ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৫-১৬ অক্টোবর ভারতে ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলন

পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বিমসটেক শক্তিশালী করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৮ অক্টোবর ২০১৬

পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বিমসটেক শক্তিশালী করার উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বঙ্গোপসাগরভিত্তিক দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট ‘বিমস্টেক’ শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আগামী ১৫-১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় ‘ব্রিকসবিমস্টেক’ আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছে ভারত। ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আউটরিচ এই বৈঠকে বিমসটেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিশ্বের পাঁচ শক্তিশালী অর্থনীতি দেশের সংগঠন ব্রিক্স রাষ্ট্রপ্রধানরাও অংশগ্রহণ করবেন। অর্থাৎ বিমসটেকের সাত দেশ মিলিত হবে ৫ ব্রিকস দেশের সঙ্গে। সবমিলে গোয়াতে এবার ১২টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মীর সীমান্তে যখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন ব্রিক-বিমস্টেকের এই সম্মেলনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন বার্তা ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বহুপক্ষীয় কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বঙ্গোপসাগরীয় উদ্যোগ হচ্ছে (দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকনোমিক কোঅপারেশন) বিমস্টেক। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান এই জোটের সদস্য। আর ব্রিকস্ হচ্ছে-ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, আদ্যক্ষরের সমন্বয়ে নামকরণকৃত উদীয়মান জাতীয় অর্থনীতির একটি সংস্থা। মূলত ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত হবার পূর্বে এই সংস্থাটি ‘ব্রিক’ নামে পরিচিত ছিল। ব্রিকস্-বিমস্টেকের এই সম্মেলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আউটরিচ বৈঠকের মাধ্যমে আঞ্চলিক এই জোট আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার সুযোগ তৈরি হবে। এতদিন শুধু সদস্যরাষ্ট্রগুলো অংশগ্রহণ করত। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির আরও পাঁচদেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও অংশগ্রহণ করবেন। তারা বিমস্টেকের সম্মেলন পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি এই জোট শক্তিশালী করতে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দিতে পারেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা এবং এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আউটরিচ বৈঠকে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করছি, এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে বিমস্টেক আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাবে। জানা গেছে, দীর্ঘদিনেও সার্ক সফল না হওয়ায় সার্কের আদলে সমান্তরাল আরেকটি জোট করার চিন্তা করছে বাংলাদেশ ও ভারত। এই বাস্তবতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের ওপর জোর দিতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। নয়া দিল্লীতে সফররত বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি বলেন, এখন সার্কের কথা ভুলে যান। বিমসটেকের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে আমি বাংলাদেশকে আহ্বান জানাচ্ছি। কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত ঘোষণার প্রেক্ষিতে তিনি এ পরামর্শ দেন। সার্কের অগ্রগতিতে পাকিস্তানকে প্রধান বাধা হিসেবে মন্তব্য করে পিনাক রঞ্জন বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে পাকিস্তান অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আচরণও বদলায়নি দেশটি। জোটভুক্ত দেশগুলোকে বাস্তবানুগ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সামনের কয়েক বছর পাকিস্তানকে সার্কের বাইরে রাখতে হবে। তাহলেই একদিন দেশটি এই জোটের উপকারিতা বুঝবে। পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ভারত বিমসটেককে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, সার্ক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান এ জোটের সদস্য নয়। সার্কের বদলে বিমসটেককে শক্তিশালী করতে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপকে বিমসটেকের ‘পর্যবেক্ষক’ করার চিন্তাভাবনা চলছে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাকায় বিমসটেক বাংলাদেশের জন্য সহযোগিতার নতুন পথ খুলে দেবে বলেও সাবেক এ ভারতীয় কূটনীতিক মন্তব্য করেন। এদিকে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক যেকোন সময়ের চেয়ে এখন সবচেয়ে ভাল। গত কয়েক বছরে দুই প্রধানমন্ত্রীর যতবার দেখা হয়েছে কথা হয়েছে তাও বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। ক্রিকেট থেকে জন্মদিন সবকিছুতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। পেট্রাপোল স্থলবন্দর উদ্বোধনে ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাতে কথা বলেছেন মোদি। শুধু তাই নয়, ভারতের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে কিছু অমীমাংসিত বিষয়ও আছে। এরমধ্যেই নতুন সমস্যা বৈশ্বিক পর্যায়ের সন্ত্রাসবাদ। যার ছায়া বাংলাদেশ ও ভারতেও পড়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব নিয়ে সরাসরি কথা হওয়া দরকার। জানা গেছে, এবারের ব্রিকস্-বিমস্টেক সম্মেলনে শুধু নরেন্দ্র মোদিই নন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিমস্টেক রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি এবারের সম্মেলনে অংশ নেবেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি দিলমা রৌসেফ, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভøাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। এদিকে, বিমসটেক এখন উন্নয়ন এবং অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৪টি খাতের ওপর জোর দিচ্ছে। এই খাতগুলো হচ্ছে-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য, কৃষি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সন্ত্রাসবাদ ও আঞ্চলিক অপরাধ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
×