরিচালনাকারীদের সহযোগিতা করে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত, বম্ব ডিস্পোজাল টিম, গাজীপুর জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। অভিযানটির নাম দেয়া হয়েছে, ‘অপারেশন শরতের তুফান’। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, নিউ জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম আকাশ সহযোগী জঙ্গীদের নিয়ে বড় ধরনের নাশকতার উদ্দেশ্যে ওই বাড়িতে অবস্থান করছেÑ এমন তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়। শনিবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে অভিযান শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভবনের দ্বিতীয় তলায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাদের আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী আহ্বান জানালেও তারা সাড়া দেয়নি। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভবনের ভেতরে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিতে থাকলে জঙ্গীরা ভবনের ভেতর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে প্রথম গুলি চালিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। এ সময় দুইপক্ষের মাঝে গুলি বিনিময় হয়। প্রায় দেড়-দু’ঘণ্টা গুলিবর্ষণের পর যখন জঙ্গীদের গুলি শেষপর্যায়ে, তখন তারা দরজার আড়াল থেকে কথা বলে এবং দরজার সামনে রাখা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটাবে বলে হুমকি দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কৌশলগত কারণে কিছু সময়ের জন্য অভিযান স্থগিত করে আবারও আত্মসমর্পণের জন্য জঙ্গীদের আহ্বান জানিয়ে প্রায় ১৫-২০ মিনিট সময় দেয়া হয়। কিন্তু তারা এ আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পুনরায় গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় জঙ্গীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং অন্তত ১৪টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট এ অভিযানের পর জঙ্গীদের কোন সাড়া না পেয়ে অভিযান চালিয়ে ওই ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ভবনের দ্বিতীয়তলার বাম পাশের একটি কক্ষে আকাশসহ ৭ জঙ্গীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের বয়স ২২ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। ওই কক্ষে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, বেশ কয়েকটি চাপাতি ও ছোরাসহ বেশকিছু বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া যায়। সোয়াতের এ পর্যন্ত যত অভিযান হয়েছে সেগুলোর তুলনায় ভবনের ‘ক্রিটিক্যাল ডিজাইনের’ কারণে এ অভিযানে বেশি সময় লেগেছে। বাড়িটির মালিক সৌদি আরব প্রবাসী সোলেমান সরকার। তার ভাই কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আরবি শিক্ষক ওসমান গণি। তিনিই মূলত বাড়িটি দেখাশোনা করেন। ওসমান গণি জানান, তিন মাস আগে তার কাছ থেকে তিনজন বাড়িটির দোতলা ভাড়া নেয়। ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করলেও সচরাচর বাসা থেকে বের হতো না। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযানের আগেই নিচতলায় থাকা লোকজনদের সরিয়ে নেয়া হয়। বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি চলে। বিকেলে ভেতর থেকে আর কোন গুলিবর্ষণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর পুলিশ বাড়ির ভেতরে অভিযান শুরু করে। পরে বাড়িতে তল্লাশি চালালে সাত জনের লাশ এবং অস্ত্রগোলাবারুদ উদ্ধার হয়। বিকেল চারটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নব্য জেএমবির তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর আকাশের নেতৃত্বেই নব্য জেএমবি সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছিল। বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় সাত জঙ্গীর লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি অস্ত্র, কয়েকটি চাপাতি ও একটি গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। আর গোলাগুলির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে জঙ্গীরা ১৪টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। এক পর্যায়ে জঙ্গীরা গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। অভিযানকালে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে দুই সদস্য আহত হয়েছেন। একজনের হাতে গুলি লেগেছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। অপরজনের গায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসও যথা সময়ে এসে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত আইজি জাবেদ পাটোয়ারি, অতিরিক্ত আইজি মোখলেসুর রহমান, সিটিটিসিইউ প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ উপস্থিত ছিলেন। টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গী নিহত ॥ শনিবার সকাল দশটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১২-এর একটি দল স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাগমারায় মির্জাবাড়ির মাঠের কাছে একটি তিনতলা বাড়িতে অভিযান চালায়। র‌্যাব-১২-এর টাঙ্গাইলের কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, মির্জাবাড়ির মাঠের পাশে আজাহার আলী মাস্টারের বাড়িতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর জঙ্গীরা বাসা ভাড়া নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছিল। এমন তথ্যটি তারা নিশ্চিত হয়। এরপরই সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় র‌্যাব বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে জঙ্গীরা র‌্যাবের উদ্দেশে গুলি চালায়। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। বেলা এগারোটা পর্যন্ত এভাবেই জঙ্গীদের সঙ্গে র‌্যাবের দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ভেতর থেকে আর কোন সাড়াশব্দ না পেলে বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে র‌্যাব। তল্লাশিতে দুই জঙ্গীর মরদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় কেউ আটক বা গ্রেফতার হয়নি। তাদের লাশ টাঙ্গাইল জেলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। অভিযানকালে র‌্যাব সদস্য কর্পোরাল সাইফুল ও সৈনিক রেজাউল আহত হন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবেশীরা জানান, ওরা এলাকায় নতুন এসেছে। তাই ওদের সঙ্গে এখনও কারও তেমন কোন পরিচয় হয়নি। গত এক সপ্তাহে ওরা দুজন দিনে বাসায় থাকত না। রাতে বাসায় থাকত। র‌্যাবের হাতে জঙ্গী নিহতের ঘটনায় তারা আতঙ্কিত। বাড়ির মালিক আজাহার মাস্টার জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র পরিচয়ে নিহতরা বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য কথা বলে। ওরা তখন নিজেদের ভার্সিটিতে ভর্তি কোচিং করবে বলে জানিয়েছিল। তাদের বাড়ি বগুড়া বলে জানিয়েছিল। এরপর তাদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়ে তিনি তবলিগ জামাতে চলে যান। শুক্রবার বাসায় ফিরি। শনিবার সকালে ওদের ভাড়া ও অগ্রিম ভাড়ার টাকা দেয়ার কথা ছিল। বিকেল চারটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১২ অধিনায়ক ও পুলিশের সহকারী অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খান জানান, ওই বাড়িতে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম থাকার সন্দেহে বম্ব ডিস্পোজাল টিমকে খবর দেয়া হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে সেখানে কোন তাজা বোমা পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে ১০টি চাপাতি, একটি পিস্তল, একটি রিভলবার, পাঁচ রাউন্ড তাজা বুলেট, দুটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ও প্রায় ৬৭ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। অভিযানকালে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার মাহবুব আলমসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে নিহত দুই জঙ্গীর নাম সাগর ও আতিক বলে জানা গেছে। তাদের বাড়ি রাজশাহী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আশুলিয়ায় জঙ্গী আস্তানায় অভিযান ॥ শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইলের পলাশবাড়ি এলাকার রানা মিয়ার ৬তলা বাড়ির পঞ্চম তলায় অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবি পুলিশ ও আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দল। এ সময় আব্দুর রহমান ওরফে আইনুল ওরফে নাজমুল নামে এক জঙ্গী পালাতে গিয়ে পাঁচ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়। তাকে আহত অবস্থায় আটক করে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরে সন্ধ্যায় সে মারা যায়। অভিযানে আস্তানাটি থেকে সোহাগ নামের এক যুবককেও আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, সোহাগ জেএমবি সদস্য। তার বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। সে আশুলিয়ার বাইপাইলে একটি কাঁচামালের আড়তে কাজ করত। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, আস্তানা থেকে একটি পিস্তল, তিনটি চাপাতি, স্বর্ণালঙ্কার ও ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। রাতে আশুলিয়ায় এক প্রেস বিফ্রিংয়ে র‌্যাব পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, সম্প্রতি যে কজন জঙ্গী ধরা পড়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই আইনুল সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। মাস ছয়েক আগে সে আইনুল নামে নিজেকে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টিভ পরিচয়ে আশুলিয়ার বাইপাইলের বর্তমান বাসা ভাড়া নেয়। ওই বাসায় বসেই বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা ও হত্যাকা-ের মূল অর্থদাতা হিসেবে কাজ করত। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ত্রিশ লাখ টাকা। তবে এই টাকার উৎস কি সেটা এখনও জানা যায়নি। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে পড়তে গিয়ে আহত হয়। তার দ্বিতীয় স্ত্রী রুমি ও তাদের দুই কন্যাকেও আটক করা হয়েছে। তারা এখন র‌্যাব হেফাজতে রয়েছে। মেজর জিয়া যে কোন সময় গ্রেফতার ॥ গাজীপুরে অভিযানের খবরে ছুটে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান ও জাবেদ পাটোয়ারিও সেখানে হাজির হন। এর আগে শনিবার দুপুরে রাজধানীর স্বামীবাগে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রমে সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কথিত সামরিক শাখার প্রধান মেজর জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে। যে কোন সময় তাকে ধরা হবে। ঘটে যাওয়া বিভিন্ন নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেকে ধরাও পড়েছে। বাকিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। গাজীপুর, টাঙ্গাইল ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
×