ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ার্নকে ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৮ অক্টোবর ২০১৬

ওয়ার্নকে ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগে ৯ ম্যাচ খেলেছেন। তবে খুব বেশি সফল হতে পারেননি সাকিব আল হাসান। মাত্র ১১ উইকেট নিয়েছিলেন আগের ম্যাচগুলোয়। এর মধ্যে সেরা নৈপুণ্য ছিল ২০১০ সালে ইংল্যান্ড দলের সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ২ মার্চ অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে দারুণ বোলিং করে মাত্র ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে তিন ফরমেটেই তিনি এখন সর্বাধিক উইকেট শিকারি। এমনকি ওয়ানডেতে ঘরের মাটিতেও তিনি সর্বাধিক উইকেট শিকার করেছেন বাংলাদেশের পক্ষে। তবে শুক্রবার সফরকারী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই আরেকটি রেকর্ড গড়লেন তিনি। ঘরের মাটিতে উইকেট শিকারের দিক থেকে কিংবদন্তি লেগস্পিনার অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্নকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ওপেনার জেসন রয়ের উইকেট শিকারের পরই তিনি এই বিরল কৃতিত্ব দেখান। এ উইকেট নেয়ার পর ঘরের মাটিতে ৮৯তম ম্যাচে ১৩৫ উইকেট নিয়ে তিনি ওয়ার্নকে পেছনে ফেলেন। ওয়ার্নের উইকেট ৮৪ হোম ম্যাচে ১৩৪টি। এখন পেছনে ফেলার অপেক্ষা শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনকে। ওয়ানডের ইতিহাসে ঘরের মাটিতে স্পিনারদের মধ্যে সর্বাধিক ১০৯ ম্যাচে ১৫৪ উইকেট শিকার করেছেন সাবেক এ লঙ্কান স্পিনার। বাংলাদেশের মাটিতে বাঁহাতি স্পিনটা ভয়ানক সফরকারী দলের জন্য। আর সেটা যদি সাকিব হন সেক্ষেত্রে আর কোন কথাই নেই। এবার আফগানরাও সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে সেটা টের পেয়েছে। অতীতেও অনেক সফরকারী দলই সেটা দেখেছে। অবশ্য ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তেমন সুবিধাজনক নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি সাকিব ওয়ানডে ক্রিকেটে। ৯ ম্যাচ খেলেছেন ২২.৭৫ গড়ে মাত্র ১৮২ রান করার পাশাপাশি ১১ উইকেট নিয়েছেন। ব্যাট হাতে না পারলেও সাকিব বল হাতে জ্বলে ওঠার ক্ষমতা রাখেন। সে কারণেই তাকে নিয়ে প্রতিপক্ষের বাড়তি পরিকল্পনা সাজাতে হয়। এখন পর্যন্ত সে কারণেই ৪১৬ রেটিং নিয়ে তিনি বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার। বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়েও আছেন চার নম্বরে। তাই ইংলিশদের বিরুদ্ধে ধীরগতির উইকেটে তিনি অনেক বড় ভরসার কারণ হবেন তা নিশ্চিতভাবেই দলের আস্থার কারণ ছিল। টস জিতে ইংলিশ ওপেনাররা দারুণ শুরু দিয়েছিলেন। যদিও ইংল্যান্ড মানেই বল হাতে দুরন্ত হয়ে ওঠেন পেসার শফিউল ইসলাম। এবারও সেটার স্বাক্ষর রাখলেন। প্রথম আঘাতটা তিনিই হানেন ইনিংসের অষ্টম ওভারে ওপেনার জেমস ভিন্সকে শিকার করে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই অবশ্য সাকিবকে আক্রমণে নিয়ে এসেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজে তেমন সুবিধা করতে না পেরে। নিজের প্রথম ওভারে ৬ রান দেন সাকিব। পরের ওভারে ৯! এ কারণে প্রান্ত বদল করে এক ওভার বিরতি দিয়ে আবার তাকে আনেন মাশরাফি। এরপরই সফলতা পেয়ে যান এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ইনিংসের ১২তম ওভারে শিকার করেন জেসন রয়কে। দারুণ ব্যাট করছিলেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা এ ওপেনার। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন তিনি। তাকে ঝুলিয়ে দেয়া বলে প্রলুব্ধ করেন সাকিব, উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে লং অফ দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন সাব্বির রহমানের হাতে। ৪০ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪১ রান করে রয় বিদায় নিলে স্বস্তি আসে বাংলাদেশ শিবিরে। এর মাধ্যমে সাকিবের ঘরের মাটিতে উইকেট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৫! গড় ২২.৭৮। এতদিন ১৩৪ উইকেট নিয়ে ঘরের মাটিতে উইকেট শিকারে ওয়ার্নের পাশাপাশি ছিলেন তিনি। তাকে ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব। তবে এখনও ছোঁয়া বাকি মুরালিধরনকে। তিনি ১০৯ ওয়ানডে খেলে ২৪.৬২ গড়ে ঘরের মাটিতে শিকার করেছেন ১৫৪ উইকেট। স্পিনারদের মধ্যে এটাই ঘরের মাটিতে সেরা সাফল্য। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সাকিবের ওপর শুধু মুরালিধরন। বোলিং গড়ে অবশ্য ওয়ার্ন-মুরালি দু’জনকেই পেছনে ফেলেছেন তিনি। ক্যারিয়ারে ১৬১ ওয়ানডেতে ২১৩ উইকেট এখন সাকিবের, ৭ বার ৪ উইকেট এবং ১ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন। ওই একবার পাঁচ উইকেট নেয়ার ঘটনাও সাকিব দেশের মাটিতেই করে দেখিয়েছেন। সার্বিকভাবে ৪৪ বার উইকেটশূন্য সাকিব ঘরের মাটিতে উইকেট পাননি ২১ ইনিংস। তবে ৫ বারই নিয়েছেন ৪ উইকেট। ঘরের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশের সেরা সাকিব ১০৪ উইকেট নিয়ে, তবে টি২০ ক্রিকেটে পেসার আল আমিন হোসেন ৩১ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে। অবশ্য সার্বিকভাবে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে উইকেট শিকারে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার শন পোলক। তিনি দেশের মাটিতে ১২৭ ওয়ানডে খেলে নিয়েছেন ১৯৩ উইকেট। এরপর তালিকায় আছেন ব্রেট লি ৯৫ ম্যাচে ১৬৯, গ্লেন ম্যাকগ্রা ৯৫ ম্যাচে ১৬০। এরপরই মুরালিধরন, সাকিব ও ওয়ার্ন। বর্তমানে খেলছেন এমন বোলারদের মধ্যে খুব কাছাকাছিই আছেন ইংলিশ পেসার জেমস এ্যান্ডারসন ৮৮ ম্যাচে ১৩১, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো ৯৩ ম্যাচে ১২৬ উইকেট শিকার করে। তবে সাকিবের পেছনে ঘরের মাঠে উইকেট শিকারে স্পিনারদের মধ্যে অনেক আগেই পিছিয়ে পড়েছেন নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরি ১২৯ ম্যাচে ১২৯, ভারতের অনিল কুম্বলে ৯০ ম্যাচে ১২৬, স্বদেশী আব্দুর রাজ্জাক ৭৯ ম্যাচে ১২২, হরভজন সিং ৯৫ ম্যাচে ১১০ উইকেট নিয়ে। এবার ঘরের মাঠে সেরা হওয়ার জন্য আর মাত্র ১৯ উইকেট প্রয়োজন সাকিবেরÑ তাহলেই মুরালিধরনকেও পেছনে ফেলে সর্বকালের সেরা স্পিনার হয়ে যাবেন ঘরের মাটিতে। এখন সেই অপেক্ষা বিশ্বের চার নম্বর বোলার সাকিবের।
×