ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

৬৪ জেলার মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছেন

এ পর্যন্ত দেড় লাখ দরিদ্রকে আইনী সহায়তা দিয়েছে লিগ্যাল এইড

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৯ অক্টোবর ২০১৬

এ পর্যন্ত দেড় লাখ দরিদ্রকে আইনী সহায়তা দিয়েছে লিগ্যাল এইড

বিকাশ দত্ত ॥ ২০০৯ সাল থেকে অসহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষের বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা দিয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড) । প্রতিবছর এই সহায়তা পাবার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ দরিদ্র মানুষকে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করার ফলে সেখানেও জনগণ ন্যায় বিচার পাচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ আদালতেও হত দরিদ্রদের সহায়তায় একটি শক্তিশালী কমিটি রয়েছে। ১৬৪৩০ নম্বরে ডায়াল করে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা নিতে পারছেন দরিদ্র ও দুস্থরা। এদিকে পর্যাপ্ত নথিসহ জেল আপীল মামলার আবেদন পাঠানোর জন্য দেশের ৬৪ কারাগারে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। মামলাজট নিরসনে জেলা ‘লিগ্যাল এইড অফিস’কে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজে লাগানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার চায় এডিআর পদ্ধতির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করতে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশে সরকারী খরচে আইনী সহায়তার পদ্ধতি চালু আছে। রাষ্ট্রের শতভাগ মানুষ যাতে আদালতের কাছে প্রতিকার চাইতে পারে, সে জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়। অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক গড় আয় সুপ্রীমকোর্টে আইনগত সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকা এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার উর্ধে নয়। কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক দেড় লাখ টাকার উর্ধে আয় করতে অক্ষম মুক্তিযোদ্ধা, কোন শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় এক লাখ টকার উর্ধে নয় এমন ব্যক্তিদেরই আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। সুপ্রীমকোর্টের জেল আপীল শাখা হতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় যথাযথভাবে জেল আপীল মামলার নথি না পাঠানোয় বহুসংখ্যক মামলা অপ্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে কারাগারে আটক কয়েদীর জেল আপীল আবেদনটি সংশ্লিষ্ট শাখার পক্ষে আদালতে উত্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জেল আপীলকারী প্রত্যাশিত আইনী সহযোগিতা পেতে দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। তাই একটি পূর্ণাঙ্গ জেল আপীল আবেদন পাঠানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই দ-প্রাপ্ত কয়েদির স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র, বিজি প্রেসের ফরম এবং সংশ্লিষ্ট রায়ের কপি সংযুক্ত করে পাঠানোর জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগেও গত মে মাসে জেলখানায় আটক বন্দীদের আইনী সেবার মানোন্নয়নে দেশের প্রত্যেকটি জেলার কারাগারে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। ওই চিঠিতে বিনা বিচারে আটক ও অসহায় বন্দীদের সরকারের বিনামূল্যে আইনী সেবার বিষয়ে অবহিত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ যেন লিগ্যাল এইড কমিটির সঙ্গে তথ্য বিনিময় করেন সে কথাও বলা হয়েছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সূত্রে জানা যায়, একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সমাজের দরিদ্র, নিপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা বিধান করা। এ কারণে আইনগত সহায়তা ও মৌলিক অধিকার একটি অপরটির পরিপূরক। সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে একমাত্র আইন আদালতের মাধ্যমেই মানুষ তার নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কিন্তু দারিদ্র্য কিংবা অর্থের অভাবে কেউ যদি তার বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারে অথবা আইনের আশ্রয় লাভ করতে না পারে তবে তার অন্য সব মৌলিক অধিকারগুলোও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। আইন মানুষে মানুষে কখনও ভেদাভেদ করে না। ন্যায়বিচারের মূল কথাই হলো আইনের চোখে সবাই সমান। আর্থিক দৈন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনভাবেই বাধা হতে পারে না। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের ৬৪টি জেলায় ২০০৯ সালে আইনী সহায়তা পেয়েছিলেন ৯ হাজার ১৬০ জন, ২০১০ সালে ১১ হাজার ২৬৬, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৫৬৮ জন, ২০১৩ সালে ১৫ হাজার ৪৫০, ২০১৩ সালে ১৯ হাজার ৪৯৩, ২০১৪ সালে ২৫ হাজার ২৮৩, ২০১৫ সালে ৩০ হাজার ৪০৯ এবং ২০১৬ সালে (ফেব্রুয়ারি ) ৫ হাজার ৩৭৩ জনকে আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ৬৭ হাজার ২৪৭জন, পুরুষ ৬১ হাজার ৪০৪ এবং শিশু রয়েছে ৩৫১ জন। এ সময়ের মধ্যে সুপ্রীমকোর্টে জেল আপীল মামলায় সুবিধা ভোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৫১৭ জন। দেশের ৬৪ জেলায় হতদর্দ্রি মানুষের আইনী সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। লিগ্যাল এইড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ২৯ হাজার ১৩৬ জনকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। দরিদ্্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার ২০০০ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ নামে একটি আইন প্রণয়ন করে। ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে। এপ্রিলের ২৮ তারিখ থেকে তা কার্যকর হয়। আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ২০০০ সালের ১১ জুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা অনুয়ায়ী লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে শুধুমাত্র হতদরিদ্রদেরই আইনী সহায়তা প্রদান করা হয় না। এর বাইরেও আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।
×