ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ মাসেই কার্যকারিতা হারাতে বসেছে ;###;অধিকাংশ বিনে ময়লা জমে আছে দীর্ঘদিন ;###;খুলে নেয়া হয়েছে অনেকগুলো

ঢাকার বিনগুলোর বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৮ অক্টোবর ২০১৬

ঢাকার বিনগুলোর বেহাল দশা

এমদাদুল হক তুহিন ॥ মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানেই পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার স্বপ্ন নিয়ে রাস্তার দুই পাশে স্থাপন করা ওয়েস্ট বিনগুলো কার্যকারিতা হারাতে বসেছে। ফুটপাথ ধরে হাঁটার সময় পচনশীল নয় এমন ময়লা ফেলার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই তা ব্যবহার করছে না। কেবল ব্যবহারেরই সাড়া মিলছে না তা নয়Ñ কোথাও কোথাও চুরি হয়ে গেছে পুরো বিনটিই। হালকা ময়লা ফেলায় এসব বিন ব্যবহার না হলেওÑ ফুটপাথের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী তা ব্যবহার করছে নিজস্ব কাজে। এমন পরিস্থিতিতে নগরবিদরা বলছেন, নাগরিকদের অসেচতনতা ও কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ইতিবাচক এই উদ্যোগটি প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ করে রাস্তার পাশে বিন বসানোর উদ্যোগ নেয় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। নগরীর রাস্তায় বসানো হয় ৭ হাজারের অধিক বিন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ১ হাজার বিন বসাতে খরচ করে ৬৮ লাখ টাকা। বাকি টাকা খরচ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। ৫৭ ওয়ার্ডে ১০০টি করে মোট ৫ হাজার ৭০০ ওয়েস্ট বিন স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল ডিএসসিরি। জানা গেছে, প্রতিটি ছোট বিন বসাতে খরচ পড়ে ৬ হাজার ৮০০ টাকা। আর বড় বিন বসাতে খরচ হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা জানান, বিন বসাতে তারা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ করেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, নগরবাসীর কেউ কেউ যতেœর সঙ্গে বিনগুলো ব্যবহার করছে। তরুণদের একটি অংশ বাদামের খোসা বা চিপসের প্যাকেট ফেলছে নির্দিষ্ট বিনে। কয়েকজন নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হালকা জাতীয় ময়লা ফেলার ক্ষেত্রে তারা বিন ব্যবহার করেন। তেমন একজন নায়লা জাহিন আনা। অনলাইনে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত এই তরুণী জানান, আমার ব্যাগের সামনের পকেটে সবসময় বাদামের খোসা, চিপসের প্যাকেট ও পানির বোতল রেখে দিই। হাঁটার সময় সামনে ওয়েস্ট বিন পড়লে কেবল তখনই ব্যাগের পকেটে খালি করি। এক প্রশ্নের জবাবে আনা জানান, তিনি সর্বশেষ মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে ওয়েস্ট বিন ব্যবহার করেছেন। একই কথা জানিয়েছেন কারওরান বাজারে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোহাম্মদ ইফতেখার। তিনি বলেন, রাস্তায় হাঁটার সময় বিন ব্যবহারের চেষ্টা করি। তবে দেখা যায় অধিকাংশ বিনই চুরি হয়ে গেছে। আলী আশরাফ আবির নামের এক তরুণ জানান, ফুটপাথ ধরে হাঁটার সময় তিনিও বিন ব্যবহার করেন। বিন ব্যবহারের ইতিবাচক তথ্যের কথা জানালেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তাও। তিনি বলেন, সচেতন মহলে ওয়েস্ট বিন স্থাপনের দাবি ছিল অনেকদিনের। তারা কিন্তু ব্যবহারও করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয় এলাকায় বিনগুলো খুব যতেœর সঙ্গেই ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে গুটিকয়েক সচেতন মানুষ বিন ব্যবহার করলেও অধিকাংশই তা ব্যবহার করছে না। এ প্রসঙ্গে ফার্মগেটের এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হলে তিনি অবজ্ঞার সুরে বলেন, ‘আমিও বিন ব্যবহার করি। পুরো ঢাকা শহরই-তো একটি ওয়েস্ট বিন।’ মহাখালী, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, পান্থপথ, শাহবাগ, নিউমার্কেট ও গুলিস্তানসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ওয়েস্ট বিনে জমে আছে দীর্ঘদিনের ময়লা। বিভিন্ন দোকান ও বাসার গেটের সামনে স্থাপন করা ওয়েস্ট বিন রাখা হয়েছে উল্টো করে বেঁধে। রবিবার রাত ৮টায় কাওরানবাজরে দেখা গেছে, একটি বিনে উপচে পড়া ময়লা। সহজেই অনুমেয়, পলিথিনে মোড়ানো ওই ময়লাগুলো পার্শ^বর্তী কোন অফিসের। একই এলাকায় দেখা গেছে, কোন কোন বিনে ঢাকনা নেই। পার্শ্ববর্তী দোকানীরা জানান, রাতের অন্ধকারে ঢাকনাগুলো খুলে নিয়েছে কেউ। শুধু ঢাকানা নয়, খুলে নেয়া হয়েছে পুরো বিনটিই। বিন বসানো স্থানে পড়ে আছে শুধু ফ্রেম। এই দৃশ্যও কাওরানবাজারের। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ময়লা পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে তারা বিনগুলো উল্টো করে বেঁধে রেখেছেন। বিন ব্যবহারের ইতিবাচক সাড়া না আসার কারণ হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা নাগরিকদের অসচেতনাকেই দায়ী করলেন। কর্মকর্তারা বলেন, বিনগুলো বসানো হয়েছে পচনশীল নয় এমন হালকা ময়লা ফেলার জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিনগুলোতে পচনশীল ময়লাও ফেলা হচ্ছে। যথাসময়ে ওয়স্ট বিন পরিষ্কারে ক্লিনারদের প্রতিও নির্দেশনাও রয়েছে। অন্যদিকে নগরবিদরা বলছেন, সমন্বিত উদ্যোগ, অব্যবস্থাপনা এবং মানুষের অসচেতনতার কারণে ইতিবাচক এ উদ্যোগটি সফলতার মুখ দেখছে না। নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, নগর উন্নয়নের এই সমস্ত কাঠামোগত উন্নয়ন বা কাঠামোর সঙ্গে মানুষকে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, মূলত সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবেই এমনটা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডোর আবদুর রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেন, পচনশীল বর্জ্য ফেলার জন্য বিনগুলো বসানো হয়নি। হালকা ময়লা ফেলার জন্য আমরা ১ হাজার বিন বসিয়েছি। চুরি যাওয়া বিনগুলোর স্থানে নতুন করে বিন বসানো হবে। তবে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনগণকেই সচেতন হতে হবে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডোর এমকে বখতিয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে ওয়েস্ট বিনের চাহিদা ছিল দীর্ঘদিনের। তারা এটি ব্যবহারও করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সচিবালয় এলাকায় বিনগুলো খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব স্থানে ঢাকানা খুলে নেয়া হয়েছে বা গাড়ির ধাক্কায় বিন নষ্ট হয়ে গেছে, সেখানে নতুন করে বিন বসানো হবে। এ লক্ষ্যে পর্যালোচনা চলছে। আমরা যতই উদ্যোগ নিই, বিন ব্যবহার বা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অনেকটাই জনগণের। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে।
×