ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মক্ষম জনশক্তি

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৯ অক্টোবর ২০১৬

কর্মক্ষম জনশক্তি

শ্রমজীবী মানুষের কাছে শ্রমের মূল্য অত্যধিক। তার দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কর্মকুশলতা ও নিষ্ঠার সমন্বয় তাকে প্রসারিত করে কর্মের সুনিপণতায়। মানবসম্পদ তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন সে সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়। তার শ্রম থেকে অর্জিত হয় যদি জনচাহিদা পূরণের উপকরণসমূহ, তবেই ফলাফল হতে পারে মূল্যবান। কিন্তু যদি থেকে যায় অব্যবহৃত, যোগ্য স্থানে না হয় ঠাঁই কিংবা দক্ষতা যদি হয়ে পড়ে নির্জীব, তবে সকলই হয়ে যায় বৃথা। মানবসম্পদ হয়ে পড়ে বোঝা। এই বোঝার ভার লাঘব করা তখন দুঃসাধ্য প্রায়। ষোলো কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের জনগণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দেশে-বিদেশে তার শ্রম ব্যবহার অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে হয় সহায়ক। হয়ে পড়ে সে মানব মূলধন। এই মূলধনকে কর্মক্ষম করে তোলা গেলে মিলতে পারে আর্থিক মুনাফা। জীবনধারণের ক্ষেত্রকে করতে পারে আরও সম্প্রসারিত। শ্রমজীবী মানুষের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন যেমন কর্মসংস্থানের, তেমনি শ্রমজীবীকেও হতে হবে দক্ষ। অদক্ষতা বিপর্যয় বাড়াতে পারে কর্মক্ষেত্রে। তাই দক্ষ জনবলই কর্মে নিয়োগ করা হয়ে পড়ে বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে এবং এই বৃদ্ধি ২০৪০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বর্তমানে দেশে পনেরো বছরের অধিক বয়সী শ্রমশক্তি রয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ। মানব মূলধন হিসেবে অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব যথেষ্ট বলে প্রতিভাত। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে এদের দক্ষতায় ঘাটতি। দেশের শিল্প-কারখানায় কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ জনবলের অভাবে প্রতিবছর ছয় শ’ কোটি ডলার বা প্রায় সাতচল্লিশ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে বলে এফবিসিসিআই দাবি করছে। কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ জনবলের চাহিদা থাকলেও সাধারণ শিক্ষায় ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা তা পূরণ করতে পারছে না। দেশের শিল্পায়নের ধারা বেগবান করতে দক্ষতা ও উদ্ভাবন খাতে বিনিয়োগ নামমাত্র। দেশের ষাট শতাংশের বেশি মানুষের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে হলেও দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞানের অভাবে শিল্পায়নের সুফল কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশের শ্রমবাজারে এমনিতেই প্রতিবছর কুড়ি লাখ নয়া কর্মী প্রবেশ করছে। তবে এই কর্মীদের প্রায় চুয়াল্লিশ শতাংশের কর্মসংস্থান হচ্ছে কৃষিতে আর প্রায় ৩৭ ভাগ সেবাখাতে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিক্ষাখাতে এই হার মাত্র কুড়ি শতাংশ। দেশে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বর্তমানে ইতিবাচক হওয়ার কারণে কর্মসংস্থানের হার ক্রমশ বাড়ছে। আর হ্রাস পাচ্ছে অতি দরিদ্রের হার, যা শুভ লক্ষণ মানবসম্পদের জন্য। কিন্তু স্রেফ কৃষি আর সেবা খাতে জনসংখ্যার আধিক্য শিল্প খাতকে এগিয়ে নেয়ার পক্ষে সহায়ক নয়। এমনিতে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা শিল্প-কারখানার চাহিদা উপযোগী নয়। এমনকি নয়া প্রযুক্তিশক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার দক্ষতাও এদেশের শ্রমশক্তির নেই। অবশ্য এই সঙ্কট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। ভিশন-২১-এর পর রূপকল্প-৪১ সামনে রেখে এখন কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থানে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য শেখ হাসিনা বলেছেনও। দেশে শ’খানেক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। অথচ দক্ষ শ্রমিক বা কর্মী তৈরি হচ্ছে না অনুরূপভাবে। প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি ও কাঠামোর দুর্বলতার কারণে ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই কর্মজীবনে সাফল্য পায় না। এর সমাধানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা ও সরকার- এই ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ককে জোরদার করা সঙ্গত। পাশাপাশি শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাঙ্গনের পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজানো উচিত। পাঠ্যক্রমে সৃজনশীলতা, কর্মমুখী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এমনিতেই কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করতে হচ্ছে। যা থেকে বেরিয়ে এসে শিল্পখাতে দক্ষতা বাড়ানো সময়ের দাবি। এটা পূরণে সরকার ও জনগণসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা জরুরী।
×