ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্টকার্ড বিতরণে ইসির প্রচার নেই, জনগণের ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৯ অক্টোবর ২০১৬

স্মার্টকার্ড বিতরণে ইসির প্রচার নেই, জনগণের ভোগান্তি

শাহীন রহমান ॥ স্মার্টকার্ড বিতরণে ইসির কোন প্রচার নেই। ফলে কোন এলাকায় কোন দিন থেকে কার্ড দেয়া হবে সে বিষয়ে বেশিরভাগ নাগরিকই অবগত নন। তথ্য না জানায় বেশিরভাগ নাগরিক স্মার্টকার্ড নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। ঝাড়ছেন ইসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ। তারা জানান, ইসি যদি ঠিকমতো প্রচার চালাত তাহলে আজ এ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতো না। কোথায় কাদের কার্ড দেয়া হবে ইসি যদি না জানায় তাহলে আমরা কেমন করে বুঝব আমাদেরটা কোথায় দেয়া হবে। এ অবস্থায় নাগরিকরা বলেছেন, যেদিন যেসব এলাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে তা আগেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হলে এ সমস্যা হতো না। সরেজমিন রমনার সিদ্ধেশ্বরীতে স্মার্টকার্ড বিতরণ দেখতে গিয়ে দেখা গেছে, তথ্য না জানার কারণে অন্য এলাকা থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে এসে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের একজন ইফতেখার উদ্দিন গুলশান এলাকা থেকে এসেছিলে স্মার্টকার্ড নিতে। তিনি ক্যাম্পে এসে দেখেন তার কার্ড দেয়া হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্মার্টকার্ড নেয়ার জন্যই ক্যাম্পে এসেছি। এখানে এসে দেখি আমার কার্ড দেয়া হচ্ছে না। আগে জানা থাকলে এ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতো না। তিনি বলেন, এখানে এসে জেনেছি আমাদের কার্ড পরে দেয়া হবে। এ বিষয়ে ইসির প্রচার থাকলে এ সমস্যায় পড়তে হবে হতো না। শুধু তাই নয়, কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। বিশেষ করে যাদের মূল জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে তারা কিভাবে স্মার্টকার্ড তুলবেনÑ সে বিষয়ে কিছুই জানেন না। ক্যাম্পে গিয়ে এ বিষয়ে কোন তথ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কার্ড বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারছেন না। আবার নাম, ঠিকানা সংশোধন ও ভোটের এলাকা পরিবর্তনের কারণে অনেককে কার্ড তুলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সার্ভারে তথ্যের আপডেট না থাকায় কার্ড না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে হচ্ছে। এছাড়া নির্দিষ্ট এলাকার জন্য কার্ড বিতরণে মাত্র একদিন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলে নির্ধারিত দিনে যারা কার্ড নিতে পারেননি পরবর্তীতে তাদের আর কোন কার্ড দেয়া হচ্ছে না। বলে দেয়া হয়েছে কার্ড বিতরণ শেষে থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ নির্ধারিত দিনের পরে এলেও তাদের কার্ড দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ৩ অক্টোবর থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। এর আগে ২ অক্টোবর স্মার্টকার্ড বিতরণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মার্টকার্ড বিতরণ উপলক্ষে প্রথম কয়েক দিন বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়। প্রথম দফায় আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীর দুটি থানার চারটি ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে। কয়েক দিন বিজ্ঞাপন দেয়ার পর এ বিষয়ে ইসির আর কোন প্রচার নেই। যে কারণে কেউ কার্ড বিতরণের সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। ফলে প্রত্যেক দিন অন্য এলাকা থেকে কার্ড নিতে এসে জনগণ যেমন ফিরে যাচ্ছে; আবার যে এলাকায় কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে সেই এলাকার বাসিন্দাও ঠিকমতো জানে না তাদের কার্ড বিতরণ সম্পর্কে। সঠিক তথ্য না জানার কারণে বেশিরভাগ নাগরিকই নির্ধারিত দিনে তাদের কার্ড নিতে ক্যাম্পে যাচ্ছে না। গত ৩ অক্টোবর থেকে রমনার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত জানা গেছেÑ ৩০ ভাগ ভোটারও তাদের কার্ড সংগ্রহ করেননি। এই ওয়ার্ডে আগামীকাল সোমবার কার্ড বিতরণ শেষ হচ্ছে। অথচ ৭০ ভাগ নাগরিকের কার্ড বিতরণ না করেই আগামী মঙ্গলবার থেকে অন্য এলাকায় কার্ড বিতরণ শুরু হবে। ইসির পক্ষ থেকে কার্ড বিতরণের প্রচার যেমন নেই, তেমনি কার্ড বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সঠিক কোন নির্দেশনা দিতে পারছেন না। শুধু বিতরণ ক্যাম্পে একটি তালিকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে ক্যাম্পে এসে তালিকা দেখে জানতে পারছেন তার কার্ডটি কবে দেয়া হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার পাশাপাশি বিটিআরসি থেকে একটি শর্টকোড দেয়া হয়েছে। যেকোন মোবাইল থেকে শর্টকোডে ফোন করলেই কার্ড বিতরণের তারিখ সম্পর্কে জানা যাবে। আবার ভোটার আইডি কার্ড ও জন্মতারিখ লিখে যে কোন মোবাইল থেকে এসএমএস করলেও জানা যাবে কখন কেথায় তার কার্ড দেয়া হবে। এছাড়া এনআইডির ওয়েবসাইটে গিয়েও পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ লিখে সার্চ দিলেও জানা যাবে কখন কোথায় কার্ড বিতরণ করা হবে। তবে কার্ড নিতে আসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগই ইসির শর্টকোড, এসএমএস সম্পর্কে অবহিত নন। আবার ওয়েবসাইটের কোন অপশনে গিয়ে সার্চ করতে হবে তাও জানেন না। কয়েকজন ভুক্তভোগী এ প্রতিবেদককে জানান, কার্ড বিতরণের সময়সূচী সম্পর্কে ইসির এসব অপশন সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। এ বিষয়ে ইসির প্রচারও নেই। তারা দাবি করেন, কার্ড বিতরণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে ইসির প্রচার চালাতে হবে। বিশেষ করে যেদিন যে এলাকায় বিতরণ করা হবে ওই দিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে। তারা উল্লেখ করেন, কর্মব্যস্ততার এ দিনে অফিসের কাজ ফেলে ক্যাম্পে গিয়ে সময়সূচী জানা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ছয় দিনে রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ও উত্তরা থানার এক নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র ৩০ ভাগ নাগরিক তাদের স্মার্টকার্ড পেয়েছেন। সার্ভারে জটিলতার কারণে কিছু লোক কার্ড পাননি। এর বাইরে বেশিরভাগ লোকজন তথ্য না জানায় কার্ড সংগ্রহ করতে যাননি। ফলে বিপুলসংখ্যক লোকজনের কার্ড বিতরণে থানা অফিসের জটিলতার মধ্যে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। এদিকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে নাগরিকদের আগ্রহী করার জন্য প্রচার বাড়াতে বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ। সেই সঙ্গে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সুবিধায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি। তবে সিইসির নির্দেশের কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনের পর তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গ্রামে হলে মুখে মুখে একজন থেকে আরেকজনে খবর চলে যায়। কিন্তু শহরে সবাই আবদ্ধ থাকায় খবর পান না। গণমাধ্যমের পাশাপাশি মসজিদে মাইকিং করতে বলেছি। এছাড়া মোবাইলে এসএমএস করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, রমনা ও উত্তরা থানার কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে কাজ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে যে এলাকা দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে সেগুলোতে কার্ড বিতরণ শেষ হলে যেসব ভুলত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতে পরবর্তী কেন্দ্রগুলোর কাজ শুরু করার তারিখ জানানো হবে। তবে নির্ধারিত দিনে যারা স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে ক্যাম্পে গেছেন তারা প্রায় সবাই কার্ড নিতে পেরেছেন। গত ৩ অক্টোবর থেকে বিতরণ শুরু হলেও গত শুক্র ও শনিবার বেশি মানুষ কার্ড সংগ্রহ করেছেন। ফলে এ দুই দিনে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে হয়েছে। শনিবার কার্ড সংগ্রহকারী মোঃ ফিরোজ নামের এক ব্যক্তি জানান, এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কার্ড পেয়েছি। কার্ড পেয়ে খুব সন্তুষ্ট। কার্ডটাও অনেক সুন্দর হয়েছে। তবে কিছু ভুলত্রুটির কারণে যারা কার্ড সংগ্রহ করতে পারেননি তাদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখা হয়েছে বলে জানান থানা নির্বাচন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে যারা কার্ড পাননি তাদের কার্ড পরে পৌঁছে দেয়া হবে। তবে ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। বিতরণে প্রথমদিকে যে ভুলত্রুটি ছিল আগামীতে তা থাকবে না। কোন কাজ কেউ নিখুঁতভাবে করতে পারে না। তাই স্মার্টকার্ড বিতরণেও কিছু ভুলত্রুটি রয়েছে। পরবর্তীতে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিতরণ করা হবে। এদিকে রমনা থানায় কার্ড বিতরণে যান্ত্রিক জটিলতা কম থাকলেও উত্তরা থানায় প্রথম থেকেই রয়েছে যান্ত্রিক জটিলতা। ফলে কার্ড সংগ্রহে প্রথম থেকেই নাগরিকদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া সেখানে কার্ড বিতরণে রয়েছে অব্যবস্থাপনাও। এছাড়াও আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। আবার সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না থাকায় বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ডেস্ক খোলার নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি।
×