ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সিরীয় সংঘাতে জড়িয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের মিত্ররা’

আলেপ্পোর পতনে যুদ্ধ থামবে না

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৭ অক্টোবর ২০১৬

আলেপ্পোর পতনে যুদ্ধ থামবে না

কয়েক সপ্তাহ বা মাস লাগতে পারে, সিরীয় সরকারী বাহিনীর হাতে সম্ভবত আলেপ্পো শহরের পতন ঘটবে। সরকারী বাহিনী রাশিয়ার বিমান বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট এবং শহরটির ওপর প্রায় ছয় বছরের যুদ্ধের মধ্যে এখন সবচেয়ে ভয়াবহ বোমা বর্ষণ চলছে। সমরিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলেপ্পো দখল প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার রুশ ও ইরানী মিত্রদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিজয়ই হবে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র আলেপ্পো সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অংশ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। এটি পাশ্চাত্য সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীদের জন্য এক চরম বিপর্যয়ই হবে। তারা তাদের বিদেশী সমর্থকদের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা না পেলে তাদের ঘাঁটিগুলো থেকে বিতাড়িত হবে বলে মনে হয়। কিন্তু আলেপ্পোর পতন যুদ্ধের অবসান ঘটাবে না। সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একথা বলেন। এর বদলে এটি এক দীর্ঘমেয়াদী সুন্নি গেরিলা লড়াইয়ের জন্ম দেবে। সেখানে পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের সমর্থনপুষ্ট অবশিষ্ট মধ্যপন্থী বিদ্রোহী দলগুলো জঙ্গী জিহাদির পক্ষে যোগ দিতে বাধ্য হবে। এত বেশি সংখ্যক বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তি যেখানে স্থানীয় দলগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে, সেই যুদ্ধে আসাদ এক সঙ্কুচিত, ভগ্ন ও খ--বিখন্ড দেশের নেতা হিসেবে টিকে থাকবেন। এ দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সবচেয়ে শোচনীয় শরণার্থী সমস্যার মুখে টিকে রয়েছে। সিরিয়ায় ২০১১-১৪ সালে কার্যরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফোর্ড বলেন, রুশরা গোজনিতে যা করেছিল, ঠিক তাই আলেপ্পো ও সিরিয়াতে করছে। তিনি প্রবল বোমাবর্ষণের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। এর ফলে রাশিয়ার চেচনিয়া অঞ্চলের রাজধানীটি সেখানকার ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে মস্কোর ১৯৯০-২০০০ সালের যুদ্ধে প্রায় সম্পূর্ণই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আসাদের বিরোধীরা ভূখ- দখল ছেড়ে দিয়ে বিদ্রোহ ও গেরিলা যুদ্ধ শুরু করবে এবং তা দীর্ঘকাল স্থায়ী হবে। আলেপ্পোতে তীব্র বোমা বর্ষণ সত্ত্বেও বিরোধী পক্ষ যুদ্ধ বন্ধ করবে বলে মনে হয় না। কারণ, সিরিয়ান এস্টাব্লিশমেন্ট তাদের অন্যত্র যাওয়ার মতো অবস্থা রাখেনি। ফোর্ড বলেন, আলেপ্পো এখনও টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনি এর আগে মূলধারার বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করেন। লেবানন, সিরিয়া ও জর্দানে নিযুক্ত সাবেক ড্যানিশ রাষ্ট্রদূত রলফ হোলমবো বলেন, আলেপ্পোর পতন বিদ্রোহীদের জন্য সর্বনাশের কারণ হবে। তারা এ যুদ্ধে একে এক বড় ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। হোলমবো মনে করেন, পশ্চিমা দেশগুলো বা তুরস্ক চাইলেও তাদের পক্ষে আলেপ্পোর বিদ্রোহীদের কাছে রসদ পুনরায় পাঠানো খুবই কঠিন হবে এবং রাশিয়া ও আসাদ পূর্ব আলেপ্পোর ওপর দু’দিক দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়া ও ইরান কেবল আসাদকে রক্ষা করতেই চায় না। তারা নিজেদের আঞ্চলিক বা বিশ্বশক্তি হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যদিও মস্কোর এ সংঘাত ছেড়ে যাওয়ার তেমন কোন উপায় নেই এবং এতে রাশিয়াকে বিশাল অঙ্কের ব্যয় বহন করতে হবে। ওবামার আমলে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আরও সীমিত লক্ষ্য রয়েছে বলে মনে হয়। প্রধান লক্ষ্য হলো ইসলামিক স্টেটকে ইরাক ও সিরিয়ার আস্তানাগুলো থেকে বিতাড়িত করা। পারস্য উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর মনোযোগ তাদের আঞ্চলিক শত্রু ইরানের মিত্র হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের যুদ্ধের কারণেও ভিন্ন দিকে চালিত হচ্ছে। এসব রাষ্ট্র সিরিয়ার সরকার বিরোধী পক্ষকে অস্ত্র ও তহবিল সরবরাহ করে থাকে। সিরীয় বিদ্রোহীদের সমর্থক তুরস্ক এখন এর সীমান্তের কাছে সিরীয় কুর্দিদের অগ্রাভিযান রোধ করতেই ব্যস্ত। তুরস্ক সিরীয় শহর জাবাব্লুসে ফোরাত নদীর পশ্চিম দিক অতিক্রম করতে উদ্যত কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে দৃষ্টি আলেপ্পোর বিদ্রোহীদের কাছ থেকে অন্যদিকে নিয়ে গেছে। কোন কোন সিরীয় বিদ্রোহী তুরস্কের পদক্ষেপকে সর্বনাশা বলে দেখছে। বিদ্রোহীরা যাতে পরাজিত না হয়, তা আঙ্কারার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে তুরস্কে শরণার্থীদের আরও আগমন ঘটতে পারে। তুরস্ক ইতোমধ্যেই লড়াইয়ের কারণে বাস্তুচ্যুত ৩০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে। হোলমবোর মতে, বিদ্রোহীরা বিভিন্ন ছিটমহলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং আসাদ সব বড় বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে তার নিজের ইচ্ছামতো শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্ত নির্দেশ করতে পারবেন। ফোর্ড বলেন, হয়ত পাঁচ বছর, নয়ত ১০ বছর লাগবে, কিন্তু তিনি (আসাদ) এক ভগ্ন দেশের নেতা হবেন। বিশিষ্ট আরব ভাষ্যকার সারকিস নাওউম দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এবং সিরিয়া কার্যত বিভক্ত হয়ে যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেন। কিন্তু তিনি মত ব্যক্ত করেন যে, এ অঞ্চলের দেশগুলো বিদ্রোহী দলগুলোর অস্ত্রসজ্জা বাড়ানোর পক্ষে থাকবে। তিনি বলেন, যেভাবে ঘটনা চলছে, তাতে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো খুশি নয়। তারা আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করতে ইচ্ছুক। তিনি ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মুজাহিদীনের কাছে তাদের অস্ত্র সরবরাহের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। তিনি বলেন, তাদের কাছে এটিএ শতাব্দীর লড়াই। -ইয়াহু নিউজ
×