ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তবে ট্রাম্প শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী

সুবিধাজনক অবস্থানে হিলারি

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৮ অক্টোবর ২০১৬

সুবিধাজনক অবস্থানে হিলারি

শনিবার থেকে এক মাসের মাথায় মার্কিন নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়ার লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু শক্তিশালী ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারির সঙ্গে দাঁড়ানোয় নির্বাচনের ফলাফল অনিশ্চিতই রয়ে গেছে। ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ বিতর্কে হিলারির হার, তার বিতর্কিত প্রাইভেট ই-মেল থেকে সমালোচনার খোরাক হয়- এমন তথ্য ফাঁস এবং সন্ত্রাসী তৎপরতার মতো সম্ভাব্য বিষয়গুলো এখন জানা যাবে না, কিন্তু সেগুলো ২০১৬-এর অসাধারণ প্রচারাভিযানের গতি-প্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৩ দশমিক ২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। জাতীয় ভিত্তিতে রিয়ালক্লিয়ারপলিটিক্সের পরিচালিত জরিপে এ কথা বলা হয়। এতে হোয়াইট হাউসে বারাক ওবামার উত্তরাধিকারী হওয়ার লড়াইয়ের শেষ সপ্তাহগুলোতে এ ব্যবধান ঘোচানোর জন্য ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে। যেসব অঙ্গরাজ্যের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না, সেগুলোতেও হিলারি এগিয়ে আছেন। কলোরাডো, ফ্লোরিডা, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন হিলারির পক্ষে রয়েছে। ট্রাম্প (৭০) জরিপে আইওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ ওহাইওতে এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু হিলারি (৬৮) যদি অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে জিতে যান তবে তার জন্য ওই দুটিতে জয়ী না হলেও চলবে। ২৬ সেপ্টেম্বর হিলারির সঙ্গে প্রথম বিতর্কের আগে প্রচারাভিযান ট্রাম্পের অনুকূলেই ছিল। বিতর্কের পর রিপাবলিকানদের অগ্রযাত্রার অবসান ঘটে বলে মন্তব্য করেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট শাপিরো। অধিকাংশ বিশ্লেষক যে বিতর্কে হিলারিকে জয়ী ঘোষণা করেছেন, কেবল তা-ই নয়; একজন সাবেক মিস ইউনিভার্স সম্পর্কে ট্রাম্পের ভোররাতে ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনাও বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পদে নির্বাচিত হতে তার মেজাজ নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি করে। ট্রাম্প ১৯৯৫ সালে ৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার ব্যবসায়িক ক্ষতি ঘোষণা করায় তাকে প্রায় দু’দশক ফেডারেল কর দিতে হয়নি- গত সপ্তাহে এ তথ্য ফাঁস হওয়া তার জন্য সহায়ক হয়নি, এমনকি যদিও তিনি তার সর্বাধিক সুবিধার্থে জটিল করবিধিকে কাজে লাগিয়েছিলেন বলে নিজেকে ‘স্মার্ট’ রূপে উপস্থাপন করেন। তবে ডেমোক্র্যাটরা ৮ নবেম্বর নিয়ে সতর্ক রয়েছেন। হিলারি গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্র্যাটিক নেতাদের তার প্রচারে কাজে লাগিয়েছেন : প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, হিলারির এক সময়কার প্রাইমারি প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডারস, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং তুখোড় বক্তা সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। কিন্তু অন্যতম সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিনেটর ও ফার্স্ট লেডি ৩০ বছর রাজনীতি করার পরও খুবই অজনপ্রিয় রয়ে গেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তার প্রাইভেট ই-মেল সার্ভার ব্যবহার করা, তিনি লিবিয়ার বেনগাজিতে ২০১২ সালে সংঘটিত হামলার সময় যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, রিপাবলিকানদের সেটিকে প্রচারে কাজে লাগানো, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের চাঁদাদান নিয়ে উদ্বেগ এবং ওয়াল স্ট্রিটের সঙ্গে তার সম্পর্ক- এ সবকিছুই হিলরি যে বিশ্বাসযোগ্য নন সে কথাকেই জোরদার করে। অনেক রিপাবলিকান ভোটার হিলারির প্রতি ঘৃণাবোধের বশবর্তী হয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ হবেন। ওবামার আট বছরের শাসনের পর পরিবর্তনের প্রতি তাদের তীব্র আকাক্সক্ষা আরেকটি কারণ। যখন ট্রাম্প কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দেন, তখন তিনি শাসন ব্যবস্থার প্রতি গভীর ক্ষোভকে কাজে লাগান। অনেক ভোটার বলেন, এ ব্যবস্থা তাদের পেছনে ঠেলে দিয়েছে। ট্রাম্প অনেক ভোটারকে বিমুখ করছেন। অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান হিলারির মতো ট্রাম্পকেও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। আইওনা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জিন জাইনো বলেন, ট্রাম্প কখনও তার আচরণে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারেননি। ধনাঢ্য রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্প মুসলিম ও হিসপ্যানিকদের অপমান করেছেন। তিনি তার কর বিবরণী প্রকাশ না করে ঐতিহ্যও ভঙ্গ করেছেন। তবুও তিনি চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বায়নের কারণে হতাশ, সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে ভীত এবং রাজনৈতিক এস্টাব্লিশমেন্ট যাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এমন কোটি কোটি মানুষের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন। তিনি কি ৯ ও ১৯ অক্টোবরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে চমকপ্রদ কৃতিত্ব দেখিয়ে এখনও সফল হতে পারবেন? এটি কঠিন হবে বলে জাইনো ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি আসলেই ট্রাম্পের জন্য কঠিন সংগ্রাম। Ñএএফপি
×