ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধী যেই হোক

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৯ অক্টোবর ২০১৬

অপরাধী যেই হোক

জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন, যা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের দৃঢ়তার পরিচয়টি আবার সামনে নিয়ে আসবে। অপরাধীর কোন দল থাকতে পারে না। সে দলীয় সদস্যপদের অধিকারী হতে পারে বটে; কিন্তু সেজন্য তার কৃতকর্মের দোষ খারিজ হয়ে যায় না। সেইদিন এখন বিগত। কোন কথিত রাজনৈতিক গডফাদার তার অপরাধমূলক কর্মকা-ের সহযোগী পোষ্যপুত্রকে অনৈতিকভাবে বাঁচানোর আর ক্ষমতা রাখে না। দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। অপরাধের ক্ষেত্রে আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। সেটি প্রভাবিত করার কিংবা আইনের হাত থেকে বাঁচানোর কোন অপতৎপরতা এদেশে আর সম্ভবপর নয়। একটা সময় ছিল যখন জোট সরকারের দলীয় কোন লোক মহাঅপরাধ করলেও শাস্তি পেত না। সরকার কিংবা দলের প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিরা ঐ অপরাধীকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করতেন। এর ফলে তার দেখাদেখি অন্যরাও অপরাধ সংঘটনে উৎসাহী হতো। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারদলীয় কোন সদস্যের পক্ষেই অপরাধ করে শাস্তি এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আইন সবার জন্যই সমান, সে যেই হোক না কেন। সে হতে পারে মন্ত্রীর জামাতা কিংবা হতে পারে কোন এমপির পুত্র অথবা দলের নেতৃস্থানীয় কেউ। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে সংসদে বলেছেন, যারা আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ বিনষ্ট করেছে তাদের কেউই রেহাই পাবে না, তাদের বিচার অবশ্যই হবে। এটা ঠিক যে, প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা, নৃশংসতা ও কুপিয়ে আহত করার পশুত্বের পথ বিএনপি-জামায়াত জোটই শিখিয়ে গেছে। জাতির দুর্ভাগ্য যে, তাদের দেখানো অমানবিকতার ঘটনার রেশ এখনও চলছে। এ থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে হলে অপরাধী যেই হোক না কেন অবশ্যই তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। উন্মুক্ত প্রতিহিংসার বলি সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। প্রকাশ্য দিবালোকে তার ওপর যে বর্বরতা সংঘটিত হয়েছে তা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। ঘৃণা ও ক্ষোভের প্রবল বহির্প্রকাশ যেমন ঘটেছে তেমনি নানা প্রশ্ন তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টাও চলছে। এক্ষেত্রে খাদিজার ওপর হামলাকারীর রাজনৈতিক পরিচয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে কোন কোন প্রচার মাধ্যমে। সে সরকারদলীয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে তার অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় উচ্চারিত হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই। কিন্তু সংসদে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন ‘দল দেখি না, দেখব না, অপরাধীদের সাজা হবেই।’ বাস্তবতা হলো সিলেটের সন্ত্রাসী ঘটনাটি কোন রাজনৈতিক বা দলীয় কোন্দল ছিল না। তবুও একটি চিহ্নিত মহল এ নিয়ে জল ঘোলা করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। সরকারের অপরাধবিরোধী মনোভাবের জোরালো পরিচয় জানার পর আমরা আশা করতে পারি দলীয় পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি কোন ধরনের অপরাধ কর্মে জড়িত হবে না। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে যারা জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে বা করতে চাইছে তারাও সুস্পষ্ট বার্তা পেয়ে গেছে। দেশে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন নীতিটি এখন আর কাগুজে বিষয় নয়। বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। অপরাধকে ঘৃণিত ও প্রতিরোধযোগ্য কর্মকা- হিসেবে বিবেচনা করা এবং অপরাধীকে আইন অনুযায়ী ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেয়ার সংস্কৃতি শক্তিশালী হলে দেশের মানুষ আশ্বস্ত হবে। অপরাধী যেই হোকÑ তার শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে দেশে একদিকে যেমন অপরাধমূলক ঘটনা কমে আসবে, তেমনি রাজনীতির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে অপরাধ সংঘটিত করার প্রবণতাও নিরুৎসাহিত হবে। অপরাধী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক পরিচয় নয়, তার কৃত অপরাধ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি যে রাষ্ট্রের সুশাসন ও স্থিতিশীলতার জন্য জরুরী সে কথা বলাইবাহুল্য।
×