ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখতে মোটেও কোন চাপে নেই’

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৮ অক্টোবর ২০১৬

‘শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখতে মোটেও কোন চাপে নেই’

রুমেল খান ॥ ‘সামার ওপেনের আসর শেষবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেবার দ্বিমুকুট জিতেছিলাম। এবারও চেষ্টা করব শিরোপা দুটো অক্ষুণœ রাখতে। তবে এজন্য আমি কিন্তু মোটেও কোন চাপে নেই।’ কথাগুলো বাংলাদেশের ২৩ বছর বয়সী, সুদর্শনা এবং শীর্ষ প্রমীলা শাটলার শাপলা আক্তারের। ‘সামার ওপেন ব্যাডমিন্টন’ প্রতিযোগিতাটি তিন বছর বিরতির পর আবারও গড়াতে যাচ্ছে কোর্টে। টুর্নামেন্টটি প্রথম হওয়ার কথা ছিল গত ১ অক্টোবর। কিন্তু পরে এটি পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর করা হয়। শাপলা বলেন, ‘এখন শুনছি এটা নাকি আরও পিছিয়ে যাবে। তবে এই অক্টোবরেই অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টটি।’ নিজের বাড়ি পাবনায় শাপলা এসেছেন মাস দু’য়েক হয়ে গেল। এখানেই অনুশীলন করছেন পাবনা ইনডোর জিমন্যাশিয়ামে। জানান, এখানকার পরিবেশ মন্দ নয়। এবারের সামার ওপেনে বরাবরের মতোই শাপলা অংশ নেবেন একক ও দ্বৈত ইভেন্টে। ‘দ্বৈতে এবার সম্ভবত এলিনার সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলছি না। কারণটা দীর্ঘদিন যোগাযোগের অভাব এবং অনুশীলনে লম্বা গ্যাপ।’ শাপলার ভাষ্য। আরও জানান, ‘এই মুহূর্তে আমি একটু অসুস্থ। জ্বরে ভুগছি। শরীরটা দুর্বল। আশা করছি সময়মতো সুস্থ হয়ে যাব।’ শাপলা অনেক বছর ধরে খেলছেন নারায়ণগঞ্জের নিট কনসার্নের হয়ে। তবে এবার দল বদল করেছেন তিনি। এবার তার নতুন ক্লাব নারায়ণগঞ্জের কাওয়াসাকি ব্যাডমিন্টন ক্লাব। বললেন, ‘ক্লাবটি আমাকেসহ চার-পাঁচ শাটলারকে স্পন্সরও করছে।’ আসন্ন সামার ওপেনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্দিষ্ট কারোর নাম বলতে চান না শাপলা, ‘সবাইকেই সমানভাবে সমীহ করি।’ সামার ওপেন টুর্নামেন্টটি যদিও জাতীয় নয়, তবুও এই টুর্নামেন্টটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন শাপলা। কেননা এখানে খেললে র‌্যাঙ্কিং বৃদ্ধির সুযোগ আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তার র‌্যাঙ্কিং ১। এটা অনেকদিন ধরেই। ২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সামার ওপেনে টানা একক ও দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন শাপলা। শুধু মাঝখানে ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি (শাপলার অন্য সাফল্যগুলোর মধ্যে আছে ২০১০ এসএ গেমসে এককে রৌপ্য, দলগত ব্রোঞ্জ; ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে ট্রিপল ক্রাউন, ২০১৪ সালে জাতীয় এককে ও দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৬ সালে এসএ গেমসে দলগত ব্রোঞ্জ এবং জাতীয় প্রতিযোগিতায় ট্রিপল ক্রাউন অর্জন)। দ্বৈতের চেয়ে এককে খেলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন শাপলা, ‘ডাবলসে বোঝাপড়া না হলে ব্যর্থ হতে হয়, বেশি খাটুনি হলেও সিঙ্গেলসে নিজের ইচ্ছে মতো প্ল্যান মোতাবেক খেলা যায়।’ মানবিক বিষয় নিয়ে বিএ’র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শাপলার কিছু আক্ষেপও আছে। সেটা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনকে নিয়ে, ‘ফেডারেশনের আগের কমিটির কাছ থেকে আমরা কিছুই পাইনি। প্রাইজমানি বাড়ানো, র‌্যাঙ্কিংধারী শাটলারদের মাসিক বেতন বা ভাতার আওতায় আনা, টুর্নামেন্টের সংখ্যা বাড়ানো, সিনিয়রদের বিদেশে খেলতে পাঠানো, বাছাই করা শাটলারদের নিয়ে সারাবছর আলাদা করে একটি অনুশীলন ক্যাম্প চালু এবং বিদেশী কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ প্রদানÑ কিছুই করেনি তারা। এবার নতুন কমিটি এসেছে। আশাকরি তারা আমাদের অভাবগুলো পূরণ করবে।’ বিদেশে এর আগে ১০-১২ বার খেলতে যাওয়া শাপলার সেরা পারফর্মেন্স নেপালে ইন্টারন্যাশনাল সিরিজে এককে তৃতীয় স্থান অধিকার করা (২০০৭)। সর্বশেষ তিনি বিদেশে খেলতে যান ২০১১ সালে। তারপর ফেডারেশন জুনিয়র শাটলারদের পাঠালেও তাকে আর বিদেশে পাঠায়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ-আক্ষেপ দুটোই প্রকাশ করেন শাপলা, ‘বিদেশে খেলতে না পাঠালে এভাবে দেশীয় টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে র‌্যাঙ্কিং বাড়িয়ে কি লাভ! আমাদের থেমে যেতে হচ্ছে এখানেই। জানতে পারছি না বিশ্বে আমাদের অবস্থান কোথায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলাটা এখন আমাদের জন্য ভীষণ জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু ফেডারেশন তো সেটা বোঝে না!’ ২০০৩ সালে ক্লাস ফোরে পড়া শাপলা আর কতদিন ব্যাডমিন্টন খেলবেন, ‘আর বেশিদিন খেলতে চাই না। খুব বেশি হলে আর দুই-তিন বছর। ফর্মে থাকতেই অবসর নিতে চাই।’
×