ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে ঝুঁকিপূর্ণ লেভেলক্রসিং রেললাইন ঘেঁষে ঘর-বসতি

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৮ অক্টোবর ২০১৬

রাজশাহীতে ঝুঁকিপূর্ণ লেভেলক্রসিং রেললাইন ঘেঁষে ঘর-বসতি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া রেললাইল ঘেঁষে ক্রমেই গড়ে উঠছে বসতি। এমনিতেই অনেক লেভেলক্রসিংয়ের বার নেই, তার ওপর গড়ে উঠা বসতির কারণে নগরীর ওপর দিয়ে স্থাপিত রেললাইনের ধার ঘেঁষে গড়ে উঠা বসতি, দোকানপাট ও খুপড়ি ঘরের কারণে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হরহামেশায় রেললাইনে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। এরই মধ্যে সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর নগরীর ব্যস্ততম এলাকা বর্ণালির মোড়ের লেভেলক্রসিংয়ের ওপারেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেনে কাটা পড়েন সাবেক এক সরকারী কর্মকর্তা। এছাড়া প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। আর এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রেললাইনের দুই পাশে বাড়িঘর আর দোকানপাটকেই দায়ী করেছেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য বাঁশি না বাজালে বোঝার উপায় থাকে না যে চলন্ত ট্রেন কতটা কাছে এসেছে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর রেললাইনের দুই পাশের অনেক দোকান রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে করা হলেও সব বসতবাড়ি জমি দখল করে নির্মিত হয়েছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। নগরীর বহরমপুর এলাকায় রেললাইনের ধারে বাড়ি করে আছেন আনোয়ারা বেগম (৫০)। ঘরবাড়ির মধ্য দিয়ে কখন তার বাড়ির কাছে ট্রেন চলে আসে বোঝাই যায় না। তার বাড়ির পাশেই বাচ্চারা রেললাইনের ওপর বসে খেলায় মত্ত থাকে। একটু নজর এড়ালেই আশঙ্কা থেকে যায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আনোয়ারা বেগম বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বাড়ি করে আছেন। এখানেই বড় হয়েছেন। তাদের বাচ্চারা কখনও ট্রেনে কাটা পড়ে না। ট্রেন এলে বাচ্চারা ঠিকই বুঝতে পারে। বাইরের লোকজন যারা এই এলাকায় নতুন আসেন, তারাই বুঝতে পারেন না। আর তারাই ট্রেনে কাটা পড়েন। একই এলাকার বাসিন্দা মনিরা বেগম (২৫) বলেন, তিনিও রেললাইনের পাশেই বসতি গড়ে বসবাস করেন। তার স্বামী রিক্সা চালান। রেলের জমিতেই বাড়ি করে আছেন তারা। যাওয়ার কোন জায়গা নেই তাদের। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে রেলও লোকজন বাড়ি-ঘর ভেঙে দেয়। আবার তারা আসেন, ঘর তুলেন। জায়গা কারও নিজের নয়। কিন্তু কেউ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় অন্য কারও কাছে ঘরবাড়ি বেঁচে দিয়ে যান। নতুন যিনি আসেন, তিনি শুধু ঘরের দামটুকু দেন। রাজশাহী নগরের সিটি বাইপাস রেলক্রসিংয়ের পশ্চিম পাশে ঠিক রেললাইন ঘেঁষে একটি খড়ির দোকান রয়েছে। এই দোকানের কারণে পশ্চিম দিক থেকে কোন ট্রেন এলে ঠিক লাইনের ওপরে না উঠলে দেখার উপায় নেই। এখানেই কয়েক বছর আগে ছোট বাচ্চাকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে লাইনের ওপর উঠে গিয়েছিলেন বাবা। তিনি আর গাড়ি ঘোরাতে পারেননি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বাচ্চাটি পেছন থেকে নেমে যাওয়ায় বেঁচে যায়। দোকানের মালিক ফাতেমা বেগম দাবি করেন, তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ২৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। এ বছরও চার হাজার টাকা ইজারা মূল্যও তিনি পরিশোধ করেছেন। সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর এরশাদ আলী নামে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী এক কর্মকর্তা রাজশাহী নগরে ভিসা-সংক্রান্ত কাজে এসেছিলেন। এই এলাকায় এসে রেললাইন পার হতে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। বছর দুই আগে একইভাবে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে অপর এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, অনেক দোকানপাট ইজারা নিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু রেললাইন থেকে অন্তত ১০ ফুট জায়গা ছাড়ার কথা। আর এই জায়গাটাই কেউ ফেলে রাখতে চায় না। এটাই সমস্যা। আর বাড়িঘর যারা করেছে, অবৈধভাবে করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার রেলপথের পাশের ৫০ হাজার একর জমি নিষ্কণ্টক রাখার জন্য অবৈধ দখলমুক্ত করতে বছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে বিশাল এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। এ কারণে দিনে দিনে রেললাইন ঘেষে বসতি গড়ে উঠছে।
×