ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গুদামে অভিযান

চট্টগ্রামে ৫ হাজার গুঁড়া দুধের ব্যাগে ভুয়া সিল, মেয়াদ উল্লেখ নেই

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৯ অক্টোবর ২০১৬

চট্টগ্রামে ৫ হাজার গুঁড়া দুধের ব্যাগে ভুয়া সিল, মেয়াদ উল্লেখ নেই

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে গুঁড়া দুধের গুদামে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। মেয়াদবিহীন আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের ব্যাগে ‘নূর ডেইরি এ্যান্ড ফুড প্রসেসিং’ প্রতিষ্ঠানের সিল ও মেয়াদ সেঁটে দেয়া হচ্ছে অভিযোগে ওই গুদামে অভিযান চালানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফোরকান এলাহী শনিবার মাঝিরঘাটের সিরোমিয়ার ভবনে অভিযান চালান। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে প্রায় ৫ হাজার গুঁড়া দুধের ব্যাগে ভুয়া সিল সেঁটে দেয়ার অভিযোগ মেলে। অভিযান পরিচালনাকালে প্রতিষ্ঠানের মালিককে তলব করা হলেও হাজির হননি। মালিকের পক্ষে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভুলবশত ব্যাগের গায়ে উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদ লেখা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, ওই গুদামে থাকা আরও দশ হাজার ‘আমূল’ নামের গুঁড়া দুধের ব্যাগ রফতানির অপেক্ষায় রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এ গুঁড়া দুধের ব্যাগগুলোর একপাশে ইংরেজী, বাংলা ও হিন্দি ভাষায় লেখা রয়েছে। ব্যাগের অপরদিকে বিএসটিআইর সিল ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং ওয়েবসাইটের ঠিকানা বাংলায় লেখা রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এসব দুধের প্যাকেট রফতানির উদ্দেশে রাখা হয়েছে কিনা। যদি রফতানি করা হয় তা কিভাবে প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। বিএসটিআই এ প্রতিষ্ঠানকে রফতানির অনুমতি দিয়েছে কিনা তাও প্রশ্নবিদ্ধ। ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের (আইএসও) সনদের মূল শর্ত অনুযায়ী ওয়েবসাইটের ঠিকানা ইংরেজী ব্যতীত অন্য কোন ভাষা লেখা যাবে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ওয়েবসাইটের ঠিকানাটি ‘ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট আমূল ডট কম’ লেখা রয়েছে। ফলে যদি বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের অন্য কোন রাষ্ট্রের এ ব্র্যান্ডের পণ্য রফতানি করা হয় সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইট ঠিকানার মাধ্যমে প্রতারণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইউক্রেন থেকে ২৫ কেজির ব্যাগে ‘মিল্কি কাউ’ ব্র্যান্ডের দুধ আমদানি করেছে ‘নূর ডেইরি এ্যান্ড ফুড প্রসেসিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। নগরীর পাহাড়তলীর সাগরিকা রোডের ফৌজদারহাট ভারি শিল্প এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। সাঁটানো ওই সিলে গুঁড়া দুধের উৎপাদন তারিখ জুলাই ২০১৬ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ জুলাই ২০১৮ লেখা রয়েছে। জুলাই মাসের কত তারিখে গুঁড়া দুধগুলো প্যাকেটজাত করা হয়েছে এবং কত তারিখে মেয়াদ শেষ হবে তা উল্লেখ নেই। তবে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ অনুযায়ী এসব গুঁড়া দুধের মেয়াদ প্রায় দুই বছর। ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের (আইএসও) অনুমোদিত সনদ অনুযায়ী আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে উৎপাদন ও মেয়াদের সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ বা আমদানিকারকরা প্যাকেটের গায়ে নিজেদের সিল সেঁটে দেয়ার পেছনে অশুভ কোন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফোরকান এলাহী ও গোয়েন্দা বিভাগের ফোর্সসহ শনিবার দুপুর ২টা থেকে মাঝিরঘাটের পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার সিরোমিয়ার সুবিশাল ভবনের নিচতলায় অভিযান চালায়। ভবনের নিচে থাকা গুদাম ব্যবহার করছে দুই বা ততধিক আমদানিকারক। গুদামে রক্ষিত ‘মিল্ক কাউ’ ব্র্যান্ডের প্রায় ৫ হাজার ব্যাগ গুঁড়া দুধ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কোন ধরনের উৎপাদন অথবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। সিল মেরে নূর ডেইরি এ্যান্ড ফুড প্রসেসিং মালিক কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মেয়াদ ও উৎপাদন তারিখ সাঁটিয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কোম্পানির পক্ষ থেকে নাজিম উদ্দিন নামের এক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে জানিয়েছেন, ভুলবশত ব্যাগগুলোর গায়ে কোন ধরনের তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। এরই ভিত্তিতে অসমাপ্ত অভিযান পরিচালিত হয়। কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফোরকান এলাহী জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সাঁটানো সিল অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তবে প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ পরীক্ষা করে বিএসটিআই সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট প্রদান করবে।
×