ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনার কিলিং খুনীর মুক্তির আইনী ফাঁক বন্ধ করল পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৮ অক্টোবর ২০১৬

অনার কিলিং  খুনীর মুক্তির আইনী ফাঁক বন্ধ করল পাকিস্তান

পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’ বিষয়ক আইনে খুনীদের ছাড় পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে বিল পাস করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে স্বজনদের হত্যা করেও পাকিস্তানী আইনের ওই ফাঁক গলে এতদিন বেরিয়ে যেত খুনীরা। আইনে বলা ছিল, পরিবার ক্ষমা করে দিলে দ- থেকে মুক্তি পাবে আসামি। খবর ডন অনলাইনের বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই আইন সংশোধন করে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট হত্যাকারীর মুক্তির পথ বন্ধ করেছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে হত্যাকারীকে মৃত্যুদ- ভোগ করতে হবে। পরিবার ক্ষমা করে দিলেও তাকে যাবজ্জীবন সাজা খাটতে হবে, মুক্তি মিলবে না। পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে পাকিস্তানে প্রতিবছর আপনজনের হাতে খুন হন শত শত নারী। দেশটির মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০১৫ সালেই অন্তত ১১ শ’ নারী ‘অনার কিলিংয়ের’ শিকার হয়েছেন। এ হিসাবকেও মোট ঘটনার ‘আংশিক’ বলেছে মানবাধিকার কমিশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব হত্যাকা-ের কোন হদিস মেলে না বলেও জানিয়েছেন তারা। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক কিংবা নিজের ইচ্ছামতো বিয়ে করার মতো কারণে খুন করা হয়েছে তাদের। সাম্প্রতিক এ রকম কয়েকটি ঘটনা পাকিস্তানের বাইরেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। গত জুলাইয়ে দেশটিতে ‘অনার কিলিং’য়ের শিকার হন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত নারী সামিয়া শহীদ। সামিয়ার বাবা ও সাবেক স্বামী এ হত্যাকা-ে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। একই মাসে পাঞ্জাবে ভাইয়ের হাতে খুন হন সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি কান্দিল বেলুচ। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার ভাই। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন রোধে সাম্প্রতিক পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি নতুন আইন হয়েছে, যার মধ্যে আছে ধর্ষণ প্রমাণে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি। প্রথমবারের মতো হওয়া এই আইনে ধর্ষণে অভিযুক্তদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দোষী চিহ্নিত করা যাবে। এর ফলে ধর্ষণ মামলায় আসামিদের ছাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনে যে দুর্বলতা ছিল তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আইনজ্ঞদের ধারণা। বছরের পর বছর ধরে ‘অনার কিলিং’ সংক্রান্ত আইনেরও সংশোধনী চেয়ে আসছিল মানবাধিকার ও নারী অধিকার কর্মীরা। আন্দোলনের চাপে ২০০৫ সালে আইনটিতে একদফা সংশোধনী আনা হয়। ওই সংশোধনীতে ‘অনার কিলিং’য়ে জড়িত ব্যক্তিরা খুন হওয়া নারীর ‘উত্তরাধিকার’ দাবি করে নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দেয়ার যে সুযোগ পেত, তা রহিত করা হয়। আর সর্বশেষ সংশোধনীতে এ ধরনের হত্যাকা-ে জড়িতদের ‘পরিবারের সম্মান রক্ষার’ দোহাই দিয়ে খালাস পাওয়ার সুযোগও বন্ধ হলো। পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে বিলটি পাস হওয়ায় তা আইনে পরিণত হতে আর কোন বাধা নেই। বিলটি আইনে পরিণত হলে অনার কিলিং কমে আসবে এবং প্রেম ও বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
×