ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুত এগোচ্ছে আইটি খাত

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৮ অক্টোবর ২০১৬

দ্রুত এগোচ্ছে  আইটি খাত

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। আধুনিক সমাজে তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া জীবন ধরতে গেলে অচল। বর্তমান সমাজে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব ভালভাবেই অনুভব করা যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সরকারের এসব উদ্যোগের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের মতের পাথর্ক্য রয়েছে। তারা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়তে এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, যদি কর্মপদ্ধতির আধুনিকায়ন, কাস্টসমাইস সফটওয়্যার (ফরমায়েশী সফটওয়্যার), অবকাঠামো ও স্বল্পমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা তৈরি করা না যায়। তথ্যপ্রযুক্তি মানেই হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্কিং নয়। এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন খুব একটা হবে না। কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন এবং আধুনিক সফটওয়্যার (প্রতিনিয়ত সফটওয়্যারের আধুনিকায়ন করা) ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাহলেই সম্ভব তথ্যপ্রযুক্তির চূড়ান্ত বাস্তবায়ন। তবে এটা ঠিক, দেশ গত কয়েক বছরে এ সেক্টরে অনেক এগিয়ে গেছে। সরকারের আন্তরিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরটি একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বলেন, দেশে কানেক্টিভিটির দিন চলছে। তথ্যপ্রযুক্তির সত্যিকার ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সেক্টরে বিচ্ছিন্নভাবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হলেও তা যথেষ্ট নয়। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে না। সরকারী পর্যায়েই তৈরি করতে হবে তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুণ-তরুণীরা তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরের উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন। দক্ষ জনবল সৃষ্টি না হলে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়া কঠিন। এটা ঠিক, সরকারী সেক্টর থেকে বেসরকারী সেক্টরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারী দফতরগুলোর উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেনি। সরকারী কর্মকর্তাদের কম্পিউটার-ল্যাপটপ দিলেও সেগুলোর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। ই-গবর্নেস তৈরি হচ্ছে না। কর্মকর্তারা তাদের কম্পিউটার আর ল্যাপটপগুলো টিভি ও ফেসবুক ব্যবহারের কাজে লাগাচ্ছেন। কথা ছিল এগুলো ই-ফাইলের কাজে ব্যবহার হবে। দক্ষতা ও আন্তরিকতার অভাবে সরকারী পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এখনও খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সবকিছুর পরেও দেশে তথ্যপ্রযুক্তির গতি ও অগ্রগতি ঘটেছে। তবে সরকারের ভিশন-২০২১ সামনে রেখে বেসরকারী পর্যায়ে অগ্রগতির দিকটি উল্লেখ করার মতো। তবে এ সেক্টরে এখন জরুরী হয়ে পড়েছে শৃঙ্খলা। যে যার মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। এতে তথ্যপ্রযুক্তির যতটা বিকাশ হচ্ছে, তারচেয়ে বেশি বিকাশ ঘটতে পারত শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করলে। এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জনকণ্ঠকে বলেন, এ সেক্টর থেকে দেশের মানুষ এখন ৪৩ ধরনের সরকারী সেবা পাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন তরুণ-তরুণীরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। বিপ্লব ঘটেছে সফটওয়্যার শিল্পে। দেশে তৈরি সফটওয়্যার বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এ থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। সরকারের উদ্যোগ না থাকলে বেসরকারী পর্যায়ে এমন সাফল্য আসতে হয়ত আরও অনেক সময় লেগে যেত। প্রতিটি জেলায় গড়ে তোলা হচ্ছে আইটি পার্ক। কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্কের এক অংশের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে দক্ষ আইটি বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চলছে। ইউনিয়ন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য করার জন্য ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কেবল স্থাপন করা হচ্ছে। পাঁচ শ’টির বেশি এ্যাপস তৈরির কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সব সেক্টরেই কম-বেশি উন্নয়ন ঘটেছে। ভবিষ্যতে দেশ উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমানতালে হাঁটবে। অবশ্য এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, আইসিটি খাতে বর্তমান সরকার সিরিয়াসলি কিছু করতে চাচ্ছে সে বিষয়টি সবার কাছেই পরিষ্কার। বিশেষ করে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন অপারেশনকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনার কাজ লক্ষণীয়। কিছু কিছু বড় কাজের কথা না বললেই নয়। যেমন, সরকারের অনেক কেনাকাটা করা, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট/টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ইত্যাদি বড় ধরনের ভাল অনেক কাজ হয়েছে, যার ওপর ভিত্তি করে সামগ্রিক তথ্যপ্রযুক্তির সেবাগুলো মানুষ পেতে শুরু করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বেসিক কিছু ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রয়োজন হয়, যেগুলোর ওপর নির্ভর করে দেশ সামনে এগিয়ে যায়। এ বেসিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের পাশাপাশি সরকার অনেক প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে যেগুলো আপাতত খুব চমকদার মনে হলেও তার দীর্ঘমেয়াদী কোন ফল পাওয়া যায়নি এবং যাওয়ার কথাও নয়। ‘ঘরে বসে বড় লোক’ হওয়ার মতো অনেক উদ্ভট প্রজেক্ট, হাজার হাজার মোবাইল এ্যাপ তৈরি (যেগুলো মূলত কোন কাজেই লাগছে না), পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট পোর্টাল, বাসে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই দিয়ে সেটাকে ধরে রাখতে না পারার মতো আরাও অনেক প্রজেক্ট পাওয়া যাবে যেগুলোর পেছনে সময় এবং অর্থ ব্যয়ের ফলে মূল ভিত্তিতে বেশি জোর দেয়া যায়নি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের উচিত বিশ্বমানের ভাল সফটওয়্যার প্রকৌশলী তৈরি করা। আমাদের দেশে যেটুকু তৈরি হয় তার বেশিরভাগই বিদেশে চলে যায়। দেশে কাজ করার মতো ভাল প্রকৌশলী পাওয়া যায় না। এগুলো সিরিয়াস কাজ। এগুলোই দীর্ঘমেয়াদী দেশকে পাল্টে দেবে। কিন্তু এ ধরনের সিরিয়াস লোকবল তৈরিতে আমাদের চেষ্টা কম ছিল বলেই মনে হয়েছে এবং বাস্তবতা হলো এই যে, বর্তমানে বাংলাদেশে কয়েক শ’ বিশ্বমানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী পাওয়া যাবে না, যাদের ওপর বিনিয়োগ করে দেশের সফটওয়্যার শিল্প তৈরি হতে পারে। দেশের ভেতরে ভাল ইন্টারনেটসেবা এবং বিদ্যুত নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভাল লোকবল তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। এরাই দেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সরকার বলছে, তথ্যপ্রযুক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে এসেছে। তারা এর সুফল ঘরে বসেই পাচ্ছেন। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশ অনেকদূর এগিয়েছে এটা সত্য। তবে এটা ঠিক তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন নয়। এটা হচ্ছে হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্কিং তৈরি করা। হার্ডওয়্যার মানে কম্পিউটার আর নেটওয়ার্কিং মানে কানেক্টিভিটি মানে সংযোগ ঘটানো। সংযোগ ঘটানোর বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের জন্য প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এসব করে তথ্যপ্রযুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্যে যাওয়া যাবে না। দেশে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা জরুরী। যদি কেউ মনে করে আমি দুই বছরের জন্য এসেছি- কিছু কম্পিউটার কিনে চলে গেলাম। তাহলে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে না। বেশি দাম দিয়ে সফটওয়্যার কিনলেই হবে না, প্রতিনিয়ত এসব সফটওয়্যার আপগ্রেড করতে হবে। আপগ্রেড করতেই সবচেয়ে বেশি খরচ। এ খরচ করতে কেউ রাজি নয়। এটা সরকারী হোক আর বেসরকারী প্রতিষ্ঠানই হোক। একবার যে সফটওয়্যার কেনা হয়েছে তা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। ম্যানুয়্যাল পদ্ধতি থেকে বের হতে হলে কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে। রেলওয়ের টিকেট এক সময় অনলাইনে কেনা যেত। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ ওই সফটওয়্যারে কোন আপগ্রেড করা হয়নি। ইনকাম ট্যাক্সের রিটার্ন দাখিল চুক্তি হয়েছে চার বছর আগে, এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ হচ্ছে কেউ কম্পিউটারে কাজ করতে অভ্যস্ত নন। তারা ম্যানুয়্যালি কাজ করে যাওয়ার কারণেই ই-গবর্নমেন্টস তৈরি হচ্ছে না। বিশ্বের সবচেয়ে দামী সফটওয়্যার কিনলেও ই-গবর্নমেন্টস প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এগুলোর আপগ্রেড এবং দক্ষ জনবল তৈরি না হবে। সরকার বলছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অর্জন ও সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরল সম্মান বয়ে এনেছে। যার প্রতিফলন ঘটে বিদেশী রাষ্ট্রনায়কদের বক্তব্যে। উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতির মাধ্যমে। ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে জিম্বাবুইয়ে থেকে শুরু করে বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে এসব দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন সম্পর্কে বলেছেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবয়নের স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে অনন্য সম্মান। বিগত বছরগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ওয়াচডগ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউসআইএস) পুরস্কার ২০১৫ এবং আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এ্যাওয়ার্ড ২০১৫ অর্জন আমাদের জন্য শুধু গৌরবের নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাফল্য ও কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো হচ্ছে। কানেক্টিভিটি ও আইসিটি অবকাঠামো ॥ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গোটা দেশকে কানেক্টের জন্য কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা করছে। আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তোলার অংশ হিসেবে জেলা এবং উপজেলা পর্যন্ত কানেক্টিভিটি সম্প্রসারিত হয়েছে। বাংলাগভনেট প্রকল্পের আওতায় ৫৮ মন্ত্রণালয়, ২২৭ অধিদফতর, ৬৪ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ৬৪ নির্বাচিত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। ইনফো সরকার-২ প্রকল্পের আওতায় জেলা ও উপজেলার ১৮ হাজার ৫শ’ সরকারী অফিসের কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৮শ’ ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, ২৫৪ এগ্রিকালচার ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (এআইসিসি) ও ২৫ টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। বিসিসি ভবন ও বাংলাদেশ সচিবালয়ে ওয়াই-ফাই স্থাপন করা হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তারা যাতে অফিসের বাইরে থেকে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সে জন্য তাদের মাঝে ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ডাটা সেন্টারটির ওয়েবহোস্টিং ক্ষমতা ৭৫০ টেরাবাইটে দাঁড়িয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বিসিসির এলআইসিটি প্রকল্পের আওতায় একটি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন ॥ ২০১৫ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের একটি বড় ঘটনা ছিল কালিয়কৈরে হাইটেক পার্র্কের অবকঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু করা। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিনিয়োগ বোর্ডের ১২তম সভায় কালিয়কৈরে হাইটেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কালিয়কৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কার্যক্রম শুরু করলে শুধু কালিয়াকৈরে নয় বিভাগীয় এবং কয়েকটি জেলা শহরে হাইটেক ও সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। মামলা জটিলতার কারণে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক এবং কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার পার্ক স্থাপন স্থবির হয়ে পড়েছিল। কালিয়াকৈরে ২৩২ একর জমির উপর হাইটেক পার্কের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ২ এবং ৫নং ব্লকের জন্য হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও সামিট টেকনোপলিস লিমিটেডের সঙ্গে গত ২৮ মে ২০১৫ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আর গত ১১ আগস্ট ২০১৫ তে ৩নং ব্লকের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ফাইবার এ্যাট হোমের কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশ টেকনোসিটি লিমিটেড কাজ শুরু করেছে। যশোরে ৯ দশমিক ৪০ একর জমির ওপর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১৫ তলা মাল্টি টেনেন্ট ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এ ভবনের ১০ তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজের ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সিলেট ইলেক্ট্রনিক সিটি স্থাপনের জন্য ১৬২ দশমিক ৮৩ একর, রাজশাহীতে বরেন্দ্র সিলিকন সিটি স্থাপনের জন্য ৩১ দশমিক ৬২ একর, নাটোরে আইটি ট্রেনিং এ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের জন্য ৭ দশমিক ০৯ একর, আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের জন্য চুয়েটে ৫ একর জমি পাওয়া গেছে। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ॥ আগামী তিন বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণে এক লাখ দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প গুণগত প্রশিক্ষণে ৩৪ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলছে। এর মধ্যে ৪ হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে ফার্স্ট ট্রাক ফিউচার লিডারের (এফটিএফএল) প্রশিক্ষণ, ১০ হাজারকে টপআপ আইটি এবং ২০ হাজারকে ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ংকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ৩ হাজার ৫শ’ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং ১০ হাজার টপআপ আইটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ৬০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। ইন্টারএ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল টেক্স বুক ॥ লেখাপড়ার বিষয়কে আনন্দদায়ক করে উপস্থাপনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১৭টি টেক্স বইকে ডিজিটাল টেক্সবুক বা ই-বুকে রূপান্তর করেছে। আইসিটিভিত্তিক উদ্ভাবনীতে সহযোগিতা ॥ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনীকে উৎসাহিত করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, রেল দুর্ঘটনা এড়াতে আগাম সতর্কীকরণ বার্তা, রোবট তৈরি এ রকম অনেক উদ্ভাবনীতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে আইসিটি ডিভিশন। ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য ৩৯ জনকে ২ কোটি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গবেষণা কাজের জন্য মাস্টার্স -এ ২৩ জন, এমফিল-এ ২ জন, পিএইচডিতে ৬ জনসহ মোট ৭৬ জনকে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ জনকে সর্বমোট ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইসিটি শিল্প বিকাশের নানা ইভেন্ট ॥ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উৎপাদিত পণ্য ও সেবা এবং দেশের আইসিটি শিল্পকে দেশে ও বিদেশে তুলে ধরার লক্ষ্যে বিগত দু’বছরে নানা ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। এসব ইভেন্টের আয়োজন করা হয় সরকারী ও বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে। আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ॥ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার ও এ খাতে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালাকে যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ ২০০৯ এর সংশোধন, সংযোজন ও পুনর্বিন্যাস করে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ ২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়। বেসরকারী এসটিপি গাইডলাইন ২০১৫ এবং আইসটি অধিদফতরের নিয়োগ বিধিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়। ভেনচার ক্যাপিটাল বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। ই-সেবা আইনের খসড়া ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার স্থাপন ॥ বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক সংলগ্ন স্থানে সাড়ে ৭ একর ভূমির উন্নয়নের কাজ চলছে। চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ইউনিয়ন পর্যন্ত ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন। ইনফো সরকার-২ প্রকল্পের আওতায় জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত কানেক্টিভিটির সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যন্ত ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের জন্য আমরা ইনফো সরকার-৩ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫শ’ ৫৪ পৌরসভা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সেন্টার ও ১২শ’ ইউনিয়নে কানেক্টিভিটি স্থাপন করা হবে। সারাদেশে দুই হাজার কম্পিউটার ও ভাষা ল্যাব স্থাপন ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব নামে দেশের ৬৪ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই হাজার কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাংগুয়েজ ল্যাব স্থান করা হয়েছে। সফটওয়্যার সার্টিফিকেশন সেন্টার গড়ে তোলা ॥ সরকারী-বেসরকারী কার্যক্রম পরিচালনায় নানা ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এসব সফটওয়্যারের সার্টিফিকেশনের কোন ব্যবস্থা নেই। সফটওয়্যার সার্টিফিকেশন সেন্টার শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বৃহৎ উপাত্ত বিশ্লেষণ ও টাইটানিয়াম ল্যাব ॥ বৃহৎ উপাত্ত বিশ্লেষণের (বিগ ডাটা এ্যানালাইটিকস) ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিসিসিতে ইতোমধ্যে একটি টাইটানিয়াম ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চার বছরের কর্ম পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প ছাড়াও আরও কিছু প্রকল্প ও কার্যক্রম গ্রহণ হয়। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণকে এগিয়ে নিতে সহয়তা করবে।
×