ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম বেড়েই চলেছে, স্বস্তি পেঁয়াজে

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৮ অক্টোবর ২০১৬

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম বেড়েই চলেছে, স্বস্তি পেঁয়াজে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান খাদ্য চালের দাম বেড়েই চলেছে। দাম বাড়ছে ভোজ্যতেলের। আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লবণ, চিনি ও ডাল। ভোক্তাদের স্বস্তি শুধু পেঁয়াজে। সাগর ও নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। বরফের অভাবে মৎস্য আহরণ কেন্দ্রগুলোতে মাছ সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় রাজধানীতে বাড়তে শুরু করেছে বাঙালীর প্রিয় ইলিশ মাছের দাম। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। আর ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশী পেঁয়াজ। গত কয়েক বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতে এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া মৌসুম সামনে রেখে দেশেও পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন চাষীরা। তাই এ বছর পেঁয়াজের দাম বাড়ার আপাতত কোন আশঙ্কা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কষ্ট কিছুটা বেড়েছে। তাদের বাড়তি দাম দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুদ থাকার পরও কেন চালের দাম বাড়ছে সেই প্রশ্ন ভোক্তাদের। তারা বলছেন, সরকার সারাদেশে এখন ১০ টাকা কেজিতে গরিব মানুষদের চাল দিচ্ছে। ফলে চালে কোন বাড়তি চাপ নেই। তারপরও রাজধানীতে কেন চালের দাম বেশি? সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়ত ও মিলমালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীর বাদামতলী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং ঢাকার বাইরে নওগাঁ, নাটোর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী এবং কুষ্টিয়ার মোকামগুলোতে শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। দাম বেড়ে এখন প্রতি কেজি সরু চাল বিশেষ করে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫৬ টাকায় এবং মাঝারি মানের মোটা চাল পেতে ভোক্তাকে খরচ করতে হচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকা। এছাড়া পাইজাম লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ এবং মোটা চাল স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকায়। জানা গেছে, চালের দাম বাড়ার পেছনে দেশের খ্যাতনামা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোড়কজাত করে এখন চাল বিক্রি করা হচ্ছে। মিল ও মোকাম থেকে মোড়কজাত হয়ে চাল আসছে ঢাকায়। এই চাল ক্রেতাদের বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আগে সুগন্ধি চালে সুদৃশ্য মোড়ক ব্যবহার করা হতো। এখন সাধারণ মানের চালও বিক্রি হচ্ছে মোড়কজাত প্যাকেটে। এতেও চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। চালের দাম স্বাভাবিক রাখতে পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সাধারণ মানের চালও প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। সূত্রমতে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়। ধান থেকে চাল উৎপাদনের জন্য প্রচুর স্বয়ংক্রিয় মিল গড়ে উঠেছে। এখন সুদৃশ্য মোড়কে সাধারণ চাল মোড়কজাত করে ব্র্যান্ডিং বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে আছে এরিস্টোক্র্যাট এগ্রো, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, আড়ং, এসিআইসহ বেশকিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। এদের পাশাপাশি এখন নতুন কিছু প্রতিষ্ঠানও বেশি দামের আশায় চাল মোড়কজাত করে বাজারজাতকরণ শুরু করেছে। জানা গেছে, দাম বেড়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৪-৮৭ টাকা। বোতলজাত পাঁচ লিটার ৪৭০-৪৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা পামওয়েল প্রতি লিটার ৭০-৭২ এবং পামওয়েল সুপার প্রতি লিটার ৭২-৭৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। প্রতি কেজি চিনি ৭০-৭৫, লবণ ৩৮-৪০, ডিম প্রতি হালি ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×