ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফ এ্যাওয়ে ম্যাচ

আজ ভুটান যাচ্ছে জাতীয় ফুটবল দল

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৭ অক্টোবর ২০১৬

আজ ভুটান যাচ্ছে জাতীয় ফুটবল দল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ফুটবলের এমনই অবস্থা হয়েছে যে এখন ভুটানের সঙ্গে খেলতে গেলেও হাঁটু কাপে, দুশ্চিন্তায় কাতর হতে হয়, শঙ্কিত হতে হয় ব্যর্থতার শঙ্কায়! সন্দেহের কোন অবকাশ নেই- বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে এর আগে কখনও এমন সঙ্কটময় মুহূর্ত বা সন্ধিক্ষণ আসেনি। ভুটান-চ্যালেঞ্জে হারলে আরও অধোগতিতে চলে যাবে দেশের ফুটবল। আর উৎরে গেলে ওপরে ওঠার পথ প্রশস্ত হবে। আগামীতে জাতীয় দল নিয়ে কি ধরনের পরিকল্পনা তৈরি করবে বাফুফে, তা নির্ভর করছে এ ম্যাচের ফলের ওপর। ‘এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফ-২’এ এ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে আজ সকাল ৯টায় ভুটানের উদ্দেশে বিমানযোগে ঢাকা ছাড়ার কথা বাংলাদেশ দলের। বুধবার ২৩ জনের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে আগামী ১০ অক্টোবর খেলাটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়। অনেক ঝামেলা মাথায় নিয়ে ভুটান যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। কোচ টম সেইন্টফিট দলকে প্রস্তুত করার জন্য খুব বেশি সময় পাননি। ক্যাম্প শুরুর দিনও তিনি প্রাথমিক দলের সবাইকে পাননি। ৩৩ ফুটবলারের মাত্র ১৩ জন রিপোর্ট করেন। কারণ ওই সময় সিলেটে ডাক পাওয়া বাকি ফুটবলাররা ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ খেলতে। তারা ঢাকা আসতে আসতে দুদিন লেগে যায়। অনুশীলন শুরুর পর দলের একাধিক ফুটবলার ইনজুরিতে পড়ে। কেউবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনুশীলনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ফুটবলারদের দিয়ে গোলপোস্টে কোচ যে শূটিং প্র্যাকটিস বা ফিনিশিং করিয়েছেন তাতে বেশিরভাগ ফুটবলারই নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন! সবচেয়ে বড় কথা, দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়-মিডফিল্ডার জামাল ভুঁইয়াকে দলেই নেননি কোচ সেইন্টফিট। এছাড়া ১০ অক্টোবর ম্যাচ হলেও এখনও বিস্ময়করভাবে দলীয় অধিনায়কই ঠিক করতে পারেনি বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটি! ভুটান সফরে ফিটনেস ট্রেনার ছাড়াই যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটাও সমস্যায় ফেলতে পারে দলকে। আরও নেতিবাচক দিক হচ্ছেÑ এর আগে কখনই ভুটানে গিয়ে খেলেনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এবার সেখানে গিয়ে তাদের খেলতে হবে ঠা-ায়, টার্ফে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে (৭৬৫৬ ফুট) অনেক উঁচুতে। অবশ্য এজন্য আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে তিনদিন আগেই দেশ ছাড়ছে সেইন্টফিটের শিষ্যরা। ভুটানের বিপক্ষে আমাদের কৌশলটা কেমন হবে? হাসতে হাসতে কোচের জবাব, ‘সাপের মতো!’ সুযোগ পেলে সাপ যেভাবে ফনা তুলে ছোবল মারে, ঠিক সেভাবেই নিজেদের গোলপোস্ট অক্ষত রেখে বাংলাদেশ দল চায় প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে। জিততে বা যে কোন স্কোরলাইনে ড্র করতে মরিয়া সেইন্টফিট দলে নিয়েছেন ৭ ডিফেন্ডার এবং ৮ ফরোয়ার্ড! মোট কথা, কোন ঝুঁকি নিতে নারাজ তিনি। ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে বিপদেই পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন এ্যাওয়ে ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই হোম ম্যাচের বাড়তি সুবিধা পাবে ভুটান। কিভাবে খেলবে বাংলাদেশ? টমের ভাষ্যমতেÑ বাংলাদেশ প্রথমত রক্ষণাত্মক খেলে আক্রমণে যাবে। দলে ডিফেন্ডারের পাশাপাশি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শেষবারের মতো মামুনুলরা অনুশীলনে ঘাম ঝরান কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে। সেইন্টফিট চেয়েছিলেন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভুটানে কমপক্ষে সাত-আটদিন আগে যেতে। কিন্তু বাফুফের আর্থিক সমস্যার জন্য তার সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। টম সেইন্টফিটের অভিষেকটা মোটেও সুখকর হয়নি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে। নতুন কোচ হিসেবে গত ১ সেপ্টেম্বর রাসমি ধান্ধু স্টেডিয়ামের ডাগ-আউটে বসে তাকে দেখতে হয় দলের করুণ ও লজ্জাজনক হার। অথচ তিনি চেয়েছিলেন কমপক্ষে ‘ড্র’। তার শিষ্যরা তাকে উপহার দিল লজ্জাজনক হার! স্বাগতিক মালদ্বীপ জাতীয় ফুটবল দলের কাছে ০-৫ গোলে বিধ্বস্ত হয় তার দল। যদিও এটা ছিল প্রীতি ম্যাচ, তারপরও বাংলাদেশের কাছে এই হারটি ছিল নিঃসন্দেহে অপ্রীতিকর! এই ম্যাচে বাংলাদেশ গো-হারা হারলেও চমৎকার খেলে নজর কাড়েন মিডফিল্ডার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এটা ছিল তার অভিষেক ম্যাচ। পরে ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ভুটানের বিরুদ্ধেও এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের প্লে-অফ ম্যাচে ভুটনের বিপক্ষে গোলশূন্য হওয়া ম্যাচেও স্বীয় নৈপুণ্যে সমুজ্জ্বল ছিলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার তরুণ আবদুল্লাহ। ভুটানের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে নিজেকে এখন শাণিত করছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা হয় কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরুর আগে। সেইন্টফিট তরুণ ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন আবদুল্লাহ্র। কতটা আত্মবিশ^াসী ভুটান ম্যাচ নিয়ে? আবদুল্লাহর জবাব, ‘আমাদের অনুশীলন খুব ভাল হচ্ছে। পারফর্মেন্সেরও উন্নতি হচ্ছে। আত্মবিশ^াসও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ফিনিশিংয়ে আমাদের যে সমস্যা ছিল, সেটা প্র্যাকটিসে অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি আমরা। বিশেষ করে ক্রসিং প্র্যাকটিসটাই আমাদের বেশি করে করাচ্ছেন কোচ।’ আবদুল্লাহর শুরুটা আরামবাগের হয়ে। কখনও কি ভেবেছিলেন এত তাড়াতাড়ি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবেন? লাজুক হাসি আবদুল্লাহর, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমি চিন্তাও করিনি যে এত দ্রুত জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য ডাক পাব। আমার টার্গেট ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে জাতীয় দলে খেলা। বুঝতেই পারছেন, দুই বছর আগেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে আরামবাগের কোচ সাইফুল বারী টিটুর। এখন আমার লক্ষ্য হচ্ছে দলে নিজের অবস্থান ধরে রাখা এবং আরও ভাল খেলা। তবে সবার আগে ভুটানকে হারাতে চাই। দেশের জন্য খেলে কিছু করতে চাই।’
×