ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েও হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না

বৃদ্ধ বাবা নয়, পাঁচ ছেলেরই চাই দুই বিঘা জমি

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৮ অক্টোবর ২০১৬

বৃদ্ধ বাবা নয়, পাঁচ ছেলেরই চাই দুই বিঘা জমি

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ৭ অক্টোবর ॥ ইয়াছিন শেখ, বয়স ৯৮। যৌবনে গাড়িয়াল ছিলেন। চালিয়েছেন গরু-মহিষের গাড়ি। সংসারে ছিল ৫ ছেলে ও ৫ মেয়েসহ ১২টি মুখ। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে সবার মুখে আহার যোগানর ব্যবস্থা করেছেন। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরিশ্রমী ও অক্লান্ত গাড়িয়াল ইয়াছিন শেখ তিলে তিলে তার নিজের অবস্থা পরিবর্তন করেছিলেন। শূন্য থেকে হয়েছিলেন ৪ বিঘা জমির মালিক। এখন বৃদ্ধ বয়সে সম্বল বলতে দুই বিঘে জমি। আর তাই নিয়ে যত অশান্তি। এই দুই বিঘা জমি নিয়ে ছেলেদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে গত ১২ দিন ধরে তালাবদ্ধ ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন এই বৃদ্ধ। আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে সালে ইয়াছিন শেখের স্ত্রী কমলা খাতুন মারা যায়। এরপর থেকেই লিখে দিতে হবে জমি, এই দাবি বৃদ্ধ ইয়াছিন শেখের ছেলেদের। এক এক সময় চরমে উঠে ছেলেদের অত্যাচার। মারধর, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে চলেও গিয়েছিলেন মেয়েদের বাড়ি। আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনে ছেলেরাই। এরপর আবার শুরু হয় অত্যাচার। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ছেলে হারেজ, আফাজ, রফিকুল, শফিকুলকে জমিও লিখে দেন এবং জমি বিক্রি করে টাকাও দেন। তবে তাতেও রেহাই পাননি। বড় ছেলে আফাজ আরও জমি লিখে দেয়ার জন্য অত্যাচার, মারধর শুরু করে। বৃদ্ধ ইয়াছিন শেখ এবার আশ্রয় নেয় বাড়ির পাশেই পার্শ্ববর্তী ঘাগড়া গ্রামে তার চতুর্থ মেয়ে রুনার বাড়িতে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ইয়াছিন শেখের ছেলে আফাজ (৫৮) ও তার নাতি মিন্টু (৩২), মনির (২৮), জমির (২৫) ও শাকিলের (২০) নেতৃত্বে ১০/১২ জন ভাড়াটিয়া গুন্ডা মেয়ে রুনার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বৃদ্ধ ইয়াছিন শেখকে জোরপূর্বক দলিলে টিপসই দিয়ে বাড়ি ও জমিজমা লিখে দিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় আফাজ উদ্দিন তার বৃদ্ধ পিতাকে মারধর শুরু করে। টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যেতে চায়। এলাকাবাসী এগিয়ে এসে ইয়াছিন শেখকে উদ্ধার করে। ঘাগড়া গ্রামে মেয়ে রুনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই রুমের বাড়িতে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ আছেন বৃদ্ধ ইয়াছিন শেখ। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বললে ইয়াছিন শেখ হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। বলেন দুই বিঘা জমি নিয়ে তার দুর্দশার কথা। চোখের পানি ফেলে বলেন ছেলেরা শুধু জমি লিখে নিতে চায়। খাবার দেয় না, ভরণ-পোষণ ও সেবা যতœ করে না। জমি লিখে দিতে না চাইলেই মারধর করে। মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা নাই। জমির জন্য এখানে এসেও হানা দেয় তারা। ইয়াছিন শেখের মেয়ে রুনা (৩৮) জানায়, সে বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরের ইসলামিয়া সরকারী হাইস্কুলে ঝাড়ুদারের কাজ করে। তার স্বামী ইউনুস আলী স্কুলের সামনে একটি দোকানে সিএনসি মিস্ত্রির কাজ করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বাড়ির বাইরে থাকে। এ সময় তার ভাই আফাজ ও তার লোকজন যাতে তার বৃদ্ধ বাবাকে অত্যাচার না করতে পারেন সে জন্য বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী গত ২৬ সেপ্টম্বর থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবাকে একটি রুমে তালাবন্ধ করে রাখা হয়।
×